উচ্চ রক্তচাপ কি- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

উচ্চ রক্তচাপ কি- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করব উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে। উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের কারণ, লক্ষণ এবং উচ্চ রক্তচাপ কাদের হয়ে থাকে এগুলো বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি পোস্টটি আপনার জন্য খুব উপকারী হবে। তাই অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

পোস্ট সূচীপত্র: উচ্চ রক্তচাপ কি- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

  • সূচনা
  • উচ্চ রক্তচাপ কি
  • উচ্চ রক্তচাপের কারণ
  • উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
  • কাদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে
  • উচ্চ রক্তচাপের ফলে কী সমস্যা তৈরি হয়
  • উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচার উপায়
  • মন্তব্য

সূচনা: উচ্চ রক্তচাপ কি- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব প্রাণঘাতী হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য দেশে ন্যায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য জরিপ হিসেবে ২০১৭-১৮, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ৪ জনের ১ জন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন। আর এই সমস্যা সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতিবছর মারা যাচ্ছে

আরো পড়ুনঃ হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়/ হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ কী?

হৃদপিন্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ যখন অনেক বেশি থাকে তখন সেটাকে উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়। এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় দুটি মানের মাধ্যমে। যেটার সংখ্যা বেশি হয় সেটাকে সিস্টোলিক প্রেসার এবং যেটার সংখ্যা কম হয় সেটাকে ডেস্টলিক প্রেসার বলা হয়।

ছবি

দেহের হৃদপিন্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সৃষ্ট ললি প্রেসার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ এর রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। যদি কারো ব্লাড প্রেসার রিডিং ১৪০/ ৯০ হয় বা এর চেয়ে বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা হয়েছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপের ফলে কী সমস্যা তৈরি হয়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গের জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ জীব যন্ত্রের প্রেসিডেন্ট দুর্বল করে এবং এর ফলে দুর্বলের যন্ত্র রক্ত পান করতে পারেনা যার ফলের হৃদপিন্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে।

প্রচুর রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর ফলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকে অনেকাংশ বেড়ে যায়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয় এবং একজন মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কাদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে

অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেশি। ৪০ পার হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অন্তর অন্তর ব্লাড প্রেসার মাপা দরকার। যারা দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপে ভুগছেন তাদের প্রতি সপ্তাহে প্রেসার মাপা উচিত।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ 

উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:

  1. প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা,
  2. মাথা গরম হয়ে যাওয়া
  3.  মাথা ঘোরানো
  4. ঘাড় ব্যথা করা
  5. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  6. অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
  7. উচ্চ রক্তচাপের কারণে রোগীর রাতে ভালোঘুম হয় না
  8. মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া
  9. অনেক সময় রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে

  1. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
  2. পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
  3. নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে
  4. প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে
  5. ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে
  6. দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
  7. শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে

উচ্চ রক্তচাপ হলে বাঁচার উপায়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও জীবন যাপনের কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে। এজন্য কয়েকটি উপদেশ হলো;

ছবি

খাবারের মধ্যে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া-

লবণে রয়েছে সোডিয়াম যার রক্তের জলীয় বাষ্প অংশ বাড়িয়ে দেয় ফলে রক্তের আয়তন ও চাপ বেড়ে যায়।

ধূমপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা - 

শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ধূমপান। ফলে ধমনী ও শিরা নানারকম রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা- 

রোজা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে অতিরিক্ত পরিশ্রম হয় ফলে ওজনের মধ্যে সাধারণ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম করা - 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।

আরো পড়ুনঃ কেন বুক ধড়ফড় করে? বুক ধড়ফড় করার ১৫ টি কারণ।

মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কম করা - 

উচ্চ রক্তচাপের একটি অন্যতম কারণ হলো মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা। তাই দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদী উচ্চচাপের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কম করতে হবে।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা - 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে অবশ্যই খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আপনার যদি খাদ্য অভ্যাস হয় মাখন বা তেল জাতীয় খাবার ভাজা খাবার অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার তাহলে অবশ্যই এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এগুলো খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এছাড়াও অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বেরিয়ে যেতে পারে। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। এর পরিবর্তে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

মন্তব্য: উচ্চ রক্তচাপ কি- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়

সম্মানিত পাঠক আমরা এই পর্বে আলোচনা করলাম উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে। আপনি যদি এখন পর্যন্ত পোস্টটি সম্পন্ন পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি পোস্টটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। সম্মানিত পাঠক পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url