রোজার নিয়ত। রোজা ভাঙ্গার ১৮ টি কারণ জেনে নিন
রোজার নিয়ত। রোজা ভাঙ্গার ১৮ টি কারণ জেনে নিন
সুপ্রিয় পাঠাও বন্ধু আসসালামু আলাইকুম মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আজ এই পোস্টটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পোস্টে আজকে আলোচনা করা হবে রোজার নিয়ত রোজা ভঙ্গের কারণ এবং রোজার ফজিলত সম্পর্কে। তাই প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা এই পোস্টটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পোস্ট সূচীপত্র: রোজার নিয়ত, রোজা ভাঙ্গার ১৮ টি কারণ জেনে নিন
- ভূমিকা
- রোজা বা সিয়াম কী?
- রমজান মাসের কিছু নিয়ত
- রোজা বা সিয়াম ভঙ্গের ১৮ টি কারণ
- মন্তব্য
ভূমিকা: রোজার নিয়ত, রোজা ভঙ্গের ১৮ টি কারণ জেনে নিন
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। সমস্ত গুনাহ মাপের মাস হল রমজান মাস। এ রমজান মাসেই পবিত্র কুরআন মাজীদ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাযিল হয়েছিল। এ রমজান মাসেই কোন একটি রাতে লাইলাতুল কদরের রাত পাওয়া যাবে। যে রাত্রি হাজার হাজার রাতের থেকেও উত্তম রাত। এ রাত যদি কেউ সঠিকভাবে পালন করতে পারে তাহলে পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ খাতা মাফ হয়ে সেই আবার ছোট্ট শিশু ন্যায় গুনাহহীন পাপহীন ব্যক্তিতে পরিণত হবে।
এ রমজান মাসের আল্লাহ তাআলার আদেশে ৩০ টি রোজা পালন করতে হয়। কিন্তু আমাদের জানা অজানার কারণে আমাদের রোজা গুলো ভঙ্গ হয়ে যায় যা আমরা বুঝতে পারি না। প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আজ আমি আলোচনা করব রোজার নিয়ত রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে। যেগুলো আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরী। তো চলুন শুরু করা যাক।
আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত জেনে নিন
রোজা বা সিয়াম কী?
রোজার আরবি শব্দ সিয়াম। সিয়াম এর আবিধানিক অর্থ বিরত থাকা। অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং সমস্ত রকম পাপ কাজ থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে সিয়াম।
রমজান মাসের কিছু নিয়ত
রমজান মাসে রোজা অর্থাৎ সিয়াম পালনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। এর জন্য বিশেষ কিছু দোয়া ও নিয়ত রয়েছে। তো চলুন দেরি না করে জেনে নেই সেহরি ইফতার তারাবিহ রোজার নিয়ত ও দোয়া সমূহ।
রোজার মাসের সেহরির নিয়ত
সেহেরির আলাদা কোন নিয়ত বা দোয়া নেই। রোজা বা সিয়াম পালন করার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমস্ত রকম পানাহার এবং সমস্ত রকম পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা হচ্ছে সেহেরির উদ্দেশ্য। সেহরির উদ্দেশ্য হচ্ছে সিয়াম পালন করা। তাই সেহেরী খাওয়ার সময় কিছু দোয়া পড়ে নেওয়া সুন্নত।
খাবারের আগের দোয়া
খাওয়া শুরু করার সময় রাসূল (স) এই দোয়া পড়তেন,
بسم الله وعلى بركةالله بعالى
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারকাতিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ তায়ালার নামে খাবার খাওয়া শুরু করছি এবং আল্লাহ তায়ালার বরকত প্রার্থনা করছি। (সাআলাবী)।
রোজার নিয়ত
রোজা অর্থাৎ সিয়ামের নির্দিষ্ট কোন নিয়ত নেই। তবে বাংলাদেশে সিয়ামের একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ রয়েছে যা মুখে মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটা কোন হাদিস অপেক্ষায় কিতাবে পাওয়া যায়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন।
রোজার বা সিয়ামের আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
রোজার বা সিয়ামের নিয়ত বাংলায়
ফরজ বা নফল যে রোজা হোক না কেন নিয়ত আরবিতে হওয়া জরুরী নয় যেকোনো ভাষায় আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা দেখে একটা নিয়ত করায় যথেষ্ট। নিয়ত এভাবে করা যায়-হে আল্লাহ আমি তোমাকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য রোজা বা সিয়াম পালন করার নিয়ত করলাম।
(জাওয়াহিরুল ফিকাহ: খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৭৮)
রোজা বা সিয়াম ভঙ্গের ১৮ টি কারণ
রোজা বা সিয়াম পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ। যেটি পালন করা আবশ্যকীয়। মহান আল্লাহ তায়ালা এই রমজান মাসে আমাদের রোজা বা সিয়াম পালন করার আদেশ করেছেন। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজটি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের সতর্ক হতে হয়। এমন অনেক কারণ আছে যে কারণের জন্য আমাদের রোজা ভেঙ্গে যায়।
প্রথমত সাধারণত তিনটি কারণে রোজা ভেঙে যায়, সেই কারণগুলো হলো: খাওয়া পান করা এবং স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক। তবে এই কারণগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে। যে কারণগুলো রোজা ভেঙে যাওয়ার জন্য প্রত্যাক্ষ্যভাবে দায়ী। যে বিষয়গুলো প্রত্যেক দ্বীনি ভাই ও বোনদের জেনে রাখা জরুরী। নিম্নে সংক্ষেপে সে কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১. রোজা বা সিয়াম অবস্থায় ভুলে কিছু পান করার পর অনেকেই মনে করে রোজা ভেঙে গেছে। এই ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া শুরু করে। এই ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া শুরু করলে রোজা ভেঙে যায়।কিন্তু এটি ভুল ধারণা। অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুলে কোন কিছু খেলে রোজা ভাঙবে না। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
২. বিড়ি সিগারেট বা হুক্কা সেবন করা রোজা বা সিয়াম ভেঙে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
৩. রোজা অবস্থায় চাল আটা বা লবণ খেলে রোজা ভেঙে যায়।(ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯)
৪. রোজা অবস্থায় কোন রোজাদার ব্যক্তি যদি যে জিনিসগুলো খাওয়া হয় না সেই জিনিসগুলো খেয়ে নেয় তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে। যেমন কার্ড কাগজ পাথর কয়লা লোহা মাটি ইত্যাদি খাওয়া রোজা ভাঙার একটি কারণ। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
৫. খরকুটো কাগজ তৃণলতা কাদামাটি কংকর তুলা সুতা পাথর গিলে ফেলা। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
৬. নিজের কফ বা থুতু হাতে নিয়ে আবার খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়।(ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
৭. ভুলে স্ত্রী সঙ্গমের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার যদি স্ত্রী সঙ্গম করে, তাহলে তার রোজা ভেঙে যায়। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
৮. নাকের ছিদ্র দিয়ে বা কানের ছিদ্র দিয়ে তরল ও সুর দেওয়া রোজা বা সিয়াম ভাঙ্গার অন্যতম কারণ (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭)
৯. যদি রোজাদার ব্যক্তির দাঁত দিয়ে রক্ত বের হয় এবং তা যদি চেয়েও পরিমাণে বেশি হয় এবং সে রক্তকণ্ঠ নারীতে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭)
১০. সেহরি খাওয়ার পর মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ওই অবস্থাতেই সকালে ঘুম থেকে ওঠা (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২)
১১. রোজা ভাঙ্গার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে হস্তমৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খণ্ড : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭)
১২. রোজা বাস সিয়াম রাখা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে বা নাকের পানি দিতে গিয়ে কন্ঠনালীতে পানি চলে যাওয়া। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯)
১৩. কাউকে জোর করে পানাহার করানো (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
১৪. রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সেহরি খেলে রোজা হয় না। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
১৫. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে বা বমি আসার পর তা যদি গিলে ফেলে তাহলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭)
১৬. সূর্যাস্ত হয়ে গেছে বা ইফতারের টাইম হয়ে গেছে এ ভেবে দিনেই ইফতারি করলে রোজা ভেঙে যায়। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)
১৭. কেউ যদি রাত মনে করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয় তারপর সুবহে সাদিকের কথা বুঝতে পেরে স্ত্রী সহবাস ত্যাগ করে। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৪)
১৮. বৃষ্টি বা বরফের টুকরা খাদ্যনালির ভেতরে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
আরো পড়ুনঃ কোন সময় দোয়া কবুল হয়, দোয়া কবুলের ১৭টি বিশেষ সময়
মন্তব্য: রোজার নিয়ত, রোজা ভাঙ্গার ১৮ টি কারণ জেনে নিন
সুপ্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা রোজার নিয়ত এবং রোজা ভাঙ্গার কারণ গুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন রোজা ভাঙ্গার কারণ গুলো কি কি। আমরা অবশ্যই সঠিকভাবে রোজা পালন করব। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে রোজা পালন করার তৌফিক দান করুন আমীন।
শেষের কথা
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা নিয়মিত আমাদের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি ইসলামিক বিষয় নিয়ে। ইসলামিক আরও বিভিন্ন ধরনের বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url