রোজাদারের দৈনিক ছয়টি কাজ সম্পর্কে জানুন
রোজাদারের দৈনিক ছয়টি কাজ সম্পর্কে জানুন
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আজকে আমরা আলোচনা করব রোজাদারের দৈনিক ছয়টি বিশেষ কাজ সম্পর্কে। যে কাজগুলো করা উত্তম।
পোস্ট সূচীপত্র: রোজাদারের দৈনিক ছয়টি কাজ সম্পর্কে জানুন
- ভূমিকা
- তারাবির নামাজ পড়া
- রমজান মাসে সেহরির সময়ে সেহরি খাওয়া
- সেহরির বরকত সম্পর্কে অনেক হাদিসে এসেছে-
- মন্তব্য
ভূমিকা: রোজাদারের দৈনিক ছয়টি কাজ সম্পর্কে জানুন
পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার জন্য ছয়টি কাজ করা আবশ্যক। কারণ রমজান মাস হচ্ছে রহমতের মাস বরকতের মাস ও নাজাতের মাস। রমজান মাস হচ্ছে রোজাদারদের জন্য পূর্ণ নিয়ামতের মাস। রোজাদারের প্রত্যেকটি কাজের জন্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে গুনাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস।
তাই এ রমজান মাসে রোজাদার জন্য ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যেগুলো প্রতিদিন করতে হয়। কি সেই কাজগুলো?? চলুন দেরি না করে জেনে নেই। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ছয়টি আবশ্যক কাজ করার জন্য তাবিজ দিয়ে গেছেন। সেই কাজগুলো হলো:-
১. তারাবির নামাজ পড়া
পুরো রমজান মাস জুড়ে তারাবির নামাজ পড়তে হয়। তারাবির নামাজ রাতে পড়তে হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান মাস সম্পর্কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সঙ্গে নেকি পাওয়ার আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, সেই ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি)
আরো পড়ুনঃ পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি-পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন
২. রমজান মাসে সেহরির সময়ে সেহরি খাওয়া
রোজা পালনের জন্য সেহরি খাওয়া আবশ্যক। সেহরি খেয়ে রোজা ধরতে হয়। সেহরি খাওয়ার সময় হলো রাতের শেষ অংশ অর্থাৎ ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত। অনেকেই আবার তারাবির নামাজ শেষ করে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবার ফজরের নামাজ পড়তে ওঠে সেক্ষেত্রে সেহরির বরকত থাকে না।
সেহরির বরকত সম্পর্কে অনেক হাদিসে এসেছে-
*হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা শেষ রাতে সেহরী খাও। তাতে বরকত রয়েছে।' (বুখারি ও মুসলিম)
*হজরত ইবনে ওমর (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীর জন্য প্রার্থনা করেন।' (তাবারানি ও ইবনে হিব্বান)
*হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেহরিতে বরকত আসে। সুতরাং তোমরা সেহরি ছেড়ো না। যদিও তোমরা সেহরিতে এক ঢোক পানিও খাও। কেননা যারা সেহরি খায়, তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
*হজরত আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, 'আমাদের এবং আহলে কিতাবের (আমাদের আগে আসমানি কিতাব পাওয়া ইয়াহুদি-খ্রিষ্টান) মধ্যে পার্থক্য হলো- সেহরি খাওয়া। আর আমাদের তো ভোর (সোবহে সাদেক) হওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়া ও পান করার অনুমতি রয়েছে।' (মুসলিম)
৩. ইফতারের সময় হলে খেজুর দ্বারা ইফতার করা
ইফতারের সময় হলে প্রথমে খেজুর দিয়ে ইফতারি শুরু করতে হয় তবে খেজুর না পেলে সাদা পানি দিয়েও ইফতার শুরু করা যায়।
হাদিসে এসেছে-
*রাসুলুল্লাহ (স) খেজুর খেয়ে রোজা ভঙ্গ করতেন।’ (আবু দাউদ)
* নবিজি (স) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে; সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)
৪. ইফতারের সময় হলেই সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা
ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতারি করতে হবে। ইফতারের সময় দেরি করা ঠিক নয়।
হাদিসে এসেছে-
নবিজি (স) বলেছেন, ‘মানুষ ততদিন কল্যাণের পথে থাকবে, যতদিন তারা (সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) তাড়াতাড়ি ইফতার শুরু করবে।’ (মুসলিম)
৫.রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা বলাও পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া
রোজাদারের জন্য মিথ্যা কথা বলা ও মন্দ কাজ ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক। রোজা অবস্থায় মিথ্যা পরিহার করা ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা ঈমানের অন্যতম একটি দাবি।
হাদিসে এসেছে-
নবিজি (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে না, তার পানাহার ত্যাগ করায় (রোজা রাখায় আল্লাহর) কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)
৬. খারাপ কথার জবাব উত্তম কথার দ্বারা দেওয়া
কোন খারাপ কথাই উত্তম জবাব দিতে হয়। আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ
'(হে রাসুল!) আপনি ভালো দ্বারা মন্দের মুকাবিলা করুন।' (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৯৬)
নবিজি (স) বলেছেন-
‘কেউ যদি মন্দ কথা বলে, (কোনো রোজাদারকে) রাগানোর চেষ্টা করে, তখন তাকে এ কথা বলা যে, 'আমি রোজাদার।’ (নাসাঈ)
আরো পড়ুনঃ রমজান মাসের আমলসমূহ-রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল
মন্তব্য: রোজাদারের দৈনিক ছয়টি কাজ সম্পর্কে জানুন
মমিন মুসলমানদের উচিত পুরো রমজান মাস জুড়ে এই কাজগুলো পালন করা। এই কাজগুলো করার মাধ্যমে রহমত বরকত ও নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন পরিলনা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
শেষের কথা
সুপ্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ইসলামিক আর্টিকেল লিখে থাকি। তাই প্রতিদিন ইসলামিক আর্টিকেল পড়তে আমাদের মোটিভেশন আইটির সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url