লাউ গাছের পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
লাউ গাছের পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আজকে আমি আপনার সাথে আলোচনা করব লাউ গাছের গোপন পাঁচটি পরিচর্যার বিষয়ে। লাউ গাছে যদি এই পাঁচটি পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে আপনার লাউ গাছ থেকে লাউ কোনদিন শেষ হবে না। তবে জমিতে কিংবা ছাদ বাগানে যেখানেই লাউ চাষ করুন না কেন এই পাঁচটি পরিচর্যা অবশ্যই অবশ্যই করবেন।
পোস্ট সূচিপত্র: লাউ গাছের পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- জমি তৈরি কিংবা মাটির তৈরি।
- জাত নির্বাচন চারা তৈরি এবং চারা রোপন।
- পানি শেচ ও সার প্রয়োগ
- 2জি 3জি কাটিং বিভিন্ন ভিটামিন স্প্রে।
জমি তৈরি কিংবা মাটির তৈরি।
বাণিজ্যিক ভাবে লাউ চাষ করলে ভালোভাবে জমি তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং ছাদবাগানের ক্ষেত্রে মাটি প্রস্তুতকরন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ প্রাথমিক অবস্থায় আপনার লাউ গাছ কতটা তরতাজা অর্থাৎ মোটা এবং কতটা ফুল ফল আসবে তা নির্ভর করবে আপনার মাটি তৈরির ওপর। লাগাতার গোড়া মজবুত করার ক্ষেত্রে মাটি তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ছাদবাগান বা টবের ক্ষেত্রে বড় আকৃতির টব নির্বাচন করতে হবে।
কারণ লাউ গাছ হ্যাবি ফিডার, যার ফলে অধিক বেশি পরিমাণে মাটি এবং খাবার প্রয়োজন হয়। মাটি তৈরি কমন বিষয় হল দোআঁশ মাটি কিংবা বেলে দোআঁশ মাটির সঙ্গে আপনাকে 30-40 শতাংশ পর্যন্ত শুকনো গোবর বা কম্পোস্ট সার মিস করতে হবে। মাটি যাতে টবের ভিতরের চাপা না হয়ে যায় সে জন্য ধানে চিটা কিংবা কোকো পিট ব্যবহার করতে পারেন। এটি 10-20 শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
সাধারণত একটি হাফ ড্রামে একশ থেকে একশ 20 কেজি মাটির প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ সিমেন্টের বস্তা দিয়ে প্রায় তিন বস্তা মাটি লাগে। রাসায়নিক সারহিসাবে আপনারা একশ গ্রাম টিএসপি একশ গ্রাম mop একশ গ্রাম ইউরিয়া সার, 50 থেকে 60 গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল, ঘোড়া 60 থেকে 70 গ্রাম পরিমাণ জিপসাম। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম যুক্ত সার ব্যবহার করবেন। অবশ্যই আপনাকে দানাদার বিষ মেশাতে হবে। এজন্য আপনারা প্রায় 30 গ্রাম পরিমাণ কার্বন গ্রুপের দানাদার বিষ প্রয়োগ করবেন। আপনি ছোট পাত্রে বা অল্প মাটিতে লাউ গাছ লাগিয়ে কখনই ভালো ফলাফল পাবেন না।
জিঙ্ক এবং বোরন পাঁচ গ্রাম পরিমাণ করে দিতে পারেন। তবে না দিলে সমস্যা নেই। কারণ এটি স্প্রে করে ব্যবহার করা যায়। মাদা করে লাউ চাষ করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সেই সাথে সাথে খরচও কম হয়। প্রতিমাদার জন্য 30 থেকে 40 কেজি গোবর সার,১০০ গ্রাম টিএসপি ১০০ গ্রাম এমওপি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং 60 গ্রাম পরিমাণ জিপসাম সার পাঁচ গ্রাম বোরন, পাঁচ গ্রাম জিঙ্ক ৩ গ্রাম দানা বিষ সবকিছু একসঙ্গে মিশিয়ে 15 দিন রেখে দেবেন।
আরো পড়ুনঃ টমেটো গাছে দ্বিগুণ ফলন হবে এই সার দিলে
জাত নির্বাচন চারা তৈরি এবং চারা রোপন।
লাউ গাছের ভালো ফলনের পূর্ব শর্ত ভাল মানের বীজ এবং ভালো জাত। বাংলাদেশের বেশ কিছু পরীক্ষিত জাত রয়েছে। এর মধ্যে ময়না, সুলতান ডায়না। আপনার এলাকায় লম্বা না গোল লাউ বেশি চলে সেটি নির্বাচন করে জাত সিলেকশন করবেন। আপনার বিশ্বস্ত কোম্পানির জাত ও নির্বাচন করতে পারেন। চারা তৈরির ক্ষেত্রে প্যাকেট থেকে বীজ বের করে 1 ঘণ্টা করে রেখে দেবেন। এরপর 2 ঘন্টা ছায়ায় রেখে বীজ ঠান্ডা করে নেবেন।
12 থেকে 24 ঘণ্টা পর্যন্ত ড্রামে বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। এতে করে যেমন খুব দ্রুত টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে অথবা সুতি কাপড়ে পুঁটলি করে রেখে দিলে দেখবেন দুই দিনের মধ্যে চারাই অংকুর এসে যাবে। চারার বয়স যখন 15-20 দিন হবে তখন আপনি মূল জমিতে রোপণ করতে পারেন কিংবা টবে রোপন করবেন। অর্থাৎ চারার যখন দুই থেকে তিনটি পাতা হবে তখন আপনারা রোপন করবেন। প্রতি মাদায় তিনটি করে চারা রাখতে পারেন।
পানি শেচ ও সার প্রয়োগ
চারা রোপনের 20-25 দিন পরে আপনাকে পুনরায় সার প্রয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনারা ইউরিয়া সার বাদ দিবেন। চাইলে আপনারা ডিএপি ব্যবসার ব্যবহার করতে পারেন। এর সাথে যোগ করবেন এমন ও পি সার এবং অবশ্যই জিপসাম সার প্রয়োগ করবেন। গাছের চারপাশে রিং করে প্রতি মাদার জন্য 50 গ্রাম করে আপনারা সার প্রয়োগ করবেন।
যেহেতু গাছ অবস্থায় রয়েছে তাই খাবার কম লাগবে এবং আপনাকে নিয়মিত গাছের শেচ প্রদান করতে হবে। গাছের কন্ডিশনের ওপর গাছের গোড়া সব সময় স্যাতস্যাতে রাখা যাবে না। এতে গাছের বৃদ্ধির ব্যঘাত ঘটায়। যদি আপনার গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কম হয় সেক্ষেত্রে আপনি এনপিএস দুই গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করবেন। দেখবেন গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
2জি 3জি কাটিং বিভিন্ন ভিটামিন স্প্রে।
এটা আপনি তখনি করবেন আপনার লাউ গাছে যখন আট থেকে 12 পাতা হবে। অর্থাৎ গাছের বয়স তখন 30-35 দিন হবে। সে সময় দেখবেন আপনার গাছে দু একটি পুরুষ ফুল দেখা যাবে। যেহেতু লাউ গাছের মেন শাখা সাত মূল শাখায় কোনও প্রকার স্ত্রী ফুল হয় না তাই আপনাকে স্ত্রী ফুল আনার জন্য 2G কাটিং করতে হবে। এতে আপনি দেখবেন আপনার গাছে বেশ ভালো রকমের স্ত্রী ফুল আসবে। তবে থ্রিজি কাটিং করলে আপনার গাছের সর্বোচ্চ ফলন পাবেন।
আপনার লাউ গাছের স্ত্রী ফুল তখনই আসবে যখন আপনার লাউ গাছে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার প্রদান করবেন। স্ত্রী ফুল ফলে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন সময় ভিটামিন স্প্রে করতে হবে। যেমন ফ্লোরা, শোভন এবং চিন। এই তিনটি একসঙ্গে স্প্রে করে দেবেন। ছোট ফলগুলো বড় ফলে তখনই রূপান্তর হবে যখন আপনার গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকবে। এই ফলগুলো তখনই আপনার বর ফলে সেট হবে যখন আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকবে।
নিয়মিত জমি প্রদর্শন এবং রোগ বালাই চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ
লাউ গাছ নিয়মিত পরিদর্শন এবং লাউ গাছের রোগবালাই চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লাউ চাষ করলে আপনাকে লাউ গাছের রোগবালাই সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। লাউ গাছে মাছি পোকার আক্রমণ খুব বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য পোকার আক্রমণ হয়। এজন্য এমিটা গ্রুপ এবং সাইপার গ্রুপের কীটনাশক 7-10 দিন পরপর নিয়মিত ব্যবহার করবেন।
ছত্রাকনাশক হিসাবে আপনারা ম্যানেজার রিদম গোল্ড কে এবং কার্বন গ্রুপের যে কোনও একটি আপনার জমিতে এক সপ্তাহ পরপর স্প্রে করবেন। তাহলে আপনার লাউ গাছে তেমন কোনও সমস্যা আপনি লক্ষ্য করবেন না। লাউ গাছ অনেক সতেজ এবং শক্তিশালী দেখাবে। আপনার লাউ গাছ সতেজ এবং শক্তিশালী থাকলে আপনি প্রচুর পরিমাণে লাউ পাবেন।
আরো পড়ুনঃ সিম গাছের দ্বিগুণ ফলন হবে দেখে নিন গোপন টেকনিক
মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু উপরোক্ত পরিচর্যা গুলো যদি লাউ গাছে করেন তবে আপনি লাউ গাছে আশানুরূপ ফল পাবেন।এবং লাউ চাষ করে অত্যন্ত লাভবান হতে পারবেন। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এরকম কৃষি বিষয়ক তথ্য এবং বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক চাষবাসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের মোটিভেশন আইটির সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url