জেনে নিন মুসলিমদের প্রথম প্রতিরোধ বদরের যুদ্ধের ইতিহাস

 জেনে নিন মুসলিমদের প্রথম প্রতিরোধ বদরের যুদ্ধের ইতিহাস

৬৪০ খ্রিষ্টাব্দ আরবের মরুভূমিতে সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে এক মুসাফির তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে। আর মনে করেছে, 20 বছর আগে ঠিক এই স্থানে ঘটে যাওয়া এক যুদ্ধের কথা। সেদিন বিশ্বাসে বলীয়ান ছোট্ট একটি দল লড়েছিল বৃহত্তর এক বাহিনীর সাথে। যারা এসেছিল তাদের অস্তিত্বকে চূর্ণ করতে। কিন্তু সেই ছোট্ট দলটি লড়াইয়ে জিতে যায় এবং চিরকালের জন্য মানব ইতিহাসের পথ পরিবর্তন করে দেয়৷ যা স্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় বদরের যুদ্ধ নামে। সপ্তম শতাব্দী আরোব ভূমি পুরো অঞ্চলটি ছিল বিভিন্ন শহর বা উপজাতি দ্বারা শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত।

এই শহরগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল মক্কা। এখানে ছয়শ 10 খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথমে খুব কম লোকই এই নতুন ধর্মে যোগ দিয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে মক্কার মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। কিন্তু তবুও বেশিরভাগ লোক বিশেষত মক্কার নেতারা তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা হারাবার ভয়ে ইসলাম গ্রহণে অস্বীকার করেছিল। তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল ইসলামকে রুখতে।

এই বিরোধিতা সত্ত্বেও মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় 12 বছর ধরে মক্কার জনগণকে নিরলস ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আর এর সাথে বেড়ে চলেছিল নতুন মুসলিমদের উপর মক্কার নেতাদের নির্যাতনের মাত্রা।পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক হয়ে উঠল যে লোকেরা মক্কা থেকে বিভিন্ন জায়গায় হিজরত করতে শুরু করে। তবে বেশিরভাগ যায় আবিসিনিয়ায় যা আধুনিককালে ইথিওপিয়া হিসেবে পরিচিত।

এমনকি মক্কার নেতারা পরিকল্পনা শুরু করে দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করার। কিন্তু আল্লাহ তাদের পরিকল্পনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রকাশ করেন এবং নবীজী ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পেতে মক্কা ছেড়ে চলে যান। ঘাতকদের এড়াতে তিনি বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নেন এবং 14 দিন পরে ইয়াসরিব নামে একটি শহরে পৌঁছে যান। এটি ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ ঘটনা। এর জনগণ মক্কা থেকে আগত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের স্বাগত জানায় এবং তাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে।

 আরো পড়ুনঃ ইসলামের পথে চলার উপায়, আল্লাহর পথে আসার উপায়

এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং শহরটির নামকরণ করেছিলেন আল মদিনা আল মুনাওয়ারায় যা সংক্ষেপে মোদী নামে পরিচিত। যে সকল মুসলিমরা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলেন তাঁরা শেষ পর্যন্ত এখানে বাকি মুসলিমদের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু মক্কার নেতারা তাঁদের পিছু ছাড়েনি। তারা তৎক্ষণাৎ মদিনায় মুসলিমদের আক্রমণ করার পরিকল্পনা শুরু করে দেয় এবং সে উদ্দেশ্যে লোকবল ও সম্পদ সংগ্রহ করতে শুরু করে দেয়।

মদিনার অবস্থান মক্কার প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার উত্তরে এটি মুসলমানদের একটি কৌশলগত সুবিধা দিয়েছিল। মক্কার অর্থনীতি সিরিয়ার সাথে বাণিজ্যের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ছিল। মক্কা থেকে আসা কাফেলারা প্রায়শই এই দুটি জায়গার মধ্যে পণ্য চলাচল করতো। মদিনা এই বাণিজ্য পথের পাশে অবস্থিত ছিল এবং মুসলমানরা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাইল। মক্কার বাণিজ্য বন্ধ করতে এবং মক্কার অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে। মক্কার একটি বড় কাফেলা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে সিরিয়া থেকে বাড়ি আসছিল।

মাত্র 40 জন প্রহরী এই কাফের মূলধনের একটি বড় অংশ ছিলো মক্কার মুসলিমদের থেকে লুট করা। এ কাফেলার খবর যখন মদিনায় পৌঁছল তখন মুসলিমরা কাফেলাটিকে তার পথে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনশ নয় জন সাহাবীকে নিয়ে মদিনা থেকে রওনা হন। শেষ ৬২৪ সালে মক্কার একটি বড় কাফেলা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে সিরিয়া থেকে বাড়ি আসছিল। ছিল মাত্র 40 জন প্রহরী এই কাফের মূলধনের একটি বড় অংশ ছিলো মক্কার মুসলিমদের থেকে লুট করা এ কাফেলার খবর যখন মদিনায় পৌঁছল তখন মুসলিমরা কাফেলাটিকে তার পথে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন

এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনশ নয় জন সাহাবীকে নিয়ে মদিনা থেকে রওনা হন। একই সাথে লড়াই এড়াতে অন্য একটি পৃথক পথে মক্কা অগ্রসর হল। আবু সুফিয়ানের বার্তা পেয়ে মক্কার নেতারা প্রায় 1000 লোকের সৈন্য জড়ো করে ফেলে এবং মুসলমানদের পরাজিত করার জন্য মদিনার দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে যেহেতু আবু সুফিয়ান অন্য পথ ধরে মক্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। সেহেতু মুসলিমরা পূর্ব পরিকল্পিত স্থানে কাফেলাকে আটকাতে পারল না।

একই সাথে তারা খবর পেল যে মক্কা থেকে একটি বিশাল বাহিনী তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মুসলমানরা এর জন্য কোনও মতেই প্রস্তুত ছিল না এবং তাদের জন্য পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে। মক্কা বাহিনী যখন মদিনার কাছে পৌঁছানোর আগেই আবু সুফিয়ান নিরাপদে মক্কায় পৌঁছে যায় এবং মক্কা বাহিনীকে দেশে ফিরে আসার জন্য বার্তাবাহক প্রেরণ করে। তবে মক্কার নেতারা ভেবেছিল যে তাদের পক্ষে দুর্বল মুসলিম বাহিনীকে পিষ্ট করার এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ।

সুতরাং তাঁরা সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা ফিরে যাবে না। বরং মুসলিম বাহিনীর মোকাবিলা করতে মদিনার দিকে অগ্রসর হবে। মুসলিম শিবিরে পরিস্থিতি তখন সংকটজনক। মুসলিমরা অগ্রসরমান খবর পেয়ে বুঝতে পেরেছিল যে আর পিছিয়ে যাবার সুযোগ নেই। তারা তৎক্ষণাৎ মোকাবিলা শুরু করে দিল এবং সিদ্ধান্ত নিল যে তারা পিছু হটবে না। বরং অগ্রসরমান মক্কা বাহিনীর মোকাবিলা করবে। তাঁরা বলেন, নামক উপত্যকার কাছে শিবির স্থাপন করলো এবং শত্রুর অপেক্ষা করতে থাকল৷

মুসলিমরা পরে উপত্যকায় পৌঁছে প্রথমে মদিনার নিকটবর্তী প্রান্তের কাছে শিবির স্থাপন করেছিল। এলাকাটি ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করতে মুসলিমদের দল উপত্যকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং খবর নিয়ে শিবিরে ফিরে এলো। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মুসলিমরা শিবিরটিকে বদলের মূল কপির দিকে সরিয়ে আনল যাতে শত্রুরা কর প্রবেশাধিকার না পায়। এর পরে তাঁরা ছোট ছোট দল প্রেরণ করল যাতে বছরের জন্য ছোট কূপগুলি সম্পূর্ণ ভাবে বালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়।

এর ফলে শত্রুর জন্য পানির আর কোনো উৎস থাকল না। শিক্ষা বাহিনীর ছয়শ 624 খ্রিষ্টাব্দের 12 ই মার্চ রাতে উপত্যকায় পৌঁছল এবং উপত্যকার বিপরীত দিকে শিবির স্থাপন করল। পরের দিন সকালে হয়নি। বরং উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের সম্পন্ন।সে বক্তা বাহিনী তীব্র হুঙ্কার ঝাঁপিয়ে পড়ল যুদ্ধের ময়দানে। আর মুসলিমরা অবস্থান নিল তাদের প্রতিহত করার দৃঢ় সংকল্পে। মুসলিম বাহিনীতে ছিল প্রায় তিনশ থেকে তিনশ 17 জনের মতো। তারা আসফ বা সারি সিস্টেম হিসাবে পরিচিত।

একটি কৌশল অনুসারে তিন সারিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা করেছিল। সামনের সারিতে ছিল পোষা বহনকারী দল। দ্বিতীয় সারিতে ছিল তিরন্দাজদের দল এবং বাকি পদাতিক তৃতীয় সারিতে অবস্থান করছিল। মক্কার নেতারাও তাদের বাহিনীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল সামনের দিকে তারা অশ্বারোহী দল স্থাপন করেছিল, যেখানে প্রায় একশ।

আরো পড়ুনঃ ঈমানের সাতটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন

শেষের কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধু আজ এই পর্যন্তই কথা হবে অন্য কোন চ্যাপ্টারের বদরের যুদ্ধের বাকি ঘটনা নিয়ে । বদরের যুদ্ধের বাকি ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় চ্যাপ্টারের কথা বলব। সেই ঘটনা শোনার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজ এ পর্যন্তই।  ঘটনাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং বন্ধুদের জানা স্বার্থে পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url