কম বয়সে চুল সাদা হওয়ার কারণ ও সমাধানের উপায়
কম বয়সে চুল সাদা হওয়ার কারণ ও সমাধানের উপায়
চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যাটি বড়ই অদ্ভুত। কারণ একই সময়ে ব্যক্তিকেই যুবক মনে হয় আবার দুই শিশুর বাবা মা ও মনে হয়। আজকাল যেহেতু লোকদের তাদের looks দ্বারা ক্যারেক্টার জাজ করা হয়। সেই হিসেবে এই ব্যাপারটি চুল পেকে যাওয়া এবং লোকেদের কাছে এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। প্রশ্ন হল, কম বয়সে কেন চুল সাদা হয়ে যায় এবং চুল পেকে যাওয়াকে বন্ধ করব বা কী ভাবে? আজকে আমরা এই ব্যাপারটি সম্পর্কে আলোচনা করব। তো পুরো পোস্টটি অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্র: চুল কালো রাখার ঘরোয়া উপায়
- চুল কিভাবে তৈরি হয়
- চুল কেন সাদা হয়
- দ্রুত চুল পেকে যাওয়ার কারণ
- চুল সাদা হয়ে যাওয়া বন্ধে করণীয়
- মন্তব্য
চুল কিভাবে তৈরি হয়
চলুন সবথেকে প্রথমে আমরা জানি যে চুল কীভাবে এবং কীসের দ্বারা তৈরি হয় চুলের বহির্ভাগ তৈরী হয়। একটি প্রোটিন দ্বারা, যার নাম হল কেরাটিন এবং চুলের অন্তর্ভাগ তৈরী হয় মেলানিন নামে প্রোটিন দ্বারা। এই মেলানিনের কারণে বিভিন্ন মানুষের গায়ের রঙ বিভিন্ন হয়। চুলে মেলানিন থাকে। তার দু টি ভাগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ,যদি আপনার চুল ইউমেলানিন বেশি থাকে তাহলে আপনার চুলের রঙ হয়, কালো হবে অথবা বাদামি হবে। কিন্তু যদি আপনার চুলে ফিওমেলানিন বেশি থাকে তাহলে আপনার চুলের রঙ রেড হবে অথবা ব্লন্ড হবে।
চুল কেন সাদা হয়?
তো চলুন এ বার আমরা জানি যে কেন চুল সাদা হয়ে যায়। যেমনটা আপনি জানেন যে আমাদের স্কিনে অনেকগুলি লেয়ার থাকে। যে জায়গা থেকে চুল গজায় সেখানে বহু ধরনের সেল থাকে। এই সেলগুলিকে মেলানোসাইটস বলা হয়। আর এই মেলানোসাইট মেলানিন তৈরি করে। মেলানিন তৈরী করার সময় এই মেলানোসাইট সেলগুলির মধ্যে একটি জটিল প্রক্রিয়া চলে। কিন্তু যদি সোজা ভাষায় বলি তো টাইরোসিনেজ নামের একটি এনজাইম এই মেলানিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই টাইরোসিনের হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরি করে। যাতে সেলগুলি ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে।
কিন্তু যখনই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড খুব বেশি পরিমাণে তৈরি হতে শুরু করে তখনই টাইরোসিনেজ কে ড্যামেজ করতে শুরু করে দেয়। যার কারণে মেলানিন প্রোডাকশন কমে যায়।আর এই কারণের জন্যই আপনার চুল পাকতে শুরু করে। এই প্রব্লেম টা কি ঠিক করার জন্য শরীর নিজে থেকেই একটি এনজাইম তৈরি করে, যার নাম হল ক্যাটালিস্ট। এই ক্যাটালিস্ট এক্সট্রা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কে মারার কাজ করে যান। এই ক্যাটালিস্ট এক্সট্রা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কে মারার কাজ করে যাতে মেলানিনের প্রোডাকশন ঠিক থাকে এবং আপনার চুল ঘন কালো থাকে।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পাঁচটি উপায়ে চোখের জ্যোতি বানান ঈগলের মত
দ্রুত চুল পেকে যাওয়ার কারণ
এবার আমরা জানব যে কোন কোন কারণের জন্য চুল পেকে যাওয়ার গতি বেড়ে যায়।
১. জেনেটিক্স
প্রথম কারণ হল জেনেটিক্স। জেনেটিক্স একটি জিন আছে যার নাম হল আইআরএফ ওর, যা চুলকে সাদা করে দেয় সেই জিনটিকে আপনি আপনার মায়ের পরিবার থেকে পান। যদি আপনার মা দাদু বা দিদার চুল কম বয়সেই সাদা হয়েছে তাহলে আপনারও কম বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
২. স্মোকিংও তেল যুক্ত খাবার
দ্বিতীয় কারণ হল স্মোকিং এবং বেশি তেলযুক্ত খাবার। স্মোকিং এবং বেশি তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরের ফ্রি রেডিক্যালস বাড়তে শুরু করে। এই ফ্রি রেডিকেলস ডিএনএ ড্যামেজ করে দেয়। যার কারণে মেলানোসাইট স্টেম সেল ঠিক মতো নিজের কাজ করতে পারে না।
৩. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এর পরিমান বেশি হয়ে যাওয়া
তৃতীয় কারণ হল, যখন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এর মাত্রা বেশি হয়ে যায়। তখনই নিজের একটি মেলানিনের পরিমাণ কমে যায়। একটি রিসার্চ অনুযায়ী স্ক্যাল্প মাথায় খুলির উপরে অবস্থিত ত্বকে ইনফেকশন হয়ে গেলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বেশি প্রোডিউস হতে শুরু করে। যাতে ইনফেকশন এর প্রান্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া মারা যায়।
৪. শরীরে এমাইনো এসিডের পরিমাণ বেশি হওয়া
চতুর্থ কারণ হল, শরীরে হোম ও সৃষ্টি নামের অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বেশি মাত্রায় রিলিজ হতে শুরু করে।
৫. এনজাইম
পঞ্চম কারণ হল শরীরে জানতাম অক্সিডেন্ট নামের একটি এনজাইম বেশি হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বেশি মাত্রায় রিলিজ হতে শুরু করে।এবং ষষ্ঠ কারণ হল এই যে, যদি শরীরে ক্যালোরি কম রিলিজ হয় তখন জেনপার অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যার কারণে মেলানিন কম উৎপন্ন হয়। যদি আপনি দীর্ঘসময় ধরে প্রতিদিন একটি জায়গায় বসে থাকেন বা দীর্ঘ সময় ধরে স্ট্রেস থাকেন তখন শরীরে ক্যালসিয়ামের উৎপাদন কমে যায়।
চুল সাদা হয়ে যাওয়া বন্ধে করণীয়
তো প্রশ্ন হল চুল পেকে যাওয়ার এই প্রব্লেম কে বন্ধ করব কী ভাবে? তো সবথেকে প্রথমে আপনাকে স্মোকিং ছাড়তে হবে। বেশি তেলযুক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিদিন একই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকা বন্ধ করতে হবে। যতটা সম্ভব টেনশন থেকে দূরে থাকুন। আপনি প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের কার্ডিওভ্যাসকুলার এক্সারসাইজ করতে পারেন। যেমন রানিং, সুইমিং, পুল শপস।
এগুলি করলে আপনার শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পাবে। প্রতিদিন শাকসব্জি খান। কারণ শাক সবজিতে থাকে ফেনোলিক অ্যাসিড যা থেকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শাক সবজিতে বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট থাকে, যা ফ্রি রাডিক্যালস কে ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও কিছু রিসার্চে পাওয়া গেছে যে মাল্টিভিটামিনের দ্বারাও, চুল পাকার এবং চুল ঝরার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ১ ত্বকের জেল্লা চটজলদি ফিরে পাওয়ার উপায়
মন্তব্য
অল্প বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া এবং চুল ঝরে পড়া আমাদের একটি কমন সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই উপরুক্ত নিয়ম কানুন গুলো মেনে চলতে হবে। তাহলে আশা করি আমরা এ সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারব।
শেষের কথা
প্রিয় পাঠক বন্ধু, পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এরকম আরো হেল্পফুল পোস্ট পেতে আমাদের মোটিভেশন আইটির সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url