রোজার ফিদিয়া কি-কখন ও কীভাবে দিতে হয়
রোজার ফিদিয়া কি-কখন ও কীভাবে দিতে হয়
সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করব রোজার ফিদিয়া সম্পর্কে। কি দিয়া কি ফিদিয়া কখন এবং ফিদিয়া কিভাবে দিতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সুতরাং পোস্টটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্র: রোজার ফিদিয়া কি-কখন ও কীভাবে দিতে হয়
- রোজার ফিদিয়া কি?
- রোজার ফিদিয়া কাকে দেওয়া যাবে?
- রোজার ফিদিয়া কখন দিতে হয়?
- রোজার ফিদিয়া কিভাবে দিতে হয়?
- দরিদ্ররা কিভাবে ফিদিয়া আদায় করবে?
- রোজার ফিদিয়ার পরিমান
রোজার ফিদিয়া কি?
ফিদিয়া বলতে বুঝায় রোজার পরিবর্তে কোন মিসকিনকে খাওয়ানো। অর্থাৎ যারা সিয়াম বা রোজা পালনে সক্ষম নয়, যারা রোজা পালনে অক্ষম তাদের জন্য একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোই হলো ফিদিয়া। রোজাতে কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে শরীয়তের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া বিনিময়কে ফিদিয়া বলা হয়।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া, অর্থাৎ একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
ফিদইয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
রোজা হলো মহান আল্লাহর নিকট অনেক পছন্দনীয় একটি ইবাদত। তাই একজন ঈমানদারের শরীরে যতক্ষণ শক্তি ও সামর্থ্য থাকবে ততক্ষণ সে চেষ্টা করবেন নিয়মমাফিক ভাবে রোজা রাখতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা আদায় করতে। একজন ঈমানদার তৃপ্তি লাভ করে আল্লাহর জন্য খুদা ও পিপাসা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বরণ করে নিয়ে। ঈমানদারের মনে খুশি ও ভালোলাগার জোয়ার ওঠে।
কিন্তু আল্লাহ ভক্ত সেই বান্দা যখন কোন বার্ধককে আক্রান্ত হয় বা দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সে বছরের রমজান মাস আসলে তার মনে প্রচুর জ্বালা উঠে। তার প্রচুর কষ্ট হয় রমজানে রোজা পালনে বিরত থাকার কারণে। তার মনে ঝড় ওঠে বাঘ ঢোকে দুর্বলতার কারণে রোজা না রাখতে পারার সীমাহীন বেদনার। সে খুব কষ্ট পাই এই ভেবে যে পরম দয়াময় আল্লাহ তাআলার জন্য রোজা রাখতে পারলাম না। আল্লাহ তালাকে কিভাবে খুশি করব?
তাই মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের কষ্ট বেদনাকে দূর করতে আল্লাহ তাআলা তার নিজের নৈকট্য লাভের জন্য তার বান্দার প্রতি আল্লাহতালা সুযোগ দিয়েছেন ফিদিয়ার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ছাড় দিয়েছেন যারা বৃদ্ধ দুর্বল বার্ধকে আক্রান্ত। তারা যদি রোজা রাখতে না পারে তাহলে তাদেরকে ফিরদিয়া দিতে হবে। তাই আল্লাহ তাআলা ফিদিয়ার বিধান করেছেন তাদের জন্য।
আরো পড়ুনঃ ফিতরা ২০২৪। ফিতরার পরিমাণ,ফিতরা কাদের দেয়া যাবে?
ফিদিয়া কাকে দেওয়া যাবে?
ফিদিয়া দুই শ্রেণীর ব্যক্তির রোজার পরিবর্তে প্রদানের সুযোগ রয়েছে।
১. দুর্বল বৃদ্ধ
ফিদিয়া প্রদানের জন্য আল্লাহ তাআলা নির্দেশ প্রদান করেছেন যারা দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তি তাদেরকে। যারা দুর্বল হয়ে গেছে, যারা বৃদ্ধ ব্যক্তি কোন ভাবে রোজা রাখতে সক্ষম নয়, তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। তাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা ভবিষ্যতে রোজা রাখার পরিবর্তে তাদেরকে ফিদিয়ার বিধান করে দিয়েছেন। তারা একটি রোজার পরিবর্তে একজন মিসকিন কে একদিন খাওয়াতে পারেন।
২. অসুস্থ
দুই নম্বর হচ্ছে অসুস্থ। যারা অসুস্থ বাধ্যকে আক্রান্ত, তাদের রোজা রাখা সম্ভব নয়। এসব রোগের কারণে যাদের সামর্থন একেবারে নেই এবং ভবিষ্যতের রোজা রাখার ও সামর্থ্য নাই বা সম্ভাবনা নেই তাদের ক্ষেত্রে ফিদিয়ার বিধান রয়েছে/
এই দুই শ্রেণীর মানুষ প্রতিদিন রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে একদিনের খাবার খাওয়াবেন। প্রতিদিনের রোজা পরিবর্তে সদকাতুল ফিতরের মূল্যবান অর্থ দরিদ্রদের মাঝে দান করে দেওয়াই হলো ফিদিয়া আদায় করা।
ফিদিয়ার হকদার গরিব-মিসকিনরা, যারা যাকাতের হক্বদার। ফিদিয়া কোনো দ্বিনি প্রতিষ্ঠান, যেখানে যাকাতের হক্বদার আছে, সেখানেও দেওয়া যাবে।
(আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)
কি দিয়া আর সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ হল রান্না করা রান্না করে খাদ্য সামগ্রী নিজে পেট ভরে খাওয়ানো। তবে অর্থ দিয়ে যদি ফি দিয়া আদায় করতে চান চাও তাহলে বাজারদর হিসেবে খাবার খরচের সমপরিমাণ দ্রব্যের বাজার মূল্য দিয়ে ফিরিয়ে প্রদান করবেন। একটি রোজার ফিদিয়া একজনকে দেওয়াই উত্তম। তবে এক রোজার ফিদিয়া একাধিক দরিদ্রকে বা কয়েক রোজার ফিদিয়া এক দরিদ্রকে দেওয়া জায়েজ আছে।
এই ফিদিয়াকে অনেকে আবার বদলি রোজাও বলে। তবে এটা ভুল কথা রোজা। একটি দৈহিক ইবাদত। এটা আরেকজনকে দিয়ে বদলি ভাবে করানো যায় না। যার ইবাদত তাকেই করতে হবে সেটা রোজা পালন করে হোক বা ফিদিয়া দিয়া হোক। ফিদিয়ার বিধানটা হলো রোজার পরিবর্তে গরিব মিসকিন দরিদ্রদের মাঝে সম্পদ দান করা।
ফিদিয়া গ্রহীতার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ফিদি আগ্রহীতা রোজা রাখুক বা না রাখুক তাতে কোন সমস্যা নেই। কি দিয়া আগ্রহীতা যদি রোজাও রাখে এতে করে ফিদিয়া দাতার কোন রোজা আদায় হবে না। ফিদিয়াদাতা শুধুমাত্র ফিদিয়া প্রদানের দ্বারাই রোজার বিধান থেকে অব্যহতি পাবে।
মনে রাখবেন ফিদিয়া প্রদানের পর যদি কোনদিন উক্ত ফিদিয়া দাতা রোজা রাখতে সক্ষম হয়ে যায়, রোজা রাখার সামর্থ্য ফিরে পায়, তাহলে তার অতীতের ফিদিয়া প্রদান বাতিল হয়ে যাবে এবংতাকে কাজা রোজা রাখতেই হবে। তবে অতীতের প্রদত্ত ফি দেয়ার জন্য সে শুধু দানের সওয়াব পাবে।
স্তন্যদানকারী গর্ভবতী মুসাফির অবস্থায় রমজানের রোজা রাখতে না পারলে পরে কাজা করার বিধান আছে। আর যদি এ সমস্যা দূর হওয়ার আগেই সে মারা যায় তাহলে কোন দায় তাদের দায়িত্বে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
ফিদিয়া কখন কীভাবে দিতে হয়?
মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের উপর কোনদিনও কিছু চাপিয়ে দেননি। সব কিছুরই মাঝে সমাধান দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। সবকিছুকেই সহজ করে দিয়েছেন তিনি। তাই পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিকল্প সমাধান দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা।
যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হয় এবং পরে সুস্থ হয়ে যায় তাহলে সে কাজা রোজা আদায় করতে পারবে। ওই ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া আদায় প্রযোজ্য নয়। তবে যদি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কাজা আদায় করার আগেই মারা যায় তাহলে তার পক্ষ থেকে তাঁর আত্মীয়-স্বজন ফিদিয়া আদায় করবে। কেননা মারা যাওয়ার দরুন তাঁর আর কাজা করার সুযোগ নেই।
আর যদি অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। অথবা যদি এমন বৃদ্ধ হৎ যে কখনোই তাঁর রোজা রাখার মতো সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই, তাহলে সে ফিদিয়া আদায় করবে।
(ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫)
রোজার ফিদিয়া প্রদানের মাধ্যম হল কোন গরিব মিসকিনকে খাওয়ানো। কোন গরীব মিসকিন দরিদ্রকে খাওয়ানোর মাধ্যমে ফিদিয়া আদায় করা হয়।
দরিদ্ররা কিভাবে ফিদিয়া আদায় করবে?
ফিদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে এক্ষেত্রে দরিদ্রদের যদি ফিদিয়া দিতে একেবারে অক্ষম হয় তাহলে তাকে তওবা করতে হবে। পরে যদি কখনো সে সামর্থ্যবান হয় তাহলে সে ফিদিয়া আদায় করে নিবে।
আরো পড়ুনঃ সিয়াম কি-কি কি কাজ করলে সিয়াম পালন হয় না।
রোজার ফিদিয়ার পরিমাণ
রোজার ফিদিয়ার বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া_একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো।’
(সূরা : বাকারা : ১৮৪)
অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যদি একান্তই রোজা রাখতে অক্ষম হয় তাহলে সে প্রতিদিন একজন দরিদ্রকে পেট ভরে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করবে। আবার কেউ চাইলে নগদ টাকা দিতে পারে। প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো সদকায়ে ফিতরের সমান। (আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)
মন্তব্য:রোজার ফিদিয়া কি-কখন ও কীভাবে দিতে হয়
সম্মানিত পাঠক বন্ধু আমাদের আশেপাশে আমাদের খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে আমাদের বাড়িতে কোন মুরুব্বী বা অসুস্থ ব্যক্তি আছে কিনা। যদি আমাদের বাড়িতে বা আশেপাশে অসুস্থ কোন ব্যক্তি থাকে, রোজা রাখতে অক্ষম ব্যাক্তি থাকে, তাহলে তাঁর জন্য ফিদিয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ইসলামিক আর্টিকেল লিখে থাকি। তাই প্রতিদিন ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে এবং ইসলামিক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। কোন উপদেশ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url