আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি
আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি ও ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি আপনি কি জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি ও ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি তা জানতে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আম সারা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে হয় এবং মানুষকে মোহিত করার জন্য অসংখ্য জাত রয়েছে। কিছু উন্নত আম হল ভালো কলমের জাত যেখানে স্থানীয় বা দেশি আম চারা থেকে জন্মানো হয়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি এবং ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
সূচিপত্রঃ আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি
- আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি
- নওগাঁ আমের জন্য বিখ্যাত নতুন জেলা
- ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি
- বাংলাদেশের সেরা আমের জাত
- শেষ কথা
আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি
বাংলাদেশে আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি জানেন? বাংলাদেশের আমের জন্য বিখ্যাত জেলা হল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই জেলায় প্রতিবছর অনেক আম উৎপাদন হয়। যা সারা দেশের মানুষ খেয়ে থাকে। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও আরো কিছু জেলা রয়েছে যেখানে প্রচুর আম ফলে। যেমন রাজশাহী, নবাবগঞ্জ এবং দিনাজপুরের আশেপাশে প্রধান আম উৎপাদনকারী অঞ্চল। উন্নত জাতের আমের বিদেশী নাম যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাত, আশ্বিনা, খিসনবোগ, কুয়াপাহাদি, লতা বোম্বাই, ফোরিয়া, বোম্বাই, কোহিতুর, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ, মিসরিভোগ ইত্যাদি।
প্রতিটিই আমের আলাদা আলাদা স্বাদ রয়েছে এবং একে অপরের থেকে ভিন্ন ভিন্ন। এছাড়াও আমের আরও কিছু স্বাদ রয়েছে যা জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, চাটনি এবং আচার থেকে পাওয়া যায়। কাঁচা সবুজ আম ডাল বা তরকারিতে দিয়ে স্বাদ বাড়ানো হয়। এক সময় শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল, তবে এখন রাজশাহী জেলায়ও প্রচুর আম উৎপন্ন হয়।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং a to z
শুধু রাজাশাহী অঞ্চলেই ২৭০টিরও বেশি জাতের মিষ্টি আম রয়েছে। নতুন নতুন আমের বাগান স্থাপন করা হচ্ছে এবং ধানক্ষেতের সীমানা বরাবর উন্নতমানের ফলের গাছ ্লাগিয়ে আম ফলানো হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস যখন আম গাছে ফুল ফোটে। এই উন্নত আমের গাছগুলি রোপণের এক বা দুই বছর পরেই দ্রুত ফুল ফোটা শুরু করে। বছরের এই সময়ে সব ঠিকঠাক থাকলে আমের বাম্পার ফলন হয়। এখান থেকে বোঝা যায় আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি।
নওগাঁ আমের জন্য বিখ্যাত নতুন জেলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত হলেও জেলায় গ্রীষ্মকালীন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ এখন আমের প্রধান কেন্দ্র বলে জানা যায়। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে আমের নতুন রাজধানী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে নওগাঁ। দেশের মোট আম উৎপাদনের বেশির ভাগ আসে নওগাঁ থেকে যা এতদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের দখলে ছিল। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় গত দুই বছর ধরে আম বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ ৭২ হাজার টনের কিছু বেশি। এই মোট উৎপাদনের মধ্যে নওগাঁয় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৬ টন আম উৎপাদিত হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন এবং রাজশাহীতে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ টন আম উৎপাদিত হয়। কিন্তু তারপরও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নওগাঁয় আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১০ টন।
এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং রাজশাহীতে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টন আম উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে সূত্র জানায় যে আগে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ ছিল। এখন নাটোরে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষের চেয়ে আম চাষ বেশি লাভজনক। তাই আম চাষে নওগাঁতে বিপ্লব চলছে।
নওগাঁতে প্রতি বছর দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমের বাগান গড়ে ওঠে। মাটির ভালো বৈশিষ্ট্যের জন্য নওগাঁর আম সুস্বাদু হয় তাই রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এসব আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাহলে আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি সেটা হল চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও এখন নতুন ভাবে নওগাঁ।
ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি
ভারতে গ্রীষ্মকালে কিছু অংশে অত্যন্ত গরম হতে পারে। আর্দ্রতা এবং ঝলসে যাওয়া গরম এই দুটি কারণে অনেকেই এই ঋতু পছন্দ করেন না। যাইহোক এটি এমন একটি মৌসুম যখন আপনি মজার মজার আম খেতে পারেন আপনি যদি একজন আম প্রেমিক হন।
আরো পড়ুনঃ কেন ব্রণ হয় - ব্রণের সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন
গ্রীষ্মকালে ভারত ফলের জন্য খুব জনপ্রিয়। সারা দেশে বিভিন্ন রাজ্যে চাষ হয় প্রায় ৫০ টিরও বেশি আম। যদিও সব ধরনের আম দেশের প্রায় সব অঞ্চলে প্যাকেটজাত করে রপ্তানি করা হয় কিন্তু এখানে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল রয়েছে যেগুলো একটি নির্দিষ্ট ধরনের আমের জন্য পরিচিত। ভারতের এই আশ্চর্যজনক মৌসুমী ফলটি ভারতের প্রায় সব স্থানে পাওয়া যায়।
ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি বা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ইন্ডিয়ার আমের জন্য বিখ্যাত স্থানগুলোঃ
- মালদা
- মুর্শিদাবাদ
- হারদোই
- লখনউ
- রত্নাগিরি
- জুনাগড়
- বাদামি
- বঙ্গনপালে
- বারাণসী
- ব্যাঙ্গালোর
- সালেম
- গোয়া
বাংলাদেশের সেরা আমের জাত
উপরে আমরা আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি তা জানিয়েছি। বাংলাদেশে আমের মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় আগাম জাত, মধ্য-মৌসুমী জাত এবং নবী জাত। প্রথম জাতের আম মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাকে এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হল গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বৃন্দাবনী, গুলাবখাশ, রানীপচাঁদা, হিমসাগর, খিরসাপাত।
জুনের মাঝামাঝি থেকে মধ্য মৌসুমের আম পাকতে শুরু করে ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, লক্ষনভোগ, ক্ষুদিখীর্শা, বিএআরআই-২, বোম্বাই, সুরজোপুরী ইত্যাদি। নাবি জাতটি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাকে। সেগুলো হলো ফজলি, আম্রপালি, মোহনভোগ, আশ্বিনা, গৌরমতি আম ইত্যাদি।
এসব জাতের মধ্যে কিছু আম আছে যেগুলা সকল মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় এবং স্বাদে খুব সেরা। তাই এই আম গুলোকে সেরা ও উন্নত আম বলে জানা যায়। বাংলাদেশের সেরা আমের জাত গুলো হলঃ
গোপালভোগঃ প্রথম দিকের সব জাতের মধ্যে গোপালভোগই বাজারে প্রথম আসে। রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষ করা গোপালভোগ আম আকারে মাঝারি। পাকা আম হলুদ-সবুজ বর্ণের হয় তবে পাকলে খোসা সম্পূর্ণ হলুদ হয় না এর দানা পাতলা, আঁশ নেই এবং মিষ্টি।
হিমসাগরঃ গোপালভোগের পর হিমসাগরের আম জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকতে শুরু করে এবং জুন মাসজুড়ে বাজারে পাওয়া যায়। পাকা হিমসাগর আমের রং হালকা সবুজ এবং পাকার পরও সবুজ থাকে। ত্বক মসৃণ ও পাতলা হয়। এই জাতের আমের কোনো ডগা থাকে না। তবে এই আম খেতে খুব সুস্বাদু।
ল্যাংড়াঃ বাংলাদেশে এমন কোনো মানুষ নেই যারা ল্যাংড়া আম পছন্দ করে না। এটি দেখতে কিছুটা গোলাকার এবং মসৃণ। এর ত্বক খুব পাতলা। এটি জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসে। প্রতিটি আমের ওজন 200-600 গ্রাম হয়। ল্যাংড়া আমের রাজা হিসেবে পরিচিত। এই আম অতুলনীয় মিষ্টি স্বাদ এবং গন্ধের সাথে এটির রং অসাধারণ।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা - গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
হাড়িভাঙ্গাঃ বাংলাদেশের একমাত্র আঁশবিহীন আম রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম। এটি উপরে পুরু এবং নীচে আরও পাতলা। এটি একটি ফাইবারহীন আম। হাড়িভাঙ্গার এক টুকরার ওজন অন্যান্য আমের চেয়ে বেশি। সাধারণত গড়ে তিনটি আমের ওজন হয় এক কেজি।
ফজলিঃ বাংলাদেশের জনপ্রিয় আমগুলোর মধ্যে ফজলি অন্যতম। এটি আকারে বড় এবং ওজন ৪০০ থেকে ১০০০ গ্রাম। ফজলি আকারে লম্বা এবং কিছুটা চ্যাপ্টা। পাকা হয়ে গেলে ত্বক সবুজ থেকে সামান্য হলুদ হয়ে যায়। এই আম খুব রসালো, সুগন্ধি, সুস্বাদু এবং মিষ্টি। এটি একটি পাতলা খোসা আছে।
আম্রপালিঃ আম্রপালি একটি নবী জাতের আম। এটি একটি হাইব্রিড জাত হিসাবে ধরা হয় কারণ এটি অন্য দুটি জাতের আম থেকে উত্পাদিত হয়েছিল। এই আম লম্বাটে এবং নিচের অংশ খুব বাঁকা।
আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি - শেষ কথা
সুস্বাদু ও মিষ্টি রসালো আম সবাই পছন্দ করে। অতএব কোন ঋতুতে কোন আম পাওয়া যায় সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে, আপনি কোন ধরনের আম কিনছেন তা বোঝা আপনার পক্ষে সহজ হবে। ফল হিসেবে আম খুবই ভালো। তবে বাংলাদেশের কোন জেলায় উন্নত এবং ভালো জাতের আম পাওয়া যায় সেটা জানলেও আপনি ভালো ও উন্নত জাতের আম খেতে পারবেন। তাই আপনাদের জন্য আজ আমি এই পোস্টে আমের জন্য বিখ্যাত জেলা কোনটি এবং ভারতের আমের জন্য বিখ্যাত স্থান কোনটি তা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ২২৪৯৮
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url