তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত জেনে নিন
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত জেনে নিন
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই স্বাগতম। প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আশা করি আল্লাহতালার অশেষ রহমতে আপনারা ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে। তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয় তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এবং তার জন্য নামাজের ফজিলত সম্পর্কে এই পোষ্টের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করব। সুতরাং পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ পড়বেন।
পোস্ট সূচীপত্র: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
- ভূমিকা
- তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
- তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সময়
- তাহাজ্জুদের নামাজের রাকাত
- তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ম
- ছোট্ট দুটি আমল সম্পর্কে জেনে নিন
- মন্তব্য
ভূমিকা: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, আর রাতে কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। তোমার রব তোমাকে সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠা করবেন। সূরা বনী ইসরাইলের 79 নম্বর আয়াতে আমাদের রব আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন। আমরা যদি সম্ভব হয় রাতে ঘুম থেকে উঠে রাত তিনটা থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত এই সময়টিতে অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সময় উঠে আমরা এবাদত করার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুনঃ পুলসিরাত কাকে বলে? পুলসিরাতে কি প্রশ্ন করা হয়?
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি নফল ইবাদত। মর্যাদা এবং ফজিলতের দিক থেকে ফরজ নামাজের পরেই তাহাজ্জুদের নামাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নবীজি(স) বলেছেন ফরজ নামাজের পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে স্বয়ং নিজেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে বলেছেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা রাতের শেষ অংশে আসমানে সবচেয়ে নিম্নতম স্থানে নেমে আসেন এবং আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বলেন, তোমরা চাও আমি তোমাদের দিতে এসেছি। তোমরা আমার কাছে যা চাইবে আমি তোমাদের তাই দেব।মহান আল্লাহ রাতের নামাজের গুরুত্ব কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ هِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّ اَقۡوَمُ قِیۡلًا
নিশ্চয়ই রাতের বেলার জেগে ওঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি উপযোগী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৬)
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا - وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا
আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রব-এর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৪)
তাহাজুল হলো রাতের নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ নামাজের পরে তাহাজ্জুদ নামাজকে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই মুমিন মুসলমানদের কাছে তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সময়
তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শুরু হয় এশারের ফরজ নামাজের পর থেকে। অর্থাৎ এশারের ফরজ নামাজের পর থেকে ফজরের ফরজ নামাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত
ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে তাহাজ্জুদের নামাজের রাকাত নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে দুই রাকাত সর্বনিম্ন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে হয় এবং দুই থেকে আট রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে হয়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ২ রাকাত কখনো ৪ রাকাত আবার কখনো ৮ রাকাত আবার কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন।
তবে এশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজর নামাজের আগ পর্যন্ত দুই রাকাত নামাজ পড়লে তাহাজ্জুদের নামাজ হয়ে যাবে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।
তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আপনি যেকোনো সুরা পড়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারেন। তাহাজ্জুদের নামাজ সাধারণ ফরজ নামাজের মতই আদায় করতে হয়। সূরা ফাতিহার সাথে অন্যান্য একটি সূরা দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা যায়। তবে লম্বা কেরাতের সহীত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উত্তম। আপনার যদি বড় সূরা মুখস্ত থাকে তবে অবশ্যই বড় সূরা দিয়ে বেশি বেশি আয়াত দিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া উত্তম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রাতের শহীদ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন।
আরো পড়ুনঃ নারীদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ
ছোট্ট দুইটি আমল সম্পর্কে জেনে নিন
আপনারা যদি তাহাজ্জুদের সময় উঠতে না পারেন তাহলে এশার নামাজের পরে আপনি তাহাজ্জুদের নিয়তে অন্তত দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পর এই আমলটি করবেন। আমরা সকলেই চাই আমাদের পরিবার সংসারে যাতে করে একটু রিজিকে বরকত আসে। যে আয় রোজগার করি এখানে যেন আল্লাহ তাআলার রহমত দেয়। অর্থাৎ অনেকদিনই ভাইবোন দেখবেন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হওয়ার পরেও তাদের পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
অসুখ-বিসুখ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লেগেই থাকে। আবার অনেকের দেখবেন বিশেষ করে ইমামের মোয়াজ্জেম অথবা ইমাম সাহেব মসজিদের ইমাম সাহেব যারা আছেন সামান্য কিছু পয়সায় তারা কিন্তু খুব সুন্দর ভাবে তাদের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামীন চালিয়ে নেন। শরীফের হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেকফার করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।
তাই আমরা চলতে ফিরতে উঠতে-বসতে সব সময় ইস্তেগফারের আঙুলটিকে জারি রাখবো এবং পরিবার সংসারে যাতে করে সচ্ছলতা আসে রিজিকে বরকত আসে তার জন্য একটি ছোট দোয়ার আমল নিয়ম মেনে করবো। আমি যে নিয়মটি বললাম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্তত এশার নামাজের পরে যদি সম্ভব হয় দুই
পরে যদি সম্ভব হয় দুই রাকাত নামাজ আদায় করার পরে অন্তত কয়েক বার দরুদ পাঠ করে নিবেন। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন... ছোট দুরুদ শরীফ 11 বার পড়বেন। মনোযোগ সহকারে নামায শেষ করার পরে গুণে গুণে পড়বেন 11 বার। পড়ার পরে আপনি অন্তত 11 বার আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়াটি পড়বেন, অন্তত তিনবার পাঠ করবেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে জানা যায়, যে প্রিয় নবী বিশ্বনবী (স) এই দোয়াটি পাঠ করতেন। এখানে সামর্থ্য বা সচ্ছলতা দেওয়া হয়েছে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ হাত দেওয়া ঠিক হচ্ছে আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াক্ত কা ওয়াফা হলে অবশ্যই করবেন। দ্বীনি বোনেরা যদি সম্ভব হয় তাহাজ্জুদ নামাজের সময় উঠে পড়ার চেষ্টা করবেন। যদি না পারেন তাহলে সমস্ত নামাজের পরে স্থিরভাবে অন্তত দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন।
তাহাজ্জুদের নিয়তে তারপরে আপনি দুরুদ শরীফ ইস্তেগফার পড়ার পরে এই দোয়াটি অন্তত তিনবার পাঠ করবেন। দেখে দেখে পড়তে পারবেন কোন সমস্যা নেই। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াক্ত কা ওয়াফা আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা কিভাবে তিনবার অন্তত পাঠ করবেন। এই দোয়াটি সহি হাদিস অর্থাৎ সহিঃ মুসলিম শরীফের একটি সহি হাদিসের দোয়া।
হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি। আপনারা যারা বিচক্ষণ তারা বুঝতে পারছেন যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। অর্থাৎ এই একটি দোয়ার মধ্যে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে হেদায়েত, ভয়, তাকওয়া, সতীত্ব পবিত্রতা কিংবা সম্পদ বা সামর্থ্য সচ্ছলতা সবকিছু আল্লাহতালার কাছে কামনা করছি।
এই ভাবে যদি আপনারা নিয়ম মেনে আমলটি করেন অবশ্যই দোয়া টি পড়ার আগে পরে দরুদ পাঠ করে নিবেন। তার পরে যদি আল্লাহ তাআলার কাছে আপনি দুই হাত তুলে সংক্ষেপে দোয়া করেন কান্নাকাটি করেন এবং আপনার পরিবার সংসারে রিজিকে বরকত চান ইনশাল্লাহ আল্লাহতালা আপনার সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিবেন, সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন। আরেকটি ছোট আমল আপনাদেরকে করতে বলব।
পরিবারের সকলকে শিখিয়ে দিবেন যেন সারা দিনে অন্তত প্রত্যেকেই 100 বার করে একটি কোর্স কমপ্লিট করার মত যে দিনে 100 বার আস্তাগফিরুল্লা পড়েছেন কিনা। প্রত্যেক নামাজে যখন আমরা আদায় করি প্রত্যেক নামাযের পরে আমরা ইচ্ছা করলে 10,15 বার এমনিতেই আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে পারি। নবী (স.) এর সুন্নত নামায শেষে সালাম ফিরানোর পর অন্তত তিনবার এবং কাজের ফাঁকে আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ বেশি বেশি পড়তে পারি।
মন্তব্য: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত জেনে নিন
শুধুমাত্র নিয়ম অনুযায়ী আপনাদেরকে আমলগুলো করতে বলছি। যাদের নিয়ত সৎ নিয়ম মেনে আমলগুলো করছেন তাদের নিয়তি সঠিক থাকে তাদের আল্লাহতালা ফল দান করে থাকবেন। অনুরোধ করছি আপনারাও নিয়ত করে ফেলুন। মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন আমীন।
আরো পড়ুনঃ শীতকালের তিনটি আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
শেষের কথা
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাকে জানাতে চেষ্টা করেছি তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে। পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা প্রতিদিন ইসলামিক বিভিন্ন ধরনের পোস্ট শেয়ার করে থাকি। নিয়মিত ইসলামিক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url