ঈমানের সাতটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন

 ঈমানের সাতটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন

ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম মৌলিক কতিপয় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা, নবী-রাসূল, ফেরেশতা আখিরাত ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। ইসলামের এরূপ মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর বিশ্বাসকে আকাইদ বলা হয়। আকাইদের বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস করতে হবে। এর কোন একটি অবিশ্বাস করলে কেউ মুসলিম হতে পারে না।

 অতএব আকাইদ হলো ইসলামের প্রধান ভিত্তি। ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তা'আলা, নবী রাসুল, ফেরেশতা, আখেরাত, তাকদীর ইত্যাদির বিষয় মনে প্রাণে বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়া হলো ঈমান। যে ব্যক্তি এসব বিষয়ে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন তিনি হলেন মুমিন। আজকের আলোচনাতে আমরা জানবো ঈমানের সাতটি বিষয় সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র: ঈমানের সাতটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন

  • ঈমান কি
  • ঈমানের তিনটি দিক
  • ঈমানের সাতটি বিষয়ের বিবরণ
  • আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস
  • ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
  • আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
  • নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
  • আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
  • তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
  • মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে প্রতি বিশ্বাস
  • ঈমান আনার শুভ পরিণাম
  • মন্তব্য

ঈমান কি

ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম মৌলিক কতিপয় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাসকে ঈমান বলা হয়। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তায়ালা, নবী রাসূলগণ, ফেরেশতা, আখিরাত, তকদির ইত্যাদি বিষয়ে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়া কে ইমান বলা হয়। যে ব্যাক্তি এসব বিষয়কে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন তিনি হলেন মুমিন।

ঈমানের তিনটি দিক

১.অন্তরে বিশ্বাস করা

২. মুখে স্বীকার করা এবং

৩. তদনুসারে আমল করা

অর্থাৎ ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমল করার নাম হলো ঈমান। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য এ তিনটি বিষয় থাকা জরুরি। কেউ যদি অন্তরে বিশ্বাস করে এবং মুখে স্বীকার করে তবে সে প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার বা মুমিন হিসেবে গণ্য হয়। আবার মুখে স্বীকার করে, কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস না করলে কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারে না। বস্তুত আন্তরে বিশ্বাস মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুজায়ী আমলের সমষ্টি হল প্রকৃত ঈমান।

আরো পড়ুন:নবজাতকের ত্বকের যত্ন নেওয়ার ২০টি উপায়

ঈমানের সাতটি বিষয়ের বিবরণ

ঈমান বা বিশ্বাসের মৌলিক বিষয়ে মোট সাতটি। মুমিন হওয়ার জন্য এ সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। এ পাঠে আমরা বিস্তারিতভাবে এ সাতটি সম্পর্কে জানব।

১.আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস

ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান বিষয় হল আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি আমাদের রব, মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা, সাহায্যকারী, জন্ম ও মৃত্যুর মালিক। তিনি সকল গুণের আধার, তিনি পবিত্র ক্ষমাশীল দয়াবান। পরম দয়াময় সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান, সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশক্তিমান। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

 আল্লাহতালা অনন্ত অসীম তিনি সবসময় ছিলেন আছেন ও থাকবেন। তার সত্ত্বাও গুণাবলী অতুলনীয়। তিনি ঠিক যেমনি তেমনভাবে তিনি বিরাজমান। তাঁর অসংখ্য সুন্দর নাম রয়েছে। তাঁর পিতা পুত্র বা স্ত্রী নেই। তিনি একমাত্র সত্তা। তার সমকক্ষ সমতুল্য কেউ নেই। সমস্ত প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তারই প্রাপ্য। আল্লাহ তায়ালাকে তার সত্তা গুনাবলী ও সকল ক্ষমতা সহ বিশ্বাস করাই হলো ঈমানের সর্বপ্রধান বিষয়।

২.ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস

ফেরেশতাগন নূরের তৈরি আল্লাহতায়ালা তাদের বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তারা সর্বদা আল্লাহ তায়ালার জিকির ও তাজবীদ পাঠেরত তারা আল্লাহ তাআলার আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ অদৃশ্য তবে আল্লাহর আদেশে তারা বিভিন্ন আকার আকৃতি ধারণ করতে পারেন তারা পুরুষ নন আবার নারী ও নন তাদের প্রয়োজন নেই তাদের সংখ্যা অগণিত একমাত্র আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কেউই তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানেনা ফেরেশতাগণের মধ্যে চারজন হলেন প্রসিদ্ধ তারা হলেন হযরত জিবরাঈল ( আঃ) এবং হযরত ইসরাফিল (আ.) হযরত মিকাইল (আ.) হযরত আজরাইল (আ.)।

৩.আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস

মানবজাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা'আলা যুগে যুগে নবী রাসূলগণের নিকট আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন এগুলো হলো আল্লাহ তাআলার পবিত্র বাণী সমষ্টি এসব কিতাবে আল্লাহুতালা শ্রী ও পরিচয় ও ক্ষমতার বর্ণনা প্রদান করেছেন মানুষের জীবন যাপনের জন্য নানা আদেশ নিষেধ প্রদান করেছেন এ কিতাবগুলো আসমানী কিতাব নামে পরিচিত আল্লাহ তাআলা নবী রাসূলগণের মাধ্যমে এসব কিতাব আমাদের নিকট পৌঁছেছেন আসমানী কিতাব সর্বমোট ১০৪ খানা। 1১০০ খানা ছোট। এগুলোকে বলা হয় সহীফা। আর চারখানা বড়। এগুলো হলো তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন মাজীদ। কুরআন মাজীদ হলো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। এতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল বিষয় সুন্নিবেশিত রয়েছে। এটি মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ তথা পরিপূর্ণ জীবন বিধান।

৪.নবী রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস

মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা'আলা যুগে যুগে নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করতেন। তাঁরা সত্য- মিথ্যা ন্যায়- অন্যায় শিক্ষা দিতেন। কোন পথে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করবে তা দেখিয়ে দিতেন। নবী রাসুলগণ ছিলেন মানব জাতির মহান শিক্ষক। আল্লাহ তা'আলা তাঁদেরকে বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন। তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ। সৃষ্টি গুলোর মধ্যে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা সর্বাধিক। সর্বপ্রথম নবী ছিলেন হযরত আদম আলাইহি সাল্লাম। আর সর্বশেষ নবী ও রাসুল হলেন হযরত মুহাম্মদ(স.) তিনি আমাদের নবী, ইসলামের নবী আমরা তাঁরই উম্মত।

৫.আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস

আখিরাত হলো পরকাল। দুনিয়ার জীবনের পর মানুষের আরও একটি জীবন রয়েছে। এ জীবন স্থায়ী ও অলন্তকালব্যাপী। এটাই হলো পরকাল। আখিরাত বা পরকালের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। কিয়ামত, কবর, হাশর, মিজান, সিরাত, জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি আখেরাত জীবনের এক একটি স্তর। আখিরাত হলো কর্মফল ভোগের স্থান। মানুষ দুনিয়ার জীবনে যেমন কাজ করবে তেমন ফল ভোগ করবে। ভালো কাজ করলে পুরস্কার পাবে জান্নাত। আর খারাপ কাজ করলে কবরের শাস্তি ভোগ করবে। তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।

৬.তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস

তাকদীর অর্থ ভাগ্য। তাকদীর আল্লাহতালা থেকে নির্ধারিত। ভালো-মন্দ যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তাআলার হুকুমে। সুতরাং দুনিয়াতে ভালো কিছু করতে হলে আনন্দে আত্মহারা হওয়া যাবে না। বরং এটি আল্লাহরই দান। তাই আল্লাহ তাআলার শুকর বা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। অন্যদিকে বিপদে আপদে বা কোন ক্ষতির সম্মুখীন হলে হতাশ হওয়া যাবে না।

৭.মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস

মৃত্যুর পর আমাদের পুনরায় জীবিত করা হবে। দুনিয়ার প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সকলকে আল্লাহতালা জীবিত করবেন। একে বলা হয় পুনরুত্থান। এ সময় সবাই হাশরের ময়দানে সমবেত হবে। আল্লাহ তায়ালা। সেদিন প্রত্যেকের নিকট নিজ নিজ আমলের হিসাব চাইবেন। আমাদের সেদিন তাঁর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহতালা সেখানে পাপ পুণ্যের ওজন করবেন। হিসাব নেবেন। তিনি একমাত্র বিচারক অতঃপর ভালো কাজের পুরস্কার মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে।

আরো পড়ুন:বাচ্চা হলে আযান দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন

ঈমান আনার শুভ পরিণাম

ঈমান আল্লাহর একটি বড় নেয়ামত। ঈমানের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারে। মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে শ্রদ্ধা সম্মান কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করেন। সকলেই তাকে ভালবাসেন।এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন"আর সম্মান তো কেবল আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই"(সূরা আল- মুনাফিকুন আয়াত-৮) মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রিয় পাত্র। আল্লাহতালা মুমিনদের ভালবাসেন। আখিরাতে তিনি মুমিনদের চিরশান্তির জান্নাত দান করবেন। চিরকাল থাকবেন ও জান্নাতের সকল নিয়ামত ভোগ করবেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন"নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনেও সৎ কর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে ফেরদাউস জান্নাত সেখানে তারা চিরকাল থাকবে"(সূরা আল কাহ্ফ, আয়াত ১০৭-১০৮)

মন্তব্য

আমরা ঈমানের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আরো ভালোভাবে পড়বো। এ সম্পর্কে জানব ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করব। অতঃপর এগুলো অনুসরণ করে জীবন গড়ে তুলবো। আমরা সব সময় নেক কাজ করব। কখনো অন্যায় কারো প্রতি অত্যাচার করবো না। এভাবে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও সফলতা লাভ করতে সক্ষম হব।

শেষের কথা

আজকের আলোচনার মাঠে আমরা জানতে পারলাম ঈমান সম্পর্কে। আশা করি ঈমানের বিষয়গুলো এবং ঈমান সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জানাতে পারলাম। আশা করব আপনারা সবাই সুন্দরভাবে আল্লাহর দেখানোর পথে চলবেন এবং আল্লাহর নির্দেশনা পালন করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। এরকম আরো ইসলামের জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। বন্ধুদের মাঝে বিষয়টি শেয়ার করে বন্ধুদের এসব বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য সাহায্য করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url