এলার্জি প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি
এলার্জি প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি
রাতে মহলে যেমন পাহারাদার টহল দিতে থাকে। আমাদের শরীরেও দিনে রাতে পাহারাদার টহল দেয় ক্ষতিকর জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে। আমরা প্রতিদিন অপরিষ্কার কত কিছু খাই। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কত জীবাণু শরীরে ঢোকে তা ও আমরা অসুস্থ হই না। এই পাহারাদারদের কল্যাণে ক্ষতিকর জিনিস গুলোকে ধরাও পাকরাও করে একদম নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আমরা কিছু টেরও পাই না এটাই হল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এটা সব সময় নিখুঁত ভাবে কাজ করে না। মাঝে মাঝে ভুলও করে বসে। তখনই দেখা যায় অ্যালার্জি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ এলার্জি প্রতিরোধে ঘরোয়া পদ্ধতি
- এলার্জি কি?
- অ্যালার্জি থেকে বাঁচার উপায় কী?
- এলার্জি হতে না দেওয়া।
- দ্বিতীয় পদ্ধতি হল যখন অ্যালার্জি দেখা দেয় সেই অস্বস্তিগুলো কমানোর জন্য চিকিৎসা
- .ইমিউনোথেরাপি
- মন্তব্য
এলার্জি কি?
যেমন ধরেন, বৃষ্টির দিনে শরীফ ভাই ভুনা খিচুড়ি, মচমচে করে ভাজা পদ্মার ইলিশ আর একটু বেগুন ভাজি নিয়ে আরাম করে খাবে। কিন্তু খাওয়া শুরু করার একটু পরেই দেখা গেল শরীফ ভাইয়ের গায়ে লাল চাকা উঠা শুরু হয়েছে প্রচুর৷ চুলকানি হচ্ছে কী মুশকিল আরাম করে খাওয়া তো গেলই না৷ আবার এখন চুলকানি ও থামছে না তাহলে এখানে ঘটনাটা কী হল? শরিফের শরীরে যে পাহাড়গুলো আছে যারা প্রতিদিন তাঁকে অনেক ধরনের সূত্র থেকে বাঁচায়।তারা খাবারের মধ্যে কোনও উপকরণকে ক্ষতিকর মনে করছে। ধরলাম বেগুনকে ক্ষতিকর মনে করেছে৷ আর তাই বেগুন এর সাথে বেদম মারামারি শুরু করে দিয়েছে।
ভেতরে মারামারি হচ্ছে আর বাইরে থেকে শরীরে দেখতে পাচ্ছেন লাল চাকা আর অনুভব করছেন চুলকানি। কিন্তু আসলে তো বেগুন শরীরের কোনও ক্ষতি করবে না। অন্য কোনও সমস্যা ছাড়াই মজা করে খেলো। সহজ ভাষায় এটাই হল এলার্জি। আপনার শরীরের জন্য এই জিনিসগুলো ক্ষতি করে না। কিন্তু আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদের কে শত্রু হিসেবে চিনে রেখেছে। টহল দেওয়ার সময় নাগাল পেলে একেবারে একা দেখে নেয়। আর আপনি পরেন মহা যন্ত্রণায়। সাধারণত এটা ভয়ের কিছু না আপনা আপনি চলে যায়। তবে অনেক রোগীকে এলার্জি খুব কষ্টের অশান্তিতে রাখে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি প্রাণঘাতী হতে পারে। এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ বয়সন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন
অ্যালার্জি থেকে বাঁচার উপায় কী?
অ্যালার্জির চিকিৎসা মোটাদাগে দুই ধরনের প্রথম এবং সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলঃ
১.এলার্জি হতে না দেওয়া।
২. দ্বিতীয় পদ্ধতি হল যখন অ্যালার্জি দেখা দেয় সেই অস্বস্তিগুলো কমানোর জন্য চিকিৎসা
৩.ইমিউনোথেরাপি
১.এলার্জি হতে না দেওয়া।
প্রথমে উপায় নিয়ে আগে বলি যে জিনিস আপনার অ্যালার্জি সেটা আপনি আপনার কাছে আসতে দেবেন না। তাহলে আপনার শরীর পাহাড়গুলো অযথা মারামারি করার জন্য আর কাউকে পাবে না।আপনার কোনও যন্ত্রণা হবে না। তবে ঠিক কিসে আপনার অ্যালার্জি সেটা খুঁজে বের করতে আপনাকে। একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হতে পারে। সহজ উদাহরণ হল শরীফ ভাই। উনি ভুনা খিচুড়ি পদ্মার ইলিশ, বেগুন ভাজি খাচ্ছিলেন। সেখান থেকে তিনি ধারণা করতে পারেন যে, এই খাবারের মধ্যে কোনও একটাতে হয়তো তাঁর অ্যালার্জি।
পরের বার তিনি যখন বেগুন ভাজা দিয়ে রুটি খান আর তখন যদি এমন লাল চাকা চাকা উঠে চুলকোতে শুরু করে তাহলে চিন্তা করতে হবে। এই দুই খাবারের মধ্যে কোন জিনিসে মিল ছিল দুই বাড়ির বেগুন ছিল তাহলে ধরা যায় শরীফ ভাইয়ের বেগুনে অ্যালার্জি আছে। এবং অ্যালার্জি যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে শরীর ভাইকে বেগুন থেকে দূরে থাকতে হবে। খাবারে অ্যালার্জি হলে সেটা খুঁজে বের করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা খাবারের মতো খুঁজে পাওয়া এতটা সহজ না। এমন জিনিসগুলোর তালিকা আমি বলে দিচ্ছি যাতে আপনি যখন গোয়েন্দাগিরি করছেন তখন কাকে কাকে সন্দেহভাজন তালিকায় রাখবেন। তার ধারণা পেয়ে যান।
এক ডাস্ট মাইট। এগুলো হল ছোট ছোট পোকা চোখে দেখা যায় না। মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখলে সাদা রঙের আট পা ওয়ালা পোকার মতো দেখা যায়। আমাদের চামড়া থেকে মৃত কোষগুলো ঝরে পড়ে এরা সেগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে। আমাদের চামড়া থেকে প্রতিদিনই অল্প অল্প মৃত কোষ ঝরে পড়ছে বিছানায় কার্পেটে সোফায় আর এসব জায়গায় বাসা বাঁধছে কোটি কোটি ডাস্ট মাইট। এই ডাস্ট মাইট আপনার অ্যালার্জি হতে পারে। এটা অ্যালার্জি খুবই কমন কারণ। কিন্তু চোখে দেখা যায় না। তাই ধরতে পারা কঠিন।
এটা দূরে রাখতে বিছানার চাদর কাঁথা লেপের কভার সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধোবেন। যে সব জিনিস নিয়মিত ধোয়া যায় না। যেমন কার্পেট সেগুলো বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভাল। বিছানা গোছানো ঝাড়ামোছা করার সময় মাস্ক পরে নিতে পারেন। আর যে সব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে যায় সেগুলো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছবেন। যাতে ধুলো না ছড়ায়। বাসার যে জায়গাগুলোতে আপনি বেশি সময় কাটান সেই জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে মনোযোগ দেবেন। দুই মধু বা ছত্রাক বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে।
ছত্রাক হতে পারে ছত্রাক থেকে ছোট ছোট কণা নিঃসরণ হয়। সেটাতে আপনার এ্যালার্জি হতে পারে। বাসার কোথাও ছত্রাক হতে থাকলে সেটা সরিয়ে ফেলবেন। আর ছত্রাক যাতে না হয়, সেজন্য ঘরে বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা করবেন। বছরের অনেক সময় দেখা যায় অনেকের চোখ নাক চুলকানো শুরু করে, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে,সর্দি থাকে বা নাক বন্ধ হয়ে যায়। চোখ লাল হয়ে যায়, মাথাটা ধরে থাকে হাঁচি কাশি একদম সারতে চায় না। এমন হলে পরাগরেণু আপনার শত্রু হতে পারে। খেয়াল রাখবেন বছরে ঠিক কোন সময়টাতে আপনি এমন হচ্ছেন।
সে সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতর থাকা যায়। বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে গোসল করে ফেলবে। যাতে পরাগরেণু ধুয়ে চলে যায় আর কাপড়জামা পারলে ঘরের ভিতর শুকোতে দেবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন তাতে আপনার বাসায় যাতে ছত্রাক নাচার গরম বা ঘাম ঘামে যে উপাদান গুলো আছে সেগুলো বিরুদ্ধে আপনার শরীর রিঅ্যাক্ট করতে পারে৷ অনেক খাটাখাটনি করলে, পরিশ্রম করলে, ব্যায়াম করলে যখন সরগরম হচ্ছে ঘামছেন তখন৷ গায়ে চুলকানি হতে পারে চাকা হতে পারে।
এমন হলে যতটা সম্ভব রোদে না যাওয়া। বাতাস আছে এমন জায়গায় থাকা, পাতলা ঢিলেঢালা জামা পরার চেষ্টা করবেন যাতে গা খুব গরম না হয়ে যায়। ঠান্ডা গরমের মত বেশি ঠান্ডায় গেলে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। বৃষ্টিতে ভেজা পুকুরে গোসল শীতে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।তাছাড়াও হতে পারে পশুপাখির লোম বা পালক যা বাতাসে ভাসতে পারে। পথেঘাটে ধুলাবালি পোকার কামড় নির্দিষ্ট কোনও মেটাল যে আংটি গয়না ঘড়ি থাকতে পারে। নির্দিষ্ট কে
নির্দিষ্ট কেমিক্যাল যে সাবান শ্যাম্পু ডিটারজেন্ট সীমিত থাকতে পারে। নির্দিষ্ট ধরনের কাপুর ক্লাস্টিক ওষুধ যেমন পেনিসিলিন, জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক আর খাবার তো আগেই বলেছি। চিংড়ি বাদাম ছোট শিশুদের ডিমের দুধে অ্যালার্জি থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় খাবারের যে কোনও ধরনের অ্যালার্জি যেমন ঘাস খাওয়া, গরুর মাংস, অ্যালার্জি, নাই। কিন্তু কোন খাওয়া গরুর মাংসে আর্জি আছে বুঝতে পারছেন লিস্টটা অনেক লম্বা। একেক জনের একেক জিনিসে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই আপনার কীসে অ্যালার্জি সেটা গোয়েন্দাগিরি আপনি সবচেয়ে ভালো করতে পারবেন। এটা খুঁজে বের করতে পারলে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়৷
আরো পড়ুনঃমাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ
২। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল যখন অ্যালার্জি দেখা দেয় সেই অস্বস্তিগুলো কমানোর জন্য চিকিৎসা
উপশমের উপায় কী এলার্জি নিয়ন্ত্রণের প্রধান ওষুধ হলো অ্যান্টিহিস্টামিন। শুরুতে যে বলেছিলাম অ্যালার্জির অস্বস্তিগুলো তৈরি হয় কারণ আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মারামারি করছে। সে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অস্ত্র হল হিস্টামিন, যা এত গোলমাল পাকায়। এই হিস্টামিন কে রুখতে ওষুধ হল অ্যান্টি হিস্টামিন। এই জাতীয় অনেকগুলো ওষুধ আছে। এলার্জি যাবতীয় ওষুধ গুলো কমাতে সাহায্য করে। আমার যখন আগে থেকে জানা থাকে অ্যালার্জি হতে পারে তখন আগেভাগেই খেয়ে নিলে অ্যালার্জি হওয়ার রুখে দিতে পারে।
এটা করবেন আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। আর কি কি চিকিৎসা আছে চুলকানি কমানোর জন্য জায়গাতে একটু ঠাণ্ডা সেঁক দিতে পারেন একটা তোয়ালেতে বরফ পেচিয়ে সেঁক দিতে পারেন। চুলকানি কমাতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে সেটা কিছু স্প্রে ওষুধ আছে। মেডিক্যালে চোখ চুলকানোর জন্য চোখের ড্রপ আছে। অ্যালার্জির সমস্যা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল মানসিক চাপ। মানসিক চাপে থাকলে অ্যালার্জি আরও খারাপ হতে পারে। তাই যারা অ্যালার্জির সমস্যা অনেক কষ্ট পাচ্ছেন।
তা দেখে মানসিক প্রশান্তি আনা যায়। কী ভাবে নিয়মিত ব্যায়াম যোগ ব্যায়াম, শ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারেন। আপনার খুব তীব্র অ্যালার্জি হলে অল্প কিছুদিনের জন্য স্টেরয়েড নামের ওষুধ খেতে হতে পারে। আমি ইউটিউবে বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখেছি যেখানে গণহারে অ্যালার্জির জন্য স্টেরয়েড খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া আছে। এটা ভুলেও করতে যাবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনওই ওষুধ খাবেন না।
এটা খুবই শক্তিশালী ওষুধ। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যালার্জিতে হয়তো আরাম পাবেন, কিন্তু ক্ষতিকর জীবাণুর সাথে লড়াই করতে পারবে না তখন সেগুলো এসে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।কখনও শুনেছেন না ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে অনেক মানুষ বন্ধ হয়ে গেছে। যথেচ্ছ স্টেরয়েড খাওয়ার জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাধারণত সুস্থ মানুষকে কিছু করতে পারে না। কিন্তু যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল তাদের উপরে একেবারে জেঁকে বসে। এলার্জি চিকিৎসার পরের ধাপে চিকিৎসা হচ্ছে।
৩.ইমিউনোথেরাপি
অনেকে এটাকে অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বলে যে জিনিস আপনার অ্যালার্জি সেটা অল্প অল্প করে ইঞ্জেকশন দিতে থাকতে হয়। কয়েক বছর ধরে। মোট কথা অ্যালার্জির কয়েক ধাপে কার্যকরী চিকিৎসা আছে। একদম সেনা গেলেও অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন প্রয়োজনে অ্যালার্জি স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হবেন।
মন্তব্য
শেষ করার আগে প্রাণঘাতী অ্যালার্জি লক্ষণগুলো বলে দিই, এগুলো খুব দ্রুত শুরু হয়। তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যেতে থাকে শ্বাসকষ্ট। শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হওয়া, বুক ধরপর, মাথা ঘুরানো, মনে হয় অজ্ঞান হয়ে পড়েছে বা অজ্ঞান হয়ে পড়া, গায়ে ঘাম আসা, কনফিউশন, মুখ চোখ ঠোঁট জিহ্বা ফুলে যাওয়া, সাথে গায়ে চাকা চাকা চুলকানি বমি ভাব, বমি, পেটব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে। এমন হলে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগী ভালো অনুভব করলে হাসপাতালে নেবেন। আগেই বলেছি এটা প্রাণঘাতী হতে পারে, কিন্তু সময় মতো একটি ইঞ্জেকশন দিলে জীবন বেঁচে যেতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url