সিয়াম কি? কি কি কাজ করলে সিয়াম পালন হয় না।

সিয়াম কি-কি কি কাজ করলে সিয়াম পালন হয় না।

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামু আলাইকুম। আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব সিয়াম সম্পর্কে। সিয়াম কি সিয়াম পালনের শর্তসমূহ বা কি কি করলে সিয়াম পালন হয় না, এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সুতরাং পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ পড়বেন।

পোস্ট সূচীপত্র: সিয়াম কি-কি কি কাজ করলে সিয়াম পালন হয় না।

  • সিয়াম কি?
  • সিয়ামের অর্থ কি?
  • কাদেরকে সিয়াম পালন করতে হবে?
  • কি কি করলে সিয়াম পালন হয় না?
  • মন্তব্য

সিয়াম কি?

ছবি

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম একটি অন্যতম স্তম্ভ। সিয়ামকে মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সিয়াম পালন করে থাকে। প্রিয়াংকা বাংলায় রোজা নামের অভিহিত করা হয়। সিয়াম হল রমজান মাসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্য ও পানি থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করা। সিয়াম হল শরীরের যাকাত স্বরপ।

সিয়াম শব্দের অর্থ কি?

সিয়াম শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে সওম। যার অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পানাহার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে সিয়াম। এই সিয়াম কে ফার্সিতে রোজা বলা হয়। পরামর্শ নেতা সহমর্মিতা আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি গুণ অর্জনের জন্য সিয়াম পালন করে থাকে মুসলিমরা এবং আল্লাহর বিধান পালন করে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ রোজাদারের দৈনিক ছয়টি কাজ সম্পর্কে জানুন

কাদেরকে সিয়াম পালন করতে হবে?

যে ব্যক্তির মধ্যে এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার ওপর সিয়াম কে ওয়াজিব করা হয়েছে।

১. প্রথমত তাকে মুসলিম হতে হবে

২. যার উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য হবে।

৩. সে যদি সিয়াম পালন করতে সক্ষম হয়।

৪. ওই ব্যক্তি যদি মুকিম হয় তার উপর সিয়াম ওয়াজিব করা হয়েছে।

৫. যদি তার মধ্যে সিয়াম পালনে বাধা প্রদানকারী কোন বৈশিষ্ট্য না থাকে।

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য গুলো যে ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে তার ওপর সিয়াম কে ওয়াজিব করা হয়েছে।

কি কি করলে সিয়াম পালন হয় না

সিয়াম থাকা এবং উপবাস থাকা এক কথা নয়। সিয়াম থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। সিয়াম থাকা মানে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা এবং আল্লাহর নিচের করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। 

ছবি

সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। সিয়াম রাখার ক্ষেত্রে সে নিয়ম গুলো পালন না করলে সিয়াম কাজে লাগেনা। নিম্নে আমরা জানবো সিয়াম পালন করা হয় না কি কি করলে সে বিষয়গুলো। সিয়াম থাকা অবস্থায় এই কাজগুলো করলে আপনার সিয়াম কাজে লাগবে না।

হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে সিয়াম কাজে লাগে না

প্রথমত হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে সিয়াম পালন হয় না। প্রথমত খাদ্য হালাল হতে হবে। সিয়াম পালনের পূর্ব শর্ত হলো হালাল খাদ্য ভক্ষণ করা। সেহরি ও ইফতারের জিনিসপত্র সবকিছু নিখুঁত পবিত্র ও সৎ অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে।

 ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করো। পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে  থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)।

সিয়াম অবস্থায় টিভি দেখে সময় পার করলে 

সিয়াম অবস্থায় টিভি দেখে সময় পার করলে সিয়াম হয় না। সিয়াম পালনের জন্য অবশ্যই সিয়াম অবস্থায় টিভি দেখা বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর জিকির আজগারে মাধ্যমে সময় পার করতে হবে। রমজান মাসে সিয়াম অবস্থায় সবচেয়ে জঘন্যতম পাপ হলো-

১.টিভি দেখা

২.গান শোনা

৩.মেয়েদের ছবি দেখা 

উপরের প্রত্যেকটা কাজী গুনার কাজ তাই এসব কাজ থেকে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে বিরত থাকতে হবে।

সিয়াম অবস্থায় মিথ্যা কথা বললে

রমজান মাসে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকা যেমন জরুরী তেমনি অবস্থায় রমজান মাসে মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা জরুরী। শুধু রমজান মাসে মিথ্যা কে আল্লাহ তায়ালা জঘন্য তোমার পাপ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাই মিথ্যা পরিহার করাটা জরুরী। সিয়াম অবস্থায় মিথ্যা কথা বললে সেই মিথ্যা কথা ধ্বংস করে দেয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘

যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করে না, আল্লাহর কাছে তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৭)

সিয়াম অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বললে

সিয়াম অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা যাবেনা। সিয়াম অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বললে সিয়াম কাজে লাগে না। মুখের কথা অশালীন গালিগালাজ মন্দ গালিগালাজ বন্ধ করতে হবে। রোজা অবস্থায় কাজে জড়ানো উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈচৈ না করে।’ ( বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

সিয়াম অবস্থায় সেলফি ও আত্মপ্রদর্শন করলে

অনেকে রয়েছেন যারা রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের সময় সেলফি তুলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেন। এ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। সেহরি ও ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত হচ্ছে দোয়া কবুলের মুহূর্ত। এই সময়গুলো থেকে মোবাইল ফোন সেলফি থেকে বিরত থাকতে হবে।

রমজান মাসে রাত জেগে গল্প করলে

আমরা অনেকে আছি যারা রমজানে রাতে না ঘুমিয়ে গল্প করে রাত কাটাতে পছন্দ করি। কেউ আবার শপিং করে কেউ আবার রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিয়ে কেউ আবার অনলাইনে সায়েরি পর্যন্ত সময় পার করি। এগুলো করা একেবারে ঠিক নয়। রমজান মাস হচ্ছে ইবাদতের মাস এ মাসের প্রত্যেকটা মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই যথাসাধ্য ইবাদত করার চেষ্টা করতে হবে।

রমজান মাসে অশালীনভাবে চলাফেরা করলে

রমজান মাসে অথবা রমজানের বাইরে মুসলিম নারী ও পুরুষের পর্দার বিধান রয়েছে। পদ্মার বিধান অনুযায়ী না চললে সিয়াম পালন হবে না। বেপর্দা ভাবে চলাফেরা করলে সিয়াম পালনের ব্যাঘাত ঘটবে, যা সিয়াম পালনের কোন কাজে লাগবে না। তাই সব সময় মেয়েদেরকে লজ্জাস্থান হেফাজত করা জরুরী।

রমজান মাসে অপচয় ও অপব্যয় করলে

পবিত্র মাহে রমজানের কোন কিছুই অপচয় বা অপব্যয় করা উচিত নয়। রমজান মাসের ব্যয় ও খাবারের সংযম পালন করা জরুরী। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭)

রমজান মাসে সিয়াম অবস্থায় স্মার্টফোন আসক্তি

রমজান মাসের সিয়াম অবস্থায় স্মার্টফোনে সময় পার করা জরুরী নয়। যদিও স্মার্টফোন মানুষের দৈনন্দিন কাজকে করে দিয়েছে তারপরও। অনেকেই স্মার্টফোনের পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে। এর ফলে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটে।

আরো পড়ুনঃ সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত জেনে নিন

রোজা রেখে নামাজ না পড়লে

অনেক ভাই রয়েছে যারা রোজা পালন করে ঠিক কিন্তু নামাজ পড়ে না। মুসলিমের প্রথম শর্তে হলো নামাজ পড়া। যে ব্যক্তি নামাজ না পড়বে তার সিয়াম কোনদিনও কবুল হবে না। ইসলামের বিধানের প্রথম শর্ত হলো নামাজ পড়া। তাই নির্দিষ্ট সময় সময় নামাজ পড়া উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মুসলমানদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরজ।’ (সুরা নিসা : ১০৩)।

মাতা-পিতার সঙ্গে অসদাচরণ করলে

শুধু রমজান মাসে নয় মাতা পিতার সাথে যে কোন সময় অসদাচরণ করলেই আল্লাহ তাআলা সমস্ত আমল কে বাতিল করে দেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত কোরো না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের ‘উফ’ শব্দটিও বোলো না এবং ধমক দিয়ো না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)

সুতরাং এই মাহে রমজানে মাতা-পিতার সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে।


গিবত ও পরনিন্দা করলে

গীবত অর্থাৎ পরনিন্দা করা ইসলামে জঘন্যতম এবং নিকৃষ্টতম অন্যায় কাজ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতালা বলেছেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১)

রোজা রেখে অন্যের দস্ত রুটি সমালোচনা করা উচিত নয়। পরনিন্দাকারীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। যে গীবত করে সে যেন তার নিজের মরা ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করলো। এই মর্মে মহান আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন। তাই কোন সময় গীবত করা উচিত নয়।

মন্তব্য: সিয়াম কি-কি কি কাজ করলে সিয়াম পালন হয় না।

সম্মানিত দ্বীনি ভাই পোস্টটি আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আশা করি এই বিষয়গুলো মুসলিম দ্বীনি ভাই হিসেবে আমরা পালন করব। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য সিয়া আদায় করবো এবং আল্লাহর দেখানো পথে চলবো। এমন কোন কাজ করব না যেন আমাদের সিয়াম বাতিল হয়।

সম্মানিত দ্বীনি ভাই যদি পোস্টটি পড়ে ভাল লেগে থাকে তাহলে, অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ইসলামিক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। তাই নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url