রমজান মাসের আমলসমূহ-রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল

রমজান মাসের আমলসমূহ-রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল 

ভূমিকা: রমজান মাসের আমলসমূহ-রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল 

প্রিয় পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। মোটিভেশন আইডির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাচ্ছি স্বাগতম।সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোন রমজান মাস হচ্ছে  ইবাদত বন্দেগী করার মাস। রমজান মাস হচ্ছে আমলের মাস। মহান আল্লাহ তায়ালার মানবজাতির জন্য প্রেরিত রমজান মাস হল পরিপূর্ণ নিয়ামতের মাস। অন্য মাসে তুলনায় এই রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহ অনেকগুনে বেশি ইবাদত করে থাকে। 

ছবি

এ রমজান মাসে হাজার বছরের থেকেও শ্রেষ্ঠ একটি রাত রয়েছে সেটি হচ্ছে লাইলাতুল কদর। তাই এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, যার মধ্যে কোরআন নাজিল করা হয়েছে— লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫।

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের অনেক ফজিলত আছে। রমজান মাসে অনেক আমল করতে হয়। যেই আমলগুলো করে আমরা জান্নাতে যেতে পারি। এ আমলগুলো করার মাধ্যমে আমরা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে পবিত্র মাহে রমজান মাসের বিভিন্ন আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. রমজান মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করা

রমজান মাসের বিভিন্ন আমলের মধ্যে একটি অন্যতম আমল হল রমজান মাসে বেশি বেশি দান সদকা করা। তাই এ মাসে আমাদের বেশি বেশি দান সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। গরিব, মিসকিন, ফকির বিধবা মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদেরকে দান খয়রাত করতে হবে। অন্যান্য মাসে তুলনায় এই রমজান মাসে যাকাত দেওয়া উত্তম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রমজান মাসে বেশি বেশি দান সদকা করতে বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০২)

২. রমজান মাসে বেশি বেশি ইতিকাফ করা

ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ অন্যান্য মানুষদের থেকে আলাদা হয়ে সলাত, কোরান তিলাওয়াত, দোয়া, সিয়াম ইস্তেকফার ও অন্যান্য ইমামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে একাকী সময় পার করা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে নিজে ও তার সাহাবীগণ ইতিকাফ করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘প্রত্যেক রমাজানেই আবু হুরায়রা (রা.) শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন।  জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন।’ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস : ২০৪৪)

৩. রমজান মাসে উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা

এই রমজান মাস নিজেকে উত্তম চরিত্রের গঠনের রূপান্তরিত করা মাস। রমজান মাসে বেশি বেশি প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং অন্যান্য মাসে যাতে পরিচালিত হয় সেভাবে রমজান মাসে চরিত্র গঠন করে নিতে হবে।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোজা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)

৪. রমজান মাসে  উমরা পালন করা উত্তম (সামর্থ্য থাকলে)

রমজান মাসে ওমরা করলে একটি পূর্ণাঙ্গ হজ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে উমরা করা আমার সাথে হজ আদায় করার সমতুল্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৩)

৫. রমজান মাসে দ্বীনের দাওয়াতের জন্য কাজ করা

রমজান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। তাই এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য কুরআন ও হাদিস প্রদান কোরআন বিতরণ বই বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা উচিত।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতালা বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চাইতে উত্তম আর কে হতে পারে— যে আল্লাহর দিকে ডাকল, নেক আমল করল এবং ঘোষণা করল যে, আমি একজন মুসলিম।’ (সুরা হা-মীম সাজদাহ, আয়াত : ৩৩)

আরো পড়ুনঃ যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ-যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না

৬.রমজান মাসে শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল ক্বদরের তালাশ করা

রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যে রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন,‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ০৪)

 রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস : ৩৫)

লাইলাতুল ক্বদরের রাত পাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৭৫)

 লাইলাতুল কদরের দোয়া 

আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর পেয়ে যাই তবে কী বলব? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘বলবে- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি।

অর্থাৎ : হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনান আত-তিরমিজি : ৩৫১৩)

৭. রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করা

রমজান মাসের দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়। অন্যান্য মাস অপেক্ষা রমজান মাসের দ্রুত দোয়া কবুল হয়। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং বেশি বেশি কান্নাকাটি করতে হয়।

হাদিসে শরীফে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ (আল-জামিউস সাগির, হাদিস : ৩৯৩৩)

৮. নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার করা

ইফতারের নির্দিষ্ট সময়ে ইফতার করা উচিত। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করলে এতে ফজিলত রয়েছে। তাই সময় হলেই বিলম্ব না করে ইফতার করা উচিত।

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)

হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন, ‘পিপাসা নিবারিত হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হলো এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হলো।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ এই হাদিসের সনদ দুর্বল। আর আমাদের উচিত সহিহ হাদিসের উপর আমল করা। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস :২৩৫৮) 

৯. রমজান মাসে ইফতার করানো উত্তম কাজ

রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতার করানো এটি অনেক সওয়াবের কাজ। প্রতি রোজাতে কমপক্ষে দুই একজনকে ইফতার করা উচিত।

কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস : ১৭৪৬)

১০. রমজান মাসে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা

রমজান মাসে গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম হচ্ছে, রমজান মাসে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা। তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা। অর্থাৎ আর গুনাহ এর কাজ না করা। অন্যান্য মাসের থেকে এ মাসে তওবা করা উত্তম। রমজান মাসে কেউ তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন— যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।’ (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত : ০৮)

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো, আর আমি দিনে তার নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭০৩৪)

তওবা ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম কাজ হচ্ছে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া। আর তা হচ্ছে- ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্ম থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকার করছি। আমি যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার এর ফজিলত

ফজিলত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগ


ফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ (সহিহ আল-বুখারি : ৬৩০৬)

মন্তব্য: রমজান মাসের আমলসমূহ-রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল 

রমজান মাস হচ্ছে নেকি অর জনের মাস এ রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের সবচেয়ে নিকটে চলে আসে এবং আল্লাহ তায়ালা বলে তোমরা আমার কাছে চাও আমি তোমাদের দেব এ রমজান মাসে অনেকগুলো আমলের মাধ্যমে আমরা আমাদের নেকীর পাল্লা ভারী করতে পারি তাই আসুন উপরোক্ত আমলগুলো করি এবং জান্নাতে প্রবেশ করি ইনশাল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ রোজার নিয়ত। রোজা ভাঙ্গার ১৮ টি কারণ জেনে নিন

শেষের কথা

সুপ্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা, আমরা আজকে আলোচনা করেছি রমজান মাসের বিভিন্ন আমল সম্পর্কে।পোষ্টটি পূর্ণাঙ্গ পড়ে থাকলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন রমজান মাসে কি কি আমলের মাধ্যমে আমরা জান্নাত লাভ করতে পারি। পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ইসলামিক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। নিয়মিত ইসলামিক আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url