চিরতার খাওয়ার উপকারিতা চিরতার খাওয়ার অপকারিতা
চিরতার খাওয়ার উপকারিতা চিরতার খাওয়ার অপকারিতা
চিরতা নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। চিরতা প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। অনেকে চিরতার গাছকে ওষধি গাছ বলে ডাকে। আমাদের শরীরে নানান সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে ওষুধ হিসাবে খাওয়া হয়। এর উপকারিতা রয়েছে। চিরতা প্রায় সব ধরনের রোগেরই কাজ করে থাকে। যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ছিল, চিরতা শরীরে নানান রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
পোস্ট সূচিপত্র: চিরতার খাওয়ার উপকারিতা চিরতার খাওয়ার অপকারিতা।
- চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
- চিরতার অন্যান্য উপকারিতা সমূহ
- চিরতার অপকারিতা সমূহ
- চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- চিরতা কিডনির কি ক্ষতি করে?
- মন্তব্য
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
চিরতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রাতে এক গ্লাস চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং এতে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চিরতা খেলে রক্ত স্বল্পতা পূরণ হয়
চিরতা রক্ত স্বল্পতা পূরণ করে। যাদের শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, তারা নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন। কারণ চিরতা রক্তস্বল্পতা পূরণে বেশ সাহায্য করে। এটি শরীরে নতুন রক্ত কোষ গঠন করতে সাহায্য করে। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে নিয়মিত সকালে চিরতা ভেজানো পানি পান করলে শরীরে রক্ত তৈরি হয় এবং রক্তশূন্যতা সহজেই দূর হয়।
আরো পড়ুন: কিভাবে দ্রুত ওজন বাড়ানো যায় মোটা না হওয়ার কারণ
চিরতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে
চিরতা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। কারণ চিরতা রক্তে থাকা সুগার বা চিনির মাত্রা আস্তে আস্তে কমিয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহজ হয়। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এক্ষেত্রে চিরতার ভেজানো পানি বা চিরতার গুঁড়ো পাঁচ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল ২ বার পান করুন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
চিরতা খেলে এলার্জির সমস্যা দূর হয়
চিরতা অ্যালার্জির সমস্যা দূর করে। অ্যালার্জির সমস্যায় যারা ভুগছেন ওষুধ খেয়েও সমাধান পাচ্ছেন না তারা চিরতার পানি খেতে পারেন। অ্যালার্জি দূর করতে চিরতা ভেজানো পানি বেশ কার্যকারী। অনেকের অ্যালার্জির কারণে শরীর লাল হয়ে যায় এবং শরীর ফুলে যায়। এক্ষেত্রে চিরতা পরিমাণ মতো নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরের দিন সেই পানি ঘুম থেকে উঠে পান করবেন এবং সারাদিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে পারেন। এতে অ্যালার্জির সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
চিরতা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
চিরতা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। আমাদের শরীরের নানা সময়ে বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ করে। ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে যায়। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চিরতা খেতে পারেন। চিরতা আমাদের শরীরকে যেকোন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে রক্ষা করে। চিরতার স্বাল তেতো। আর যে কোনও তেতো খাবার কোনও ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ হতে দেয় না। তাই নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করলে সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
চিরতা খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে
চিরতা লিভার পরিষ্কার রাখে। লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার জন্য তা বেশ কার্যকরী চিরতা। চিরতা লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন। এতে লিভারের সমস্যা দূর হয়ে যাবে,এবং সুরক্ষিত থাকবে৷
বমি ভাব দূর করে চিরতা
চিরতা বমি ভাব দূর করে। অনেকের বমি সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের বমি বমি ভাব বেশি দেখা দেয়। কোনও কিছু খেলেই বমি বমি ভাব হয়। অনেক সময় কারণ ছাড়াই বমি হয়ে থাকে। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা চিরতার পানি পান করতে পারেন। বমি ভাব দূর করার জন্য পাঁচ গ্রাম চিরতা থেঁতো করে দুই কাপ গরম পানিতে দুই থেকে 3 ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে দিন। এরপর সেই পানি ছেঁকে অল্প অল্প করে পান করতে পারেন। বমি ভাব বেশি হলে নিয়মিত খেতে পারেন। এতে দ্রুত এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: খেজুর ও কিসমিস এর উপকারিতা
চিরতা খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়
চিরতা হজমের সমস্যা দূর করে। হজমের সমস্যা দূর করতে চিরতার উপকারিতা সব থেকে বেশি। যে কোনো খাবার ঠিকমতো হজম না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়,তার মধ্যে অ্যাসিডিটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ব্যথার মতো নানা সমস্যা হতে পারে৷ তাই হজমজনিত সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন।
ত্বকের যত্নে চিরতা কার্যকরী
ত্বকের যত্নে চিরতা বেশ কার্যকরী। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ত্বকে ব্রণ ও কালো দাগ, ঘাড় খতমে জেতা এবং ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। ত্বক আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল হবে। তাছাড়া নিয়মিত চিরতার পানি পান করলে বয়সের ছাপ দূর করে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
চিরতার অন্যান্য উপকারিতা সমূহ
চিরতার পানি আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। আর এটা ধরে রাখতে চাইলে নিয়মিত চিরতার পানি পান করতে হবে। এছাড়া হাঁপানি রোগের কার্যকরী। হাঁপানির সমস্যা খুবই মারাত্মক। আর এই সমস্যা দূর করতে চিরতার পানি পান করুন। কেননা হাঁপানি রোগ দূর করতে চিরতার বেশ সুনাম রয়েছে। যাদের হাঁপানি রয়েছে তারা চিরতার গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হাঁপানির সমস্যা ভালো হয়। এছাড়া চিরতা খেলে জ্বর কিংবা ঠান্ডা দ্রুত ভাল হয়।
জলে পাঁচ থেকে 10 গ্রাম চিরতা চার কাপ পানিতে বেশ কিছুক্ষণ সিদ্ধ করা দুই কাপ পানিতে পরিণত করবেন। তারপর পানি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নেবেন। এই পানি নিয়মিত সকাল ও বিকালে অল্প অল্প করে পান করবেন। এতে দ্রুত ঠান্ডা সেরে যাবে। তাছাড়া চুল পড়া বন্ধের জন্য চিরতা ভালো কাজ করে। চিরতার পানি দিয়ে চুল ধুলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়। চিরতার
চিরতার অপকারিতা সমূহ
চিরতার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আমরা জানি সকল কিছু ভালর পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষতিকর দিক ও থাকে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিরতা রস পান করলে উপকারের পরিবর্তে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চিরতা তেতো। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে বমি কিংবা পেটের সমস্যা সম্ভাবনা রয়েছে।
চিরতা 10 থেকে 15 দিনের বেশি একটানা খাওয়া যাবে না। ডাক্তার নিষেধ করে থাকেন। দীর্ঘদিন একটানা খেলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যখন প্রয়োজন হবে তখন খাবেন। প্রয়োজন মিটে গেলে আর খাবেন না। তবে কিছুদিন বন্ধ রেখে, আবার খেতে পারেন৷ চিরতা ব্লাড সুগার লেভেল কমিয়ে দেয়।
তাই যাদের ডায়াবেটিস তাদের জন্য খুবই ভাল। কিন্তু যাঁদের ব্লাড সুগার প্রয়োজনের চেয়েও কম, তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চিরতা খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। তাছাড়া গর্ভবতী নারীদের ও শিশুদের চিরতার রস পান করার পূর্বে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
চিরতা খাওয়ার সাধারণ নিয়ম হল, রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস বা সমমানপরিমাণ পানিতে পাঁচ থেকে সাত গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর ঘুম থেকে উঠে সকালবেলা ছেঁকে নিয়ে পানি পান করতে হবে। আবার রাতে ঘুমানো আগে পান করতে পারেন।
চিরতা কিডনির কি ক্ষতি করে
এবার অনেকেই বলতে পারেন চিরতা খেলে কিডনির কোনও ক্ষতি হয় চিরতার কি। কিডনির ক্ষতি করে কি না। এটা অনেকেই জানতে চায়। আসলে চিরতা কিডনির ক্ষতি করে না। তবে দীর্ঘ দিন একটানা চিরতা খেলে কিডনির উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
মন্তব্য
একটাই কথা বলব যে চিরতা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। চিরতা কিন্তু একটু তেতো স্বাদের। কিন্তু খেলে তো আর মরে যাবেন না। একটু কষ্ট করে খেলে আমাদের শরীরের ভীষণ উপকার পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুন: কি কি খাবার খেলে রক্তে প্লাটিলেট বাড়ে জেনে নিন
শেষের কথা
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আশা করি পোস্টটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন চিরতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের টিপস ট্রিক্স লিখে থাকি। তাই বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে টিপসগুলো পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url