যাকাত এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন

  যাকাত এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন 

ভূমিকা: ইসলামী যাকাত ব্যবস্থা সমাজে প্রচলিত থাকলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের নানাবিধ সমস্যার সমাধান হবে আবার ধনীরাও তাদের দায়মুক্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ পাবে কাজেই ইসলামে যাকাতের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। নিম্নে আমরা যাকাত কি, যাকাতের মাশারিফ সমূহ, যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।

পোস্ট সূচীপত্র: যাকাত এর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিন 

  • যাকাত কি
  • যাকাতের মাশারিফ সমূহ
  • যাকাত অর্থনৈতিক গুরুত্ব
  • যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব
  • মন্তব্য

যাকাত কি

যাকাত আরবি শব্দ। ইসলামী পরিভাষায় যাকাত মানে বৃদ্ধি করা। ইসলামী পরিভাষায় যাকাত হচ্ছে কোন ব্যক্তির নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকলে সে অর্থের নির্ধারিত একটা অংশ গরিব দুঃখী এবং অভাবী লোকদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া।  যাকাত ফরজ হওয়ার অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে মুসলমান হওয়া, নিশাব সম্পদের মালিক হওয়া, জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া, বালেগ হওয়া, নিসাব পরিমাণ সম্পদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া, ঋণগ্রস্থ না হওয়া ও মাল এক বছর কালীন স্থায়ী থাকা।

যাকাতের মাশারিফ সমূহ:

১. অভাবগ্রস্থ বা ফকির:

ফকিরকে বাংলায় গরিব বলা হয়। যাদের কিছু না কিছু সম্পদ আছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনা তা যথেষ্ট নয়, যাদের জীবন ধারণের জন্য অপরের সাহায্য সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হয় এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যায়।

২. মিসকিন

যারা নিজের পেটের অন্য জোগাড় করতে পারে না এবং অভাবগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও সম্মানের ভয়ে কারো দ্বারস্থ হয় না তাদের মিসকিন বলে।

৩. যাকাতের নির্ধারিত নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ

যারা যাকাত আদায় করে, রক্ষণাবেক্ষণ করে বন্টন করে ও হিসাবপত্র রাখে তাদের যাকাতের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী বলে। তারা আর্থিক সংগতি সম্পন্ন হলেও যাকাত থেকে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে।

৪. মন জয় করার উদ্দেশ্যে

সদ্য মুসলমান হওয়া ব্যক্তির সমস্যা দূরীকরণে এবং ইসলামের উপর অবিচল রাখার উদ্দেশ্যে তাদের যাকাত দেওয়া যাবে। ইসলামী পরিভাষায় তাদের মোয়াল্লাফাতুল কুলুপ বলা হয়েছে।

৫. মুক্তি কামি দাস

যে দাস তার মনিবের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিষদ সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার চুক্তি করেছে এমন দাসকে মুক্তির মূল্য পরিশোধের জন্য যাকাত প্রদান করা যেতে পারে।

৬. ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি

যে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম তাদের যাকাত দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করা যায়।

৭. আল্লাহর পথে

এর আরবি পরিভাষা হলো "ফি সাবিলিল্লাহ" এটির অন্য অর্থ জিহাদ। ইসলাম প্রচার ও প্রসারের এবং কুফরি ব্যবস্থাকে নির্মূল করে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাকেই জিহাদ বলে।

৮. অসহায় প্রবাসী পথিক

কোন ব্যক্তি সফরে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়লে বা যাত্রাপথে আর্থিক সংকটের কারণে বিপদে পড়লে সাময়িকভাবে তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।

আরো পড়ুন: যাকাত কি ? যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ

যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

যাকাতের অন্যতম গুরুত্ব অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা। সমাজের কেউ সম্পদের পাহাড় গড়বে, দুর্গ ইমারতে বসবাস করবে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে আর কেউ অনাহারে দিন কাটাবে এমন বিধান ইসলামে নেই। কেউ শিক্ষা খাদ্যবস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। আর বাড়ি বাড়ি ঘুরবে শান্তি ও সাম্যের ধর্ম ইসলাম তা কিছুতে সমর্থন করেনা। 

কাজেই সকল শ্রেণীর নাগরিকের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইসলাম ধনীদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন "আল্লাহ তায়ালা লোকের উপর সাদাকা ফরজ করেছেন তা নেওয়া হবে ধনীদের থেকে এবং বিলিয়ে দেওয়া হবে দুস্থদের মধ্যে"।সাধারণ মানুষের অর্থের প্রতি লিপ্সা থাকে। 

যে কৃপণ স্বভাবের হয় সে নিজের কষ্টে উপার্জিত অর্থ কাউকে দিতে চায়না। তাই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা সম্পদশালী ব্যক্তিদের মনকে সম্পদের লিপ্সা, লোভ, কৃপণতা, স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মানুষের মনকে দয়াময়া স্নেহ মমতা ও ভালবাসা ইত্যাদি মানবিক গুণসম্পন্ন করে তোলার জন্য তাদের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন।

কোরআন ও হাদীস নির্দেশ মোতাবেক যাকাত আদায় ও বিতরণ করা মুসলমানদের একটি পবিত্র দায়িত্ব। এ ব্যবস্থাপনার ওপর মুসলমানদের সামাজিক অর্থনৈতিক কল্যাণ অনেকাংশে নির্ভরশীল। মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামিক ব্যবস্থায় যাকাত আদায় করলে সমাজে ধনী দরিদ্রদের পার্থক্য কমে আসবে। কেউ বেকার থাকবে না বরং মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি হবে। অসহায় গরিব মানুষকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা একটি মানবিক দায়িত্ব। তাদের মাধ্যমে মানবিক গুণের বিকাশ ঘটে।

যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব:

যাকাতের মাধ্যমে সমাজের ধনী-দরিদ্রদের মধ্যকার বিরাজমান বৈষম্য দূর হয়। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়। আল্লাহর নির্দেশ মতো যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করলে সমাজের কোন লোক অন্যহীন বস্ত্রহীন গৃহহীন থাকবে না। কেউ না খেয়ে থাকবে না। কেউ বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে না। সম্পদশালী ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যাকাত ও সাদাকার অর্থে অভাব-অভাবীদের প্রয়োজন মিটিয়েও অনেক জনহীন্হিত কর এবং কল্যাণমূলক কাজ করা যায়।

 বহু দরিদ্র ব্যক্তিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। স্বাস্থ্যবান দরিদ্র শ্রমিককে তার শ্রমের উপযোগী উপকরণ দেওয়া সম্ভব হয়। দরিদ্রের জন্য প্রতিষ্ঠান যেমন এতিমখানা স্থাপন করা যায়। ইসলামী যাকাত ব্যবস্থা গোটা সমাজকে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি বদভ্যাস থেকে পবিত্র রাখে এবং পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ত্যাগ মমতা বোধ ইত্যাদি গুণ আরো সুদৃঢ় করে।

আরো পড়ুন:ঈমানের সাতটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন

আমাদের শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আমরা আজকের বিষয় পড়ে জানতে পারলাম, যাকাত কি, যাকাতের মা শারিফ সমূহ, যাকাতের গুরুত্ব এবং যাকাতের তাৎপর্য। প্রিয় পাঠক বন্ধু, এই পোষ্টটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। যাতে সকল বন্ধুরা এসব বিষয়ে সচেতন হয় এবং বিস্তারিত সবকিছু জানতে পারে ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url