ইন্টারভিউ বোর্ডে যে দশটি বিষয় প্রকাশ করা যাবে না

আমেরিকান মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রায় ৩৬ বছর ধরে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত থেকে নানা ধরনের কর্মী নিয়োগ করে আসছেন। লিজের বয়স যখন ২০ বছর তখন তিনি একটি ছোট আমেরিকান কোম্পানী অনভিজ্ঞ সুপারভাইজার। একদিন তার বস তাকে নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য বোর্ড গঠন করতে বলেন। যদিও এ বিষয়ে তার কোন রকম প্রশিক্ষণ ছিল না। নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তিনি লক্ষ করেন অনেক নিয়োগকর্তারা অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কথা ইন্টারভিউ বোর্ডে বলে থাকেন। সেরকম দশটি সমস্যার কথা আজ বলা হলো যেগুলো ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রকাশ করা যাবে না

১. আর্থিক সমস্যা

চাকরির সঙ্গে আর্থিক ব্যাপার, বেতন এসব বিষয় জড়িত থাকবে। কিন্তু ইন্টারভিউ দিতে বসে নিজের আর্থিক অনটনের কথা প্রকাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আবার আর্থিক অনটন নেই শুধুমাত্র স্মার্ট জীবন যাপনের জন্য চাকরি করতে চাই এমন কথাও চাকরির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আপনার আর্থিক অবস্থা নিয়ে চাকরি দাদার কোন মাথা ব্যথা নেই তারা চায় একজন যোগ্য প্রার্থী।

২. ব্যক্তিগত সম্পর্ক

অনেক প্রার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা তাদের পারিবারিক অবস্থান জীবনসঙ্গীর অবস্থান নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে কথা বলতে ভালোবাসেন। কিংবা তার চাকরির খোঁজার পিছনে কি কারণ রয়েছে সেগুলো বিস্তারিত বলেন। যেমন কোন নারী প্রার্থী বলতে চান তার স্বামী বেকার ছিলেন, তিনি নিজে চাকরি করে স্বামীকে তার দুঃসময় সাপোর্ট দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ সে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় তিনি খুব আপসেট হয়ে পূর্বের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এসব বলে মাঝে মাঝে বোর্ড সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় ঠিক হই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাকরি দাতারা বিরক্ত বোধ করেন এবং ব্যক্তির ব্যক্তিগত কষ্টের কথা বলে নাটক করছেন বলে মনে করেন।

আরো পড়ুন : Career ক্যারিয়ার নির্বাচন করার আটটি উপায় ।

৩. কোন আইনি জটিলতা

বেশিরভাগ বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রার্থীর নামে কোন কেস আছে কিনা কিংবা পূর্ববর্তী চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো আইনি জটিলতা আছে কিনা এ বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে না। কাজেই আট বাড়িয়ে আইনি জটিলতা সংক্রান্ত বিষয় প্রকাশ করার বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

৪. কোন আঘাত বা অসুস্থতা জনিত সমস্যা

আপনি যদি অসুস্থতা বা আঘাত জনিত কারণে পূর্ববর্তী চাকরি ছেড়ে কিছুদিন বিরতি নেন তবে তা নতুন চাকরির ইন্টারভিউ এর সময় প্রকাশ করা যাবে না। পূর্বে দীর্ঘদিনের ছুটির কথা বললে নতুন চাকরিদাতা ভেবে নিতে পারে সে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বড় ধরনের ছুটি কাটাতে অভ্যস্ত। তাই সব সমস্যা ইন্টারভিউ বোর্ডে বলার দরকার নেই। চাকরিতে যোগদান এর পর অসুস্থতার জন্যই তো ছুটির কথা উপস্থাপন করার সময় সুযোগ অনেক পাবেন।

৫. পরিবার পরিকল্পনার কথা

সাধারণত দেখা যায় গর্ভবতী নারীদের অনেক কোম্পানি নিয়োগ দেয়া থেকে বিরত থাকে। এটা ভেবে যে নিয়োগের পরেই তো তিনি দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন অবকাশ যাপন করবেন। যদিও গর্ভবতী হওয়ার কারণে চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু অনেক নিয়োগকর্তাদের আইন সম্পর্কে অবগত নন। সেজন্য বাহ্যিকভাবে যদি বোঝা না যায় তবে নিজে থেকে আপনার শারীরিক অবস্থার কথা না বলাই ভালো। আবার আপনার ছোট বাচ্চা রয়েছে কিনা কিংবা আপনি কোন সন্তান দত্তক নিয়েছেন কিনা এসব বিষয়ে কোনো তথ্য না দেয়াই ভালো।

৬. আপনার ধর্মীয় অনুভূতি

কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নির্দিষ্ট ধর্মালম্বী ছাড়া অন্য কোন ধর্মের প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেসব ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। আপনি কোন ধর্মের সেটা আপনার নাম দেখে অথবা জীবন বৃত্তান্ত দেখেই কর্তৃপক্ষ বুঝে নেবে।

৭. রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

আপনি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী সেটা যেন আপনার কখনোই কথাতে প্রকাশ না হয়। সে ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে কারণ ধর্ম রাজনীতির দুটোই খুব সংবেদনশীল বিষয়।

৮. দায়বদ্ধতা বা অঙ্গীকারনামা

আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পোস্টের দায়িত্ব সমূহ কি কি তা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা থাকে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোন কাজে আপনি পারদর্শী কিনা এসব নিয়োগকর্তা না চাইলে নিজ থেকে দেয়ার দরকার নেই। অন্যদিকে আপনি কি কি কাজে আগ্রহী নন সেটা ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রকাশ করা কোনো প্রয়োজন নেই।

৯. পূর্বের চাকরির বস সম্বন্ধে অভিযোগ

আপনার ইন্টারভিউ বোর্ডের পরিবেশ যতই বন্ধুত্বপূর্ণ হোক না কেন কোন কারণেই সেখানে আপনার পূর্বের  বসের সম্বন্ধে কোন সমালোচনা করবেন না। হতে পারে আপনার আগের বযস আপনার মূল্যায়ন করেনি কিংবা তিনি অসৎ  চরিত্র যেগুলো নিয়ে আপনি বহু বন্ধু মহলে হাসি তামাশা করেন। সেগুলো ইন্টারভিউ বোর্ডে উল্লেখ করা দরকার নেই।

১০. তোতলানো থেকে নিজেকে বিরত রাখা

অনেক প্রার্থী ইন্টারভিউ এর আগের রাতে নীরব কোন স্থানে বসে কল্পনায় ভাইভা বোর্ড চিত্র এঁকে সেখানে কিভাবে প্রকাশ প্রবেশ করবেন কিভাবে সম্বোধন করবেন প্রশ্নকর্তা কি কি প্রশ্ন করতে পারে এই নিয়ে বিচলিত হন। এ বিষয়ে নিজ বায়ানের পরামর্শ হলো আগের রাতে খোলা বাতাসে কিছুটা সময় অবস্থান করতে হবে হাটাহাটি করতে হবে। মনকে স্বতেজ রাখতে হবে উত্তেজিত করা যাবে না। কোম্পানির সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুশীলন করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশ করলে অযথা তোতলানো হবে না এবং আপনি স্মার্ট ভাবে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন : চাকুরী খুজছেন? চাকরি পেতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url