দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে

 দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে

আমাদের সকলের চিন্তা চেতনাই কাজে-কর্মে ভাবভঙ্গিতে দৃষ্টির প্রতিফলন ঘটে। দৃষ্টিভঙ্গি তথা আচরণভঙ্গি আমাদের মনের আয়না। এতে যার যার চিন্তা প্রকাশ পায়। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে এনে দেয়। তাই পরিবেশ সচেতন হওয়া একান্ত আবশ্যক। শরীরের মতোই আমাদের মনেরও সঠিক খোরাক চাই। সব সময় মনে রাখবেন পরিবেশ যেন আপনার স্বপক্ষে কাজ করে বিপক্ষে নয়। আর নিরাশাবাদী মানুষগুলি এ কারণে ব্যর্থ হন।

সঠিক মনোভাব সত্যি বিপুল পরিবর্তন আনে। সঠিক মনোভাবে তথা দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে কর্মি তার কাজে সুফল পায়। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতি আসে। ছাত্র তার মেধা স্বীকৃতি লাভ করে, সেলসম্যান তার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি করতে পারে। মনোভাবের সঠিক হলে বৈবাহিক জীবনে সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে।

 সঠিক আচরণ করতে সহায়তা করে, এর ফলে প্রত্যেকটি মানুষের সুদক্ষ নেতৃত্ব দিতে পারেন। সব পরিস্থিতিতে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আচরণ আপনার সঠিক মনোভাবের একান্ত সহায়ক। দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক হলে কর্ম ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি আসে। জীবন বদলে তাই দৃষ্টি বদলান। সত্যি আপনার জীবন বদলে যাবে। আজ আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করব কিভাবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলাবেন এবং নিজেদের জীবনের উন্নতি করবেন।

পোস্ট সূচিপত্র: দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে

  • কাজের প্রতি দৃঢ় মনোভাব দরকার
  • সঠিক দৃষ্টিভঙ্গীর সুফল
  • উৎসাহ উদ্দীপনা
  • নিজের অসীম ক্ষমতাকে কাজে ব্যবহার করুন
  • ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
  • আমাদের মনোভাব সাফল্যের জন্য জরুরী।
  • কাজের প্রতি দৃঢ় প্রত্যায় মনোভাব সঠিক রাখুন
  • মন্তব্য

কাজের প্রতি দৃঢ় মনোভাব দরকার

কাজ করার জন্য মানসিকতার প্রয়োজন। এমন অনেক কাজই আছে যা আমরা মনোযোগ দিয়ে করতে চায়না অথবা আমাদের আগ্রহ কম। কাজ আমাদের জীবিকা অর্জনের একমাত্র পথ। তাই সক্রিয় হয়ে কাজ করা একান্ত আবশ্যক। আপনার পুরো কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহযোগী ও নিম্ন পদস্থ যারা আপনার সংস্পর্শে আসবে। প্রত্যেকেই উৎসাহিত হবে খুশি হবে। তাদের সকলের আপনার ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে। তাই কাজের প্রতি দৃঢ় মনোভাব আপনার নিজের এবং কর্মক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নতির জন্য একান্ত দরকার।

আরো পড়ুন : Career ক্যারিয়ার নির্বাচন করার আটটি উপায় ।

সঠিক দৃষ্টিভঙ্গীর সুফল

আশাবাদী মনোভাব আমাদের সকলেই সাফল্য লাভের দিক নির্দেশনা দেয়। জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হলো নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠা। আপনার কাজকর্মের ভিত্তিতে বাকিরা আপনার কর্ম ক্ষমতার মূল্যায়ন করবে। আর আপনার কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করবে আপনার সঠিক চিন্তাভাবনা। অনেকেই সারা জীবন একই স্তরে রয়ে যায়, কারণ তাদের নেতিবাচক মনোভাব ভাবনা চিন্তা তাদের অগ্রসর করতে দেয় না ।

একবার একজন ছাত্র আমাকে তার উন্নতির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিল কিভাবে সে সেরা ছাত্র হতে পারে? আমি এক কথায় উত্তর দিয়েছিলাম সেরা ছাত্র হতে হলে সেরা মনোভাব দরকার। ছাত্রটি সম্ভবত আমার কথার সারমর্ম বুঝতে পারেনি। তাই সে আবার প্রশ্ন করেছিল। তখন আমি বললাম আমার লেখা কিভাবে ভাল ছাত্র হবেন? বইটি পড়ো। 

সে বলেছিল হয়তো আপনার বইটি পড়া হয়নি। তবে এ ধরনের অনেক বই আমি পড়েছি তাতে শুধু দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় মাত্র। আমি আবারো তাকে বলেছিলাম তাহলে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও বদলায়নি অর্থাৎ তুমি হয়তো সব সময় নিজেকে খারাপ ছাত্র মনে করো। তাই তোমার অবচেতন মন অংক ও ইংরেজি না পারার কিংবা সে গান তোমার নেই যুক্তি খুঁজে আর তাই বাস্তবে তোমার আর চেষ্টা করা হয় না।

 কিভাবে ভাল ছাত্র হওয়া যায় দিকনির্দেশনা গুলো তোমার মাথায় কাজ করে না। তোমার সময়গুলো তখন অলসততায় কেটে যায়। এজন্যই তুমি ভালো ছাত্র কিংবা সেরা ছাত্র হতে পারো না। ছাত্রটি সত্যি বলেছিল সত্যি আমি নিজেকে তুচ্ছ নগণ্য ছাত্র মনে করতাম। আর তাই ঠিকমতো ক্লাস ও পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়া হতো না। এরপর যখন এক বছর পর পর ছাত্রটি সাথে দেখা হয়েছিল তখন সে তার স্কুলের সেরা ছাত্র। তাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলান সত্যি আপনিও বদলে যাবেন।

উৎসাহ উদ্দীপনা

সফল মানুষের আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো উৎসাহ উদ্দীপনা। উৎসাহিত হলে কর্ম কর্মদ্দীপনা আছে। কিন্তু কিভাবে এ উৎসাহ উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলা যায়? আপনার চিন্তা ভাবনায় উৎসাহ উদ্দীপনা আনতে হবে। নিজেকে আশাবাদী প্রগতিশীল করে তুলুন। মনে করুন আপনি অবশ্যই পারবেন। আপনার সে যোগ্যতা আছে। একটু শক্ত হতে হবে। যা আপনি নিজেকে মনে মনে করবেন তেমনি হয়ে উঠবেন। কাজ সম্পাদনের জন্য যতটাই আগ্রহ থাকা চাই বাকি রাও আপনার উৎসাহেঅনুপ্রান্ত হয়ে উঠবে।

 সেরা মানের কাজ সম্পাদনের জন্য ততটাই উদ্দীপনা ও আগ্রহ থাকা চাই। বাকিরা আপনার উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠবে। আপনি পাবেন সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি। আপনার কাজে নিষ্ঠা দেখলে কর্মপদস্থরাও নিজেদের কাজে প্রতি নিষ্ঠাবান হবে এর একটা বিশাল প্রভাব পড়বে। আর ঊর্ধ্বতনরা আমাদের কাজের সাফল্য দেখে আপনাকে মূল্যায়ন করতে থাকবে। আপনি অতি দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে উঠবেন।

নিজের অসীম ক্ষমতাকে কাজে ব্যবহার করুন

কিভাবে নিজেকে উন্নত করা যায় এমন আত্ম প্রশংসার অনুশীলন করুন। নিজেকে অপরাধী সব্যস্ত করে শাস্তি দেয়ার নিজেকে হীন প্রমাণ করার অভ্যাস করবেন না। আপনি নিজেকে যা মনে করবেন বাস্তবে আপনি তাই। নিজের ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করলে শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন। সব বিষয়ে বড় বড় ধারণা ও কল্পনা করুন। আপনার মধ্যে সেরা কাজ করার ক্ষমতা নিহিত রয়েছে। তাই সবার সেরা কাজ করার আপনার যোগ্যতার মাপকাঠি।

 কোন কিছুই আপনার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারবেনা। আপনার প্রতিটি কাজে উদ্দীপনার প্রকাশ করুন, শুধুই অগ্রগতি প্রগতির কথা ভাবুন সমৃদ্ধিতে আস্থা রাখুন। বেশিরভাগ মানুষই হয়তো সাফল্যের এই কলা কৌশলটাকে জানেন না। সাফল্যের মূলে আছে চিন্তাভাবনা সঠিক পরিচালনা। চিন্তা ভাবনা উন্নত করলে আপনার কাজে উন্নতি হবে আপনি সফল হবেন। নিজেকে মূল্যায়ন করুন এতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মত চিন্তাভাবনার সুযোগ পাবেন।

 আপনার চেহারায় আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠবে। আপনার মন আপনার সাথে কথা বলবে। কাজের গুরুত্ব অনুভব করুন। এভাবে চিন্তাভাবনা করলে নিজের কাজ আরো ভালোভাবে করার মনোবল পাবেন। আপনি যদি নিজের কাজকে গুরুত্ব দেন তাহলে নিম্নস্থারাও তাদের কাজের প্রতি গুরুত্ব উপলব্ধি করবে। এতে আপনি এবং অন্যারাও লাভবান হবেন।

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের আত্মবিশ্বাস কে বাড়িয়ে দেয়। আত্মবিশ্বাস আপনার ভিতরে সুপ্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। দৃঢ় কাজ করার উপায় বের করে আত্মবিশ্বাস। কিভাবে কাজটা করতে হবে তা জানতে সাহায্য করে। কাজেই আপনার নিজের প্রতি আস্থাবান হন। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এই আস্থার অভাব দেখা যায়। বিধায় তারা নিজের কাজকর্মে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। এ কারণে তারা ব্যর্থ হন। তাদের নেতিবাচক মনোভাবের একমাত্র কারণ তাদের আস্থার অভাব। যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে কাজটি করা সম্ভব তারা সত্যি করতে পারে। তবে যাদের বিশ্বাসের অভাব থাকে তারাই পার্থ জাগিয়ে দেয়।

অবিশ্বাস নিরাশার বহিঃপ্রকাশ। যখন মনে বিশ্বাস বা দ্বিধা জাগে মন সেই অবিশ্বাসকে সমর্থন করার নানা কারণ খোঁজে। আমাদের সকলের অধিকাংশ ব্যর্থতার মূল কারণ হলো দ্বিধা, অবিশ্বাস, মনের অবচেতন, ব্যর্থ হওয়া ইচ্ছা, সফল না হওয়ার ইচ্ছা। প্রতিটি মানুষ তার নিজেরই চিন্তাভাবনার পরিণাম স্বরূপ। আপনার বিশ্বাসের আয়তন যতখানি বড় হবে ততটাই বড় হবে আপনার সাফল্যের আয়তন। ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করলে প্রাপ্তি হবে যত সামান্য বড় বড় লক্ষ্য স্থির করুন। বিপুল সাফল্য পাবেন।

আরো পড়ুন : ইন্টারভিউ এর প্রস্তুতি ইন্টারভিউয়ে যে ভুলগুলো করা যাবে না

আমাদের মনোভাব সাফল্যের জন্য জরুরী।

সঠিক মনোভাব সকল কাজের উন্নতির সেরা পথ দেখিয়ে দেয়। অন্যের প্রতি মনোভাব সঠিক হলে নিজের মনের হতাশাও দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। দুশ্চিন্তার একটি প্রধান কারণ হলো অন্যের প্রতি ভুল মনোভাব। তাই অন্যদের ব্যাপারে সঠিক মনোভাবে রাখুন। ভালো কথা বলুন, আশাবাদী থাকুন, ভালো চিন্তা করুন। দেখবেন সমস্ত পৃথিবী আনন্দময় সমৃদ্ধি দিতে ভরে গেছে।

 কোন কাজ যদি মনের মত না হয় তবুও অপরের প্রতি আপনার মনোভাব সঠিক রাখুন। কেননা আপনার সঠিক মনোভাবই পরবর্তীতে মনোপুত কাজ করার সহায়ক হতে পারে। আর এটাই পিছিয়ে পড়েন সেজন্য অন্যকে দোষারোপ করবেন না। মনে রাখবেন হেরে যাওয়ার পর আপনার সঠিক চিন্তা-ভাবনা গুলি কিন্তু আপনার জিততে কত সময় লাগবে, কি কি গুণ আমাদের অভাব ছিল তা নির্দিষ্ট, এবং এর ফলে আপনি দ্রুত জয়ী হতে পারবেন।

কাজের প্রতি দৃঢ় প্রত্যায় মনোভাব সঠিক রাখুন

 কাজকে প্রাধান্য দিন অর্থ আপনি অনুগামী হবে। আপনার অর্থকে অনুসরণ করতে হবে না। আপনি কাজে সক্রিয় হয়ে উঠুন। আরো গভীরভাবে চিন্তা করুন। কোন বিষয় নিরুৎসহজনক মনে হলে সে ব্যাপারে আরো গভীরভাবে জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনি সীমাহীন কর্মদ্দীপনা ফিরে পাবেন।

আপনার সব কাজে হাসিতে, হাত মেলাতে, কথা বলায়, হাঁটাচলায় সবকিছুতে নতুন প্রাণসঞ্চার করুন। সজীব সক্রিয় ব্যবহার করুন। আপনার মনোভাবকে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক করে তুলুন। অন্যদের গুরুত্ব অনুভব করুন। বন্ধুদের গুরুত্ব দিলে তারা আপনার জন্য আরো বেশি পরিশ্রম করবে। মোটকথা মানুষের প্রতি সঠিক মনোভাব পোষণ করুন,  অন্যদের প্রতি সঠিক মন রাখলে তারা আপনাকে পছন্দ করবে সমর্থন করবে।

মন্তব্য

একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিন আপনার মানসিকতায় আপনাকে বৃহৎ সাফল্য নিয়ে এনে দেবে। আসলে যারা আমাদের ভালো মানুষ মনে করে তারাই আমাদের উপরে উঠে ঠেলে দেন। উপরে স্তরে তুলে ঠেলে দেন। যত বেশি বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেন তত বেশি উপরে উঠা সম্ভব না থাকবে। আর সবার প্রিয় হয়ে উঠলে আপনাকে ঠেলে উপরে তোলার সহজ হবে। সফল মানুষের পছন্দ করার একটা পরিকল্পনা মেনে চলেন।

আমাদের শেষ কথা

তাহলে বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা  দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে এই বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। পোস্টটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের আজকের আলোচনা আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে দৃষ্টিভঙ্গি এর অন্য কোন টপিক নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর মোটিভেশন আইডিটির সাথেই থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url