গলদা চিংড়ি চেনার উপায়

গলদা চিংড়ি চেনার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। যেহেতু গলদা চিংড়ি আমাদের কাছে অতি পরিচিত তাই গলদা চিংড়ি চেনার উপায় জেনে থাকলে আমরা খুব সহজেই অনেকগুলো মাসের মধ্যে গলদা চিংড়ি চিনে নিতে পারবো। এই আর্টিকেলে গলদা চিংড়ি চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আপনি যদি গলদা চিংড়ি চেনার উপায় সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেল আপনার জন্য। তাহলে চলুন দেরি না করে গলদা চিংড়ি চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ গলদা চিংড়ি চেনার উপায়

গলদা চিংড়ি চেনার উপায়

যেহেতু চিংড়ি মাছ আমাদের কাছে অনেক জনপ্রিয় মাছ তাই আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ রয়েছে যারা চিংড়ি মাছ খেতে পছন্দ করে। আবার অনেকেই চিংড়ি মাছের মধ্যে যেহেতু পার্থক্য রয়েছে সাধারণত তার কারণে কোনটা গলদা চিংড়ি এবং কোনটা বাগদা চিংড়ি তা চিনতে পারেনা। এখন আপনি যদি গলদা চিংড়ি চেনার উপায় জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

গলদা চিংড়ি মোটা মাথাবিশিষ্ট ও কঠিন খোলসে মোড়ানো এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ। এটি সন্ধিপদী প্রাণী হিসেবে পরিচিত চিংড়ির গোত্রের। আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিংড়ি মাছের গুরুত্ব অনেক বেশি। সাধারণত তাই এটিকে রপ্তানির অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ যে সকল লক্ষণে বুঝবেন পিত্তথলিতে পাথর

গলদা চিংড়ি আত্মরক্ষার্থে শরীরের রং পরিবর্তন করে থাকে। গলদা চিংড়ি ১০টি হাটার উপযোগী পা রয়েছে। তারমধ্যে সামনের ৩ জোড়া পা থাবার উপযোগী কাঁটাযুক্ত। সামনের পা জোড়া বড় হয়। অন্যান্য জোড়াগুলো একে অপরের চেয়ে ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। অন্যান্য জলজ প্রাণীদের সাথে মিল রেখে গলদা চিংড়ি ও বড় ধরনের দ্বিপাক্ষিক প্রতিসাম্য বজায় রাখে।

গলদা চিংড়ি সাগরের তলদেশের অন্ধকারময় পরিবেশে অবস্থানজনিত কারণে চলাচলের জন্য ইন্দ্রিয় হিসেবে শূড় ব্যবহার করে থাকে। প্রায় গলদা চিংড়ি বিবর্তনশীল ভূমিকা গ্রহণ করে এর পাশাপাশি রাজ কাঁকড়ার মত বিশেষ থাবার অধিকারী হয়ে থাকে। এ ধরনের গলদা চিংড়ির মাথায় শূড়, চোয়াল, ১ম এবং ২য় ম্যাক্সিলা এবং ১ম, ২য় ও ৩য় ম্যাক্সিলিপেড থাকে।

গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা

এখন যারা গলদা চিংড়ি চাষ করে থাকে সাধারণত তাদের জন্য গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিক ভাবে গলদা চিংড়ির ফলন পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে গলদা চিংড়িকে সঠিক খাবারগুলো দিতে হবে। সাধারণত তাই আপনাদের সুবিধার্থে গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গলদা চিংড়ি পানিতে ছাড়ার পর পানির গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য সঠিকভাবে খাবার প্রদান করতে হবে। গলদা চিংড়ির খাবার হিসেবে যে কোন খাবার দেওয়া যেতে পারে। এখন আপনি চাইলে গলদা চিংড়ির খাওয়ার হিসেবে সয়াবিন মিল, চিরা, ভুট্টা, সেদ্ধ গম সহ চিংড়ি মাছের খাবার হিসেবে দিতে পারেন।

সপ্তাহের প্রতিদিন ভোরে রেডি ফিড এবং সন্ধ্যায় দুই দিন সয়াবিন, তিনদিন ডাবরি ডাল, দুই দিন ভুট্টা অথবা গম ভিজে সন্ধ্যায় প্রয়োগ করতে হবে। শতকে ২০০ গ্রাম ডিএপি স্যার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আরো অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো গলদা চিংড়ি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আপনি যদি একেবারেই নতুন হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মৎস্য অধিদপ্তর এর পরামর্শ নিবেন।

আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ

গলদা চিংড়ি চেনার উপায় গুলো জেনে আমরা ইতিমধ্যেই গলদা চিংড়ি চিনেছি। বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক উপায়ে গলদা চিংড়ি চাষ অনেকটা কমে গিয়েছে যার ফলে মানুষ নিজে থেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করছে। যেহেতু আমাদের দেশে গলদা চিংড়ির অনেক চাহিদা রয়েছে তাই গলদা চিংড়ি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।

আমাদের দেশে দুই পদ্ধতিতে গোয়ালদা চিংড়ি চাষ করা হয় এক নম্বর হলো একক চাষ পদ্ধতি অন্যটি হলো মিশ্র চাষ পদ্ধতি। একক চাষ পদ্ধতিতে সাধারণত আপনি শুধু গলদা চিংড়ি চাষ করতে পারবেন। একক চাষ পদ্ধতিতে আপনি স্বাভাবিকভাবে প্রতি শতকে ১০০-১১০ একটি গলদা চিংড়ির পোনা মজুদ রাখতে পারবেন।

গলদা চিংড়ির জন্য পুকুর প্রস্তুতঃ অন্যান্য মাছ চাষ করতে হলে যেমন পুকুর প্রস্তুত করতে হয় ঠিক তেমন গলদা চিংড়ি চাষ করতে হলেও পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। কোন অবস্থাতেই পুকুরের তলদেশে অতিরিক্ত কাদা জমতে দেওয়া যাবে না। যদি অতিরিক্ত কাদা থাকে তাহলে অবশ্যই সেগুলোকে বের করে নিতে হবে। পুকুর প্রস্তুতদের সময় প্রতি শতকে এক থেকে দুই কেজি চুন ভালোভাবে দিয়ে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং a to z

পুকুর প্রস্তুত করার সময় অবশ্যই পুকুরে যেন কোন ধরনের রাক্ষসের মাছ না থাকে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। পুকুরে অবশ্যই চার থেকে পাঁচ ফুট পানি থাকতে হবে। সাধারণত পুকুরে পানির গভীরতা যদি বেশি হয় তাহলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

গলদা চিংড়ির পোনা প্রস্তুতঃ এরপরে আপনার কাজ হল প্রাকৃতিক উৎস থেকে গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করা। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ি মাছের পোনা উৎপাদন করা হয় সাধারণত আপনি সেখান থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী পোনা নিতে পারেন। বিশেষ করে বছরের শেষ অংশে এই ধরনের পোনা পাওয়া যায়।

গলদা চিংড়ি ও বাগদা চিংড়ির মধ্যে পার্থক্য

চিংড়ি মাছের বেশ কিছু প্রজাতি রয়েছে। আমাদের কাছে সবথেকে পরিচিত হল গলদা চিংড়ি ও বাগদা চিংড়ি। সাধারণত যারা গলদা চিংড়ি ও বাগদা চিংড়ির মধ্যে পার্থক্য জানেনা সাধারণত তারা এই দুইটি প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাবেনা। তবুও নিচে গলদা চিংড়ি ও বাগদা চিংড়ির মধ্যে পার্থক্য করা হলো।

১। গলদা চিংড়ি প্রধানত মিঠা পানিতে বসবাস করে থাকে। তবে অল্প লোনা পানিতে গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়। অপরদিকে বাগদা চিংড়ি প্রধানত সামুদ্রিক অর্থাৎ লোনা পানিতে বসবাস করে থাকে। তবে যখন প্রজননের সময় হয় তখন বাগদা চিংড়ি কল্পনা পানিতে চলে আসে।

২। গলদা চিংড়ির দেহের বর্ণ ইস্পষ্ট সাদা। অন্যদিকে বাগদা চিংড়ির দেহে বাঘের মত লালচে বাদামী আকৃদিরে ডোরাকাটা থাকে।

৩। গলদা চিংড়ির দেহের প্রস্থচ্ছেদ কিছুটা গোলাকৃতির হয়ে থাকে এবং অন্যদিকে বাগদা চিংড়ির দেহ চ্যাপ্টা হয়ে থাকে।

৪। গলদা চিংড়ির দেহকে সম্পূর্ণভাবে বাঁকানো যায় অন্যদিকে বাগদা চিংড়িকে সম্পূর্ণভাবে বাঁকানো যায় না।

গলদা চিংড়ি চেনার উপায়ঃ শেষ কথা

গলদা চিংড়ি চেনার উপায়, গলদা চিংড়ির খাদ্য তালিকা, আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ, গলদা চিংড়ি ও বাগদা চিংড়ির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা গলদা চিংড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যেহেতু আমরা বেশিরভাগ মানুষ গলদা চিংড়ি চিনি না তাই এই আর্টিকেলটি পড়ে নিলে আপনি বিষয়গুলো খুব সহজেই জানতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ কেন ব্রণ হয় - ব্রণের সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।১৬৮৩০

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url