ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? বর্তমান বিষয়টি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর মশার কামড়ে হয়ে থাকে তাই ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? বিষয়টি জেনে নিতে হবে। আপনাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আপনি যদি ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি
- ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি
- ডেঙ্গু রোগ হলে কি করবেন
- কি উপায় অবলম্বন করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার করবেন
- ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের উপায়
- শেষ কথা
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি?
বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব অনেক দেখা যাচ্ছে। যদিও ডেঙ্গুর প্রাণঘাতিক রোগ নয় তারপরেও গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে একটি আতঙ্কের নাম। বিশেষ করে শহরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আমাদেরকে ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? এ বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ যে সকল লক্ষণে বুঝবেন পিত্তথলিতে পাথর
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি?
প্রথমে আমাদেরকে অবশ্যই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আমরা যদি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারি তাকে খুব সহজেই ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করতে পারবো। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম শরীরের তাপমাত্রা অনেক থাকতে পারে। এমনকি শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
শরীরে তীব্র ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখে পেছনে ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা দেওয়া সহ অতিরিক্ত পরিমাণে দুর্বল হয়ে যাওয়া সাধারণত ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ। এছাড়া রোগীর বমি বমি ভাব, অরুচি, ডায়রিয়া দাঁতের মাড়ি বা নাক অথবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া। গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া এই লক্ষণগুলো হল ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ।
ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী অর্থাৎ এডিস মশা কামড়ানোর ৩-১৪ দিনের মধ্যে জ্বর শুরু হয়। তাই যদি ২/৩ দিন এর বেশি শরীরের জ্বর থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর কিডনি কিনবা লিভারের সমস্যা, পেট ব্যথা অথবা জন্মগত কোন সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী থাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
যদি খেয়াল করেন জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে অথবা মজার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। সারাদিন যে পরিমাণে প্রসাব হতো তার পরিমাণ কমে গিয়েছে। তাহলে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহের পানি শূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পালস রেট অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়।
যদি ডেঙ্গু রোগের উপরের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ডেঙ্গু রোগ হলে ওষুধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। যেহেতু ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ হিসেবে শরীর প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা করে তাই অনেকেই ব্যথা নাশক ওষুধ খেয়ে ফেলে।
যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমনকি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে একজন ডেঙ্গু রোগী স্যালাইন পানি, ডাবের পানি, ফলের রস লেবু পানি ইত্যাদি খেতে পারেন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যে কার্যক্রম গুলো করা উচিত সেগুলো করতে হবে।
ডেঙ্গু রোগ হলে কি করবেন
ডেঙ্গু রোগ একটি মারাত্মক রোগ। বিশেষ করে বর্ষার সময় এবং গরমের সময় ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ বেশি বেড়ে যাই। সাধারণত এই সময় ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত মশা অর্থাৎ এডিস মশার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। যার ফলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এখন ডেঙ্গু রোগ হলে কি করবেন অবশ্যই এই সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং a to z
১। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
২। প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করতে হবে একটু পর পর।
৩। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ শরীর ব্যথা হয়ে থাকে তাই এই সময় ব্যথা না শোক ওষুধ খাওয়া যাবে না। এই ধরনের ওষুধ খাওয়ার ফলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৪। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত।
৫। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। যতটা সম্ভব এ ধরনের কুসংস্কার গুরু থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশি আতঙ্কিত হওয়া যাবেনা।
৬। সঠিক সময় যদি চিকিৎসা করা হয় তাহলে অবশ্যই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কি উপায় অবলম্বন করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার করবেন
যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে সাধারণত তারা কি উপায় অবলম্বন করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার করবেন? এ বিষয়ে অনেক চিন্তিত থাকেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের যেন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত না হতে হয় সেজন্য কি উপায় অবলম্বন করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার করবেন? বিষয়টি সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই এর প্রতিরোধ করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই ভয়ংকর মশা সাধারণত অভিজাত এলাকায় বড় বড় দালঙ্কায় বাস করে থাকে। স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এডিস মশা পছন্দ করে না।
তাই আপনি যদি ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে চান তাহলে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা অর্থাৎ এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। এর সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়, জঙ্গল জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি অব্যবহারিত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে দূরে। ব্যবহার করার জিনিস যেমন মুখখোলা পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের ভেতরে যেন পানি জমে না থাকতে পারে।
এডিস মশা সকাল ও সন্ধ্যা কামরায়। তবে অন্য সময় ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলায় শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে যদি অতিরিক্ত মশা হয় তাহলে মশারি টাঙিয়ে রাখতে হবে। ঘরের চারদিকে অর্থাৎ জানালায় নেট লাগিয়ে দিতে হবে। দিনের বেলায় ঘুমান অথবা রাতের বেলায় মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে এবং কয়েল জ্বালিয়ে দিতে হবে।
সাধারণত বাচ্চারা হাফপ্যান্ট পড়ে স্কুলে যায় তাদেরকে ফুল প্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে। যাতে করে কোন মশা রোগীকে কামড়াতে না পারে না হলে যদি ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে না এমন মশা রোগীকে কামড়ায় তার মাঝেও ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের উপায়
উপরের আলোচনায় ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? এ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে আমাদেরকে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত ইতিমধ্যে আমরা ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে কোন কাজগুলো করতে হবে সেগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছি।
আরো পড়ুনঃ শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম
১। যেহেতু ডেঙ্গু রোগ মশার কামড়ে হয়ে থাকে তাই আমাদেরকে সবার প্রথমে যে কোন ধরনের মশা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। সকল মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয় না নির্দিষ্ট একটি মশা অর্থাৎ এডিস মশা যেটি ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করে সাধারণত সেই মশা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
২। এডিস মশা থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই দিনের বেলায় হোক অথবা রাতের বেলা মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। মশারি ছাড়া কোন সময় ঘুমানো যাবে না।
৩। বাড়ির আশেপাশে যেন যেকোনো পানি জমে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে পরিষ্কার পানি যেন জমে থাকতে না পারে।
৪। বাড়ির আশপাশ জঙ্গল অথবা ময়লা আবর্জনা রাখা যাবে না। যেন বাড়ির আশেপাশে কোন ধরনের মশা জন্ম নিতে না পারে অর্থাৎ তাদের বাসস্থান তৈরি করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। যখন মশার উপদ্রব্য বেশি হবে সাধারণত তখন সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে দিতে হবে এরপরে কয়েল জ্বালিয়ে দিতে হবে।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কিঃ শেষ কথা
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি? ডেঙ্গু রোগ হলে কি করবেন? কি উপায় অবলম্বন করে ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার করবেন? ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু এখন ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ অনেক বেশি তাই আমাদের অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাহলে আমরা এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।১৬৮৩০
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url