পুলসিরাত কাকে বলে? পুলসিরাতে কি প্রশ্ন করা হয়?
পুলসিরাত কাকে বলে? পুলসিরাতে কি প্রশ্ন করা হয়?
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। হাশরের ময়দানে পুলসিরাতের 7 টি ধাপে 7 টি প্রশ্ন করা হবে। সেই প্রশ্ন গুলি কি কি? প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর ওপারে কে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন? তারপর ফেরেশতারা আমাদের সঙ্গে কি করবেন? আপনারা যদি এই সাতটি প্রশ্ন জানেন তাহলে আমাদের কমেন্টে জানান আর যদি না জানেন তাহলে আমার এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্র: পুলসিরাত কাকে বলে? পুলসিরাতে কি প্রশ্ন করা হয়?
- পুলসিরাত কাকে বলে
- পুলসিরাতে কি কি প্রশ্ন করা হবে
- মন্তব্য
- শেষের কথা
পুলসিরাত কাকে বলে
আরবিতে সিরাত অর্থ পথ বা রাস্তা। পুলসিরাত হচ্ছে সেই রাস্তা যে রাস্তা জাহান্নামের উপর দিয়ে যায় এবং যা চুলের চেয়েও চিকন, আগুনের চেয়ে গরম এবং তরবারি চেয়েও ধারালো। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মাখলুককে সেই রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। যারা জান্নাতবাসি হবে তারা তাদের ঈমান ও আমল অনুযায়ী স্বাচ্ছন্দের সাথে কষ্টের সেতুটি অতিক্রম করে জান্নাতে চলে যাবে এবং যাদের আমল নড়বড়ে তারা জাহান্নামে থাকবে। ঈমানদারদের জন্য সেই সেতুটি একটি সুন্দর উপত্যকায় রূপান্তরিত হবে।
যেখানে তারা কোন সমস্যা ছাড়াই অতিক্রম করে জান্নাতের দরজায় পৌঁছে যাবে। ঈমানদারদেরকে তাদের কর্ম অনুযায়ী লড়বে, যার আলোতে তারা সেই পুলের মধ্য দিয়ে পথ নির্ধারণ করবে। তারা প্রবল বাতাসের মতো দৌড়ে পার হয়ে যাবে। তারপর অনেকে হাটুতে ভর দিয়ে এবং অনেকে হামাগুড়ি দিয়ে পার হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এক রাতে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছি আমি দেখেছি আমার উম্মতের মধ্যে হতে একজন পুলসিরাতের উপর বুকের উপর ভর দিয়ে টেনে টেনে পার হচ্ছিল এবং কখনও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে চলতে থাকে।
এমন সময় তার কাছে পেশ করা হল, যারা আমার জন্য দরুদ পাঠ করছিল সেই দরুদের ফজিলত এর কারণে সে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এবং দ্রুত পুলসিরাত পার করতে পারে। আখিরাতের সময় অনুযায়ী পুলসিরাতের দূরত্ব 3000 বছর। এক রেওয়াতে বলা হয়েছে যে জাহান্নামের সাতটি পুল রয়েছে প্রত্যেক পুলের মাঝে দূরত্ব 70 বছরের সমান এবং প্রতিটি পুল তলোয়ারের মতো ধারালো। এর উপর দিয়ে অতিক্রমকারী দলগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি চোখের পলকে পার হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত বিদ্যুতের মত পার হয়ে যাবে। তৃতীয় দল বাতাসের মত পার হয়ে যাবে। চতুর্থ দল পাখির গতিতে পার হয়ে যাবে। পঞ্চম দল ঘোরার মত পার হয়ে যাবে, ষষ্ঠদশ ধরে চলা মানুষের মত পার হয়ে যাবে। সপ্তম দলটি পথচারীর মত পায়ে হেঁটে পার হয়ে যাবে। তাদের সবার শেষে একটা দল অবশিষ্ট থাকবে। তখন তাদেরকে যেতে দেয়া হবে তারা পুলসিরাতের ওপর তাদের পা রাখতে কিন্তু তাদের পা কাঁপতে শুরু করবে। তাই তারা হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে অগত্যা তারা হাটুতে ভর দিয়ে চলতে শুরু করবে এবং জাহান্নামের আগুনের স্ফুলিঙ্গ তাদের পায়ে এবং পায়ের তলা পর্যন্ত পৌঁছাবে।
তারপর তাদের পেটের উপর ভর করে টেনে টেনে চলতে শুরু করবে। অতঃপর তারা তাদের হাত দিয়ে ফুল আঁকড়ে ধরতে আগুন ও তাদেরকে ঘিরে ধরবে। এরপর আগুন থেকে বাঁচার জন্য পেটের উপর ভর করে টেনে টেনে চলতে শুরু করবে। তারা আগুন অতিক্রম করার পর তারা ঘুরে দাঁড়াবে এবং জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে বলবে, হে আল্লাহ আমাদেরকে এই জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। তিনি মহাপবিত্র
আরো পড়ুনঃ কোন সময় দোয়া কবুল হয়, দোয়া কবুলের ১৭টি বিশেষ সময়
পুলসিরাতে কি কি প্রশ্ন করা হবে
এই সেতুর প্রথম ধাপে আমাদের ঈমান অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে। আমাদেরকে ঈমানের আরকান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যার মধ্যে আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, পবিত্র গ্রন্থের প্রতি ঈমান, সকল নবী রাসূলের প্রতি ঈমান, আখেরাতের ওপর ঈমান এবং ভালো-মন্দ আগে বিশ্বাস এই সকল প্রশ্ন থাকবে। যখন কেউ এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে সফল হবে তখন তাকে পরবর্তী ধাপে পাঠানো হবে।
যেখানে তাকে নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পূর্ণ নামাজ পড়েছিল কিনা, যারা তাদের নামাজ সঠিকভাবে আদায় করবে তাদের নামাজ তাদের জন্য একটি অনুর হয়ে যাবে। যারা তাদেরকে পরবর্তী ধাপের পথ দেখাবে। অতঃপর তৃতীয় ধাপে তাদের যাকাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যারা সব সময় সঠিকভাবে যাকাত আদায় করেছে তারা এই ধাপ থেকে পরবর্তী ধাপে একটি ঠান্ডা ঝড়ো বাতাসের মতো পৌঁছাবে। যেখানে চতুর্থ ধাপে তাদেরকে রমজানে রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
যেখানে রোজা রাখা এবং কোরআন তেলাওয়াত সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সময় রোজা বলবে, হে আল্লাহ আমার কারনে এই ব্যক্তি সারাদিন ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত ছিল এবং নিজেকে নফসের কামনা বাসনা থেকে বিরত রেখেছিল।হে আল্লাহ তুমি এই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন। কোরআন বলবে যে সে আমার তিলাওয়াতের কারণে রাতে ঘুমায়নি তাকে ক্ষমা করুন এবং অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন এবং তাকে পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ পঞ্চম ধাপে পাঠাবেন।
যেখানে তাকে হজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এই ভাবে সফল হওয়ার জন্য শারীরিক ও আর্থিক ভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের তার জীবনে অন্তত একবার হজ করা। এখানে সফল হলেই তাকে পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ ষষ্ঠ স্থানে পাঠানো হবে। ষষ্ঠ ধাপে তাকে ওযু ও গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন ব্যক্তি পরিষ্কার এবং পবিত্রতা হাসিল করে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত হয়। তাই শিশুদেরকে অল্পবয়সেই অজু-গোসল সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া জরুরি। যাতে কিয়ামতের সময় সুষ্ঠুভাবে সফল হয় এবং পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ ও শেষ ধাপে পৌঁছাতে পারে।
সপ্তম ও শেষ ধাপে তাকে বান্দার হক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। যেখানে সফলতা নির্ভর করবে আমরা আমাদের নিজের পিতা মাতা, আমাদের বৃদ্ধরা, আমাদের সন্তান, আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের সাথে কিভাবে আচরণ করি তার ওপর। যদি কেউ অন্যের হক নষ্ট করে যেমন অন্যতম সম্পদ আত্মসাৎ করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, কাউকে গালি দেওয়া কারো গীবত করে তাহলে তার জন্য এই ধাপ অতিক্রম করা খুব কঠিন হবে। এবং তারা তা অতিক্রম করতে পারবেনা। কিন্তু যারা এই শেষ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে দেবে তারা সেই স্থানে পৌঁছে যাবে। যেখানে হযরত মুহাম্মদ
যেখানে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন এবং তাদের স্বাগত জানাবেন। যেখানে তাদের জন্য দুটি পানির ফোয়ারা থাকবে যার পাশ হিরে জহরত দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তারা একটি ঝর্ণা গোসল করবে এবং অন্যটি থেকে পানি পান করবে তারপর তারা জান্নাতে দরজায় পৌঁছে যাবে। জান্নাতে দরজায় ফেরেশতারা সেখানে তাদের স্বাগত জানাতে থাকবে। তারা জান্নাতে পা রাখবে এবং এমন এক অন্তহীন জীবনে প্রবেশ করবে যা কখনো শেষ হবার নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। যার ফলে আমাদের পুলসিরাত পার হওয়া সহজ হয়ে যায়। আমিন ।
মন্তব্য: পুলসিরাত কাকে বলে? পুলসিরাতে কি প্রশ্ন করা হয়
সম্মানিত পাঠক বন্ধু মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার জন্য দিকনির্দেশনা স্বরূপ পবিত্র কুরআন প্রেরণ করেছেন। আমরা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা নির্দেশমতো চলবো। আল্লাহ তা'আলা যা আদেশ করেছেন তা পালন করবে এবং যা নিষেধ করেছেন তা করব না। এ মায়াবী পৃথিবীতে আমরা নিজেদেরকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবো। যেন আমরা আল্লাহর প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করে জান্নাত লাভ করতে পারি আমিন।
আরো পড়ুনঃ হঠাৎ মৃত্যু ভালো নাকি খারাপ জেনে নিন
শেষের কথা
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আমরা আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি পুলসিরাত সম্পর্কে। আশা করি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং পুলসিরাত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এরকম আরো ইসলামিক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url