ক্যারিয়ার কি? আপনি যেভাবে ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন

 ক্যারিয়ার কি?

অনেকে আমরা ক্যারিয়ার বা প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা চাকরি বলে আখ্যা দিয়ে থাকি তার মধ্যে পার্থক্য বুঝিনা বা পার্থক্য বুঝতে পারিনা। অথচ এই দুটি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। এ পার্থক্য করতে না পারার জন্যই আমরা জীবনের এই অধ্যায়টি যে কোন পর্যায়ে এসে হোঁচট খায় তা আমরা বুঝতে পারি না। ক্যারিয়ার এবং চাকরি কি? ক্যারিয়ার হচ্ছে একজন মানুষের জীবনের সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ব্যাপ্তি সারা জীবন। এবং যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেই ব্যক্তির জীবন, শিক্ষা, উন্নতি এবং কর্ম। অর্থাৎ আপনার জীবনকে আপনি কিভাবে সাজাবেন তার একটি প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা আপনি কেমন করে বাস্তবায়ন করবেন, সেখানে কোন ধরনের শিক্ষা আপনি অর্জন করবেন, যা আপনার উন্নয়নকে নিশ্চিত করবে। এবং কোন ধরনের কর্ম বা চাকরি সঙ্গে আপনি নিজেকে যুক্ত করবেন।



আপনি যেভাবে ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন

আমাদের অনেকের মতেই স্মার্ট ক্যারিয়ার মানে চাকরি। এর বাইরে যে সম্মানজনক আরো ক্যারিয়ার আছে তা আমরা জানিনা। সবার কথা শুনে যখন একটা ক্যারিয়ারের পথ বেছে নেই, দেখা যায় সে কাজ করতে গিয়ে তা আর ভালো লাগছে না। ক্যারিয়ার হয়ে পড়েছে বোঝা। গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকাতে একজন মানুষ  তিনবার তার চাকুরী পাল্টাই। কিন্তু বাংলাদেশের সেটা চাইলেও সম্ভব হয় না। কারণ আমরা শুধুমাত্র একটা কাজের জন্যই তৈরি হয়। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের এটাই শেখায়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ৮৯% মানুষই তাদের চাকরি পছন্দ করে না এবং তারা পরিবর্তন করতে চায়। এ সমস্যার সমাধান এভাবেই করা যায় শুরুতে নিজের ক্যারিয়ার নির্বাচনের সচেতন হওয়া

 সে হিসেবে নিজেকে তৈরি করা নিজের বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে খুব যথাযথ একটি ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ Career ক্যারিয়ার নির্বাচন করার আটটি উপায় ।

১. শুরুটা মাধ্যমিক থেকেই:

ক্যারিয়ার প্লানিং শুরু করা উচিত মাধ্যমিক পা তারপর বা তার আগ থেকেই। তখন থেকে রিসার্চ করা উচিত কোন ফিল্ডের ডিমান্ড চার পাঁচ বছর পর অনেক ভালো থাকবে। সে ফিল্ডে যে কাজ করতে হবে সেসব কাজে আগ্রহ আছে কিনা। কাজ গুলো পছন্দ কিনা তারপর ভাবতে হবে। সে কাজ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেও কিছু শেখানো হচ্ছে কিনা সে কাজ করতে হলে কি কি শেখার দরকার তা শিখতে হবে। 

২. আয়টাও জরুরী:

ক্যারিয়ার বলতে আমরা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমকে বুঝি। লেখাপড়া শেষ করে একটা ভালো বেতনের চাকরি পেতে হবে এটাই অনেকের স্বপ্ন,একমাত্র ভীষণ। যদিও ক্যারিয়ার নির্বাচনের সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি এটি নয়। তবে দায়বদ্ধতার কারণে এটা আগে ভাবতে হয়, যে ফিল্ডগুলো ডিমান্ড চার-পাঁচ বছর পরেও বাড়বে সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত হবে। এটা জানার জন্য ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন খবর প্রতিবেদন পড়তে হবে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ গুলো খুঁজতে হবে।

৩. বিকল্প ক্যারিয়ার:

শিক্ষাজীবনে আমাদেরকে খুব কমই জানানো হয় যে ক্যারিয়ার মাত্র চাকরি নয়। উদ্যোক্তা হওয়া, ফ্রিল্যান্সার, স্বাধীন কনসালটেন্ট  হওয়া এরকম আরো অনেক ক্যারিয়ার পথ আছে। উদ্যোক্তা হলে নিজের কাজের স্বাধীনতা যেমন থাকে তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে ৪৭% শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার সেখানে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করাটা সময় সিদ্ধান্ত হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষিত ছেলেমেয়ের কাজ করার সুযোগ পাই।



৪. অপ্রচলিত ক্যারিয়ার:

 ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যারিস্টার এসব ছাড়াও ইদানিং কিছু ক্যারিয়ার পথ তৈরি হয়েছে। যাতে অনেকে সফল হচ্ছে। যেমন ফটোগ্রাফি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মেকআপ, আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট ক্যারিয়ার, গ্রুপ নিন কর্পোরেট ট্রেনার, পাবলিক স্পিকার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ফিল্ম ইত্যাদি। এসব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব একটা সুযোগ বাংলাদেশ বাংলাদেশে নেই। তবে এসব বিষয়ে তাত্ত্বিক শিক্ষার চেয়েও ব্যবহারিক বা প্র্যাকটিক্যাল শেখার প্রয়োজন খুব বেশি হয়। এগুলো বাংলাদেশে খুব বেশি জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে।

৫. চাকরির আগেই অভিজ্ঞতা:

 চাকরির আগে অভিজ্ঞতা অর্জন খুবই জরুরী। এতে একসাথে দুটো কাজ হয়। একে তো চাকরির জন্য রেজুম ভারি করার এক্সপেরিমেন্ট পেয়ে যাবেন। সাথে আপনার নির্বাচিত ক্যারিয়ার পদটি আসলে আপনার জন্য সঠিক কিনা তা বুঝতে পারবেন। ধরুন আপনি ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে গড়তে চান, তাহলে পড়াশোনা কালীন সময়ে কোন ইলেকট্রনিক কোম্পানিতে ইন্টারনেসিপ করার চেষ্টা করবেন। অথবা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন কম্পিটিশন যেখানে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়ানো হয় এমন কাজে যুক্ত হবেন।

আরো পড়ুন:ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারের উপায় কি

৬. দক্ষতায় চাবিকাঠি:

এখনকার সময়ে ক্যারিয়ারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সার্টিফিকেট অনেকটা এন্ট্রি টিকেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকি পুরোটাই নির্ভর করে দক্ষতার উপর। দেশের একজন সফটওয়্যার প্রোগ্রামার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছিলেন। দেশের অনেক বড় বড় ব্যাংকে উচ্চপদস্থ ব্যাংকার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করা, এখন খোঁজ নিলে দেখা যাবে শুধু ডাক্তাররা ছাড়া অন্য সব একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফিল্ডে ক্যারিয়ার গড়েছে। মনে করুন আপনার ফটোগ্রাফি নিয়ে বেশ আগ্রহ আছে এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান তাহলে দেরি করে একটা ক্যামেরা জোগাড় করুন। ইন্টারনেটে ঘাটাঘাঁটি করুন কিভাবে অনেক সুন্দর ছবি তোলা যায়। ইউটিউবে হাজারো এক্সপার্টদের পরামর্শমূলক টিউটোরিয়াল আছে হাজার হাজার বই আছে এগুলো দেখুন এগুলো পড়ুন।

৭. মেন্টর বানান কাউকে:

mentor এমন একজনকে বানান যিনি আপনার পছন্দের ফিল্ডগুলোতে সফল একজন মানুষ। এবং অবশ্যই অন্যান্য ফিল্ড গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখে। যদি এমন কাউকে মেন্টর বানান যে শুধু একটা ফিল্ডে চেনে তাহলে তিনি শুধু ওই ফিল্ডের গুনগান করে যাবেন। মেন্টরের সাথে কথা বলেই আপনার ক্যারিয়ার প্লান তৈরি করুন।

মন্তব্য

একটা দেশে ৪৭% স্নাতক বেকার ৮৯% নিজের চাকরিতে অসন্তূষ্ট। এটা বেশ ভয়ংকর তথ্য। নিজেকে এর থেকে বাইরে রাখার জন্য প্ল্যানিং  শুরু করুন।

আরো পড়ুন:যে ১২ টি প্যাকেই দ্রুত বৃদ্ধি পাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url