যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ-যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ-যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের সাথে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব রোজা ভাঙ্গা জায়েজ, কোন কোন বিষয়ে রোজা ভাঙা জায়েজ আছে এবং যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না সেসব কারণগুলো সম্পর্কে। সম্পূর্ণ বিস্তারিত জানতে পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্র: যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ-যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
- ভূমিকা
- যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ রয়েছে
- যেসব কারণে রোজা ভাঙে না
- মন্তব্য
ভূমিকা: যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ-যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের উপরে রোজা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমারদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রমজান মাসের রোজা কে ফরজে আইন করা হয়েছে। শরিয়াতের বিধান অনুযায়ী রোজা ছাড়ার কারণ ব্যতীত অন্য কারণে রোজা ছেড়ে দেওয়া কবিরা গুনাহ। আর এই রোজাকে যে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। বিনা ওজরে রোজা না রাখলে ফাসিক ও কঠিন গুনাহগার হতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩-১৮৪; ফাতওয়া তাতারখানিয়া, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৫০)
তবে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কিছু কারণ রয়েছে যে কারণগুলোতে রোজা ভাঙ্গার অনুমতি দিয়েছে শরীয়ত। কি কি কারণে রোজা ভাঙ্গার আদেশ দিয়েছে শরীয়ত, এবং কি কি করলে রোজা ভাঙ্গে না, এই বিষয়ে আজকে আলোচনা করব তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
আরো পড়ুনঃ রোজার নিয়ত। রোজা ভাঙ্গার ১৮ টি কারণ জেনে নিন
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ রয়েছে
যে ব্যক্তি দুর্বল হয়ে যায় যেন তার রোজা রাখার শক্তি নেই। (আপকে মাসায়েল : খণ্ড. ৩, পৃষ্ঠা : ২০৩)
উদা বা পিপাসায় প্রাণ চলে যায় এমন অবস্থা হলে রোজা ভাঙ্গা যায় রয়েছে। (আলমগিরি : খণ্ড. ১, পৃষ্ঠা : ২০৭)
যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার রোজা রাখার শক্তি না থাকে যদি এমন মনে হয় যে রোজার দ্বারা তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে তবে সেই ব্যক্তির জন্য রোজা ছাড়ার অনুমতি রয়েছে। তবে যখন সে সুস্থ হবে তখন সেই কাজা রোজা করে নিতে পারবে। (আপকে মাসায়েল : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২০২)
যদি কোন ব্যক্তি রোজা থাকার কারণে তার জীবিকা নির্বাহ বা উপার্জন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার রোজা ভেঙে ফেলার অনুমতি দিয়েছে শরীয়ত। তবে সেই রোজ আছে পরে কাজা করে নিতে পারবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে সেই ব্যক্তি সাদ্গার ভিতর পরিমাণ দান করে ফিদিয়া আদায় করবে। শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৪০০)
কোন গর্ভধারিণী বা স্তন্যদান কারিনী মহিলা যদি নিজের বা নিজের সন্তানের প্রাণপাত্রের আশঙ্কা থাকে রোজার কারণে। তাহলে তার রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ রয়েছে। (আলমগিরি : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০৭)
যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে রোজা অবস্থায় সেই ব্যক্তি তার ফসল কর্তন করতে পারছে না। কিন্তু ফসল করতাম না করলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে সেই ক্ষেত্রে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে তাকে পরে রোজা কাজা করে নিতে হবে। (শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৪০০)
যেসব কারণে রোজা ভাঙে না
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হচ্ছে রোজা। মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা। মহান আল্লাহতালা বলেন, ‘মানুষের সব আমল তার জন্য; তবে রোজা ছাড়া। কেননা তা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৯২৭)
রোজার সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয়। এমন কিছু যেন না হয় যার কারণে রোজা ভেঙে যায়। তবে অনেক কারণ রয়েছে যে কারণগুলো কারণে রোজা ভাঙ্গে না। সে কারণগুলো নিম্ন আলোচনা করা হল।
* ভুল করে পানাহার করা বা স্ত্রীসহবাস করা। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৫); তবে ওই ভুলকারী লোকের যদি রোজা রাখার শক্তি থাকে, তাহলে কেউ তাকে রোজার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, তাহলে স্মরণ না করিয়ে দেওয়া উত্তম। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ. ১, পৃ. ২০২)
* অনিচ্ছায় গলার মধ্যে কোনো ধোঁয়া, ধুলোবালি ও মশা-মাছি চলে যাওয়া। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৬)
* স্বপ্নদোষ হওয়া। (তিরমিজি : হাদিস : ৭১৯)
*যেকোনো সময় মেসওয়াক করা, কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক হোক। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)
* দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া কোনো জিনিস খেলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)
* ফুল বা মৃগনাভির ঘ্রাণ নিলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৯)
* শরীর, মাথা, দাড়ি-গোঁফে তেল লাগালে। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)
* মুখের থুথু গিলে ফেলা। (নাওয়াজিল : পৃ. ১৫০)
*পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করার সত্ত্বেও যদি থুথুতে লালভাব থাকে, তাহলে রোজা ভাঙবে না; মাকরুহও হবে না। (এমদাদুল ফাতাওয়া : খ. ২, পৃ. ১৩১)
*তিল পরিমাণ কোনো জিনিস বাইরে থেকে মুখে নিয়ে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া ও গলায় তার কোনো স্বাদ অনুভব না হলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৪)
* কপালের ঘাম বা চোখের দু-এক ফোটা অশ্রু কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে। রোজা ভাঙে না। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)
* ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করা হলে রোজা ভাঙ্গবে না।
* ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া, ঠাণ্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া বা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৪; দারুল উলুম : খ. ৬, পৃ. ৪০৫; বুখারি)
* স্বপ্নে বা সহবাসে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে, এবং সুবেহ সাদিকের আগে গোসল না করে রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার রোজার মধ্যে অসুবিধা হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৮০)
* গলা দিয়ে খাদ্যনালি থেকে মুখের কাশি বের করা, তারপর আবার গিলে ফেলা উচিত নয়। তবে এটি মাকরুহও নয়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৭৩)
* রোজা অবস্থায় নাকের মধ্যে কোনো ওষুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্রেনে না পৌঁছলে। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫, পৃ. ১৬৯)
* শরীরের কোনো ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত প্রবাহিত হলে রোজা নষ্ট হয় না। তবে রোজাদার থেকে বের করা মাকরুহ। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ২৮)
* ডাক্তার যদি চিকিৎসার শুকনো কোনো যন্ত্র রোজাদার ব্যাক্তির পেটে প্রবেশ করায়, অতঃপর তা বের করে ফেলে, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আল-ফিকহুল হানাফি)
* পানিতে ডুব দেওয়ার পর কানের ভেতর পানি চলে গেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪; আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০৪)
* জৈবিক উত্তেজনায় শুধু চোখে দেখার কারণে যদি বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা ফাসেদ হবে না। (আহকামে জিন্দেগি, পৃ. ২৪৯)
আরো পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত জেনে নিন
মন্তব্য: যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ-যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
মহান আল্লাহ তাআলার রমজান মাসে রোজা কে ফরজ করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজে আইন করা হয়েছে রমজান মাসের রোজাকে। এ রোজা পালনের কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে। নিয়মকানুন রয়েছে। যে নিয়মগুলো ভঙ্গ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো করা হলে রোজা ভাঙ্গে না।
এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্পূর্ণ টা বুঝতে পেরেছেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ইসলামিক পোস্ট লেখা থাকি। তাই ইসলামিক পোস্ট পড়তে, প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url