নাকের পলিপাস দূর করার উপায়-নাকের পলিপাসের ওষুধ
নাকের পলিপাস দূর করার উপায়-নাকের পলিপাসের ওষুধ
সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব নাকের পলিপাস সম্পর্কে। নাকের পানিপাস কি? নাকের পলিপাস হওয়ার কারণ, নাকের পলিপাসের চিকিৎসা এবং নাকের পলিপাসের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুব উপকারী হবে। অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
পোস্ট সূচিপত্র: নাকের পলিপাস দূর করার উপায়-নাকের পলিপাসের ওষুধ
- ভূমিকা
- নাকের পলিপাস কি?
- নাকের পলিপাস হওয়ার কারণ
- নাকের পলিপাসের লক্ষণ
- নাকের পলিপাস হলে চিকিৎসা
- নাকের পলিপাশের ঔষুধ
- নাকের পলিপাসের ড্রপের নাম
- নাকের পলিপাস দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি
- মন্তব্য
ভূমিকা: নাকের পলিপাস দূর করার উপায়-নাকের পলিপাসের ওষুধ
আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে যারা নাকের পলিপাসের সমস্যায় ভুগেন। অনেকের আবার শিশু অবস্থায়ও দেখা দেয়। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেও এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। শীতকালে পলিপাসের সমস্যা বেশি হয়। শীতকালে নাকের পলিপাসার কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মস্তিষ্কে নিঃশ্বাস পৌঁছার ক্ষেত্রে বা অক্সিজেন পৌঁছার ক্ষেত্রে নাকের পলিপাস বাধা প্রদান করে। সেক্ষেত্রে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে।
নাকের পলিপাস কি?
নাকের পলিপাস বলতে বুঝায় নাকের আশেপাশে প্রকোষ্ঠ রয়েছে। চোখের নিচের যে উঁচু হাড়টি রয়েছে তার ভিতরে থাকে ম্যাক্সিনাল সাইনাস না খাবার চোখের মাঝখানে যে ক্ষুদ্র স্থান সেখানে থাকে বেশ কয়েকটি ইথোময়েড সাইনাস। কপালের সামনে থাকে ফ্রন্টাল সাইনাস। এবং চোখের পেছন দিকে থাকে স্ফেনয়েড সাইনাস। এ সাইনাস গুলো অনেক সময় ফুলে আঙ্গুরের মতো আকার ধারণ করে। একেই ডাক্তারি পরিভাষায় পলিপ বলে হয়।
আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কি- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়
নাকের ফাংগাল ইনফেকশন থেকে নাকের দুই দিকে একাধিক সাইনাস পলিপ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ পলিপাসগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সাইনাসের ভেতরে থাকে। একটা সময় এটা বাড়তে বাড়তে সাইনাস থেকে নাকের ভেতরে চলে আসে। তখন আমরা নাকের ভেতরে পলিপ দেখতে পাই। অনেক সময় পলিপাসে ইনফেকশন হলে অথবা আঘাতজনিত কারণে ত্বকের স্তর মিউকোসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং অনেক সময় এটা লালচে রঙ ধারণ করে।
রোগীরা যেটাকে পলিপ বলে থাকেন, সেটা আসলে নাকের মধ্যে মাংস ফুলে যাওয়াকে বুঝিয়ে থাকেন। মেডিকেলের ভাষায় একে হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। নাকের ভেতরে, পার্শ্ব দুদিকে দুইটি মাংসপিণ্ড থাকে। একে আমরা সাধারণত ইনফেরিয়র টারবিনেট বলি। এই ইনফেরিয়র টারবিনেটের প্রদাহ হলে পলিপের আকৃতি বড় হয়ে যায়। যাকে হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। নাকের ভেতর থেকে এর উৎপত্তি হয়ে থাকে। মেডিকেলের ভাষায় এটা পলিপ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পলিপ এবং হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেটের কারণ একই এবং এ দুটোঈ একই সঙ্গে বিদ্যমান থাকে।
নাকের পলিপাসের লক্ষণ
* রোগীরা সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, নাক বন্ধ হওয়া ভাব এ ধরনের সমস্যায় ভুগেন। এক্ষেত্রে নাকের সর্দি সামনের দিকে আসতে পারে। অনেক সময় এটা সামনের দিকে না এসে পেছন দিকে চলে যায়। ফলে ঢোক গিলা বা গলা পরিষ্কার করার মতো ভাব দেখা যায়। এ সমস্যা যত বাড়তে থাকে ততই দেখা যায় ধীরে ধীরে দুটো নাকই বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে আংশিকভাবে এবং পরে সম্পূর্ণভাবে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
* নাকের পলিপাসের একটি লক্ষণ হলো অল্প ধুলাবালি বা ধোঁয়াতে গেলেই প্রচণ্ড হাঁচি হতে থাকে। সিগারেটের ধোঁয়া বা রান্নার ধোঁয়া সহ্য হয় না। দম বন্ধ হওয়ার ভাব হয়।
* নাকের পলিপাসের একটি অন্যতম লক্ষণ হল নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া। এবং অনেক সময় নাকের দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
* মাথাব্যথা হওয়া নাকের পলিপাস এর একটি অন্যতম লক্ষণ। এটি সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নাকের পলিপাস যখন বেশ বড় আকার ধারণ করে তখন মাথাব্যথা আর থাকে না। যে অবস্থাতে আমরা পলিপ দেখতে পাই সে অবস্থাতে মাথাব্যথার সমস্যা সাধারণত থাকে না।
*নাকের পলিপাস হলে মাথা এবং কপালের সম্মুখ বা নাক এবং এর আশপাশে একটা বন্ধ ভাব থাকতে পারে। এ সময় রোগী নিঃশ্বাস নিলে অবশ্যই সমস্যা দেখা যাবে।
* নাকের পলিপাস হওয়ার কারণে নাকের পেছনে ইউস্টেশিয়ান টিউব আক্রান্ত হয় এবং এ কারণে অনেক সময় মধ্য কর্ণে সমস্যা হয়ে থাকে। কান বন্ধ বন্ধ ভাব বা কানের ভেতর পানি যাওয়ার কারণে কান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
*নাকের পলিপাস এর কারনে মাঝে মাঝে মাথা উঠতে পারে। মধ্যকর্ণের এ সমস্যা থেকে অল্প-স্বল্প মাথা ঘুরানোর ভাব থেকে শুরু করে মারাত্মক রকমের মাথা ঘুরানোর সমস্যা থাকতে পারে। এছাড়াও কানের ভেতরে শোঁ শোঁ আওয়াজের মত আওয়াজ হতে পারে। কানের ভেতরে অনেক দিন পানি জমে থাকলে কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদে কান পাকা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
নাকের পলিপাস এর চিকিৎসা
নাকের পলিপাসের প্রাথমিক চিকিৎসা হল ধুলাবালি, ধোঁয়া ও ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে নাকে স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করলে সাধারণত চলে যেতে যায়। পলিপাস যদি আপনার নাককে সম্পূর্ণ অথবা আংশিকরূপে বন্ধ করে দেয়, তাহলে সাধারণত ওষুধে কাজ হয় না। এরকম ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে পলিপাস কেটে ফেলে ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ নেই।
নাকের পলিপাসের জন্য কয়েক ধরনের অপারেশন করা যেতে পারে। রোগীকে অবশ করেও পলিপাস বের করে নিয়ে আসা সম্ভব। এতে করে নাকের ভেতরের অংশটুকু সাধারণত কিছুটা দূর করা সম্ভব। রোগীকে অজ্ঞান করেও সাইনাসের ভেতরে যে ঝিল্লি থেকে পলিপগুলো তৈরি হয় সেটা সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হয় না।
বর্তমান যুগে পলিপাসের সর্বশেষ এবং সর্বাধুনিক চিকিৎসা হল এন্ডোস্কোপের মাধ্যমে পলিপাসগুলো শিকড় থেকে অর্থাৎ সাইনাসের যে ঝিল্লি থেকে পলিপ উৎপত্তি হয় সেখান থেকে সম্পূর্ণরূপে ফেলে দেওয়া। এন্ডোস্কোপ ব্যবহার করেও অতি সূক্ষ্মভাবে পলিপের উৎপত্তিস্থল থেকে পলিপাসকে ফেলে দেওয়া যায়।এবং যে কোনো সাইনাস নাক থেকে যত দূরেই হোক না কেন তার ভেতরে সূক্ষ্মভাবে প্রবেশ করে পলিপটাকে সম্পূর্ণভাবে বের করে ফেলা সম্ভব।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এন্ডোস্কোপের সাহায্যে নাকের পলিপাস ফেলে দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো অপারেশন নেই। তবে পলিপগুলো তাদের উৎপত্তিস্থল থেকে সম্পূর্ণভাবে ফেলে দিলে সাধারণত নতুন করে পলিপাস আর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
নাকের পলিপাসের ঔষুধ
আমরা এ পর্যায়ে জানবো নাকের পলিপাসের ওষুধের নাম। নাকের পলিপাসের জন্য হোমিও চিকিৎসার ক্ষেত্রে নাকের ভেতরের অবস্থান অনুযায়ী ড্রপ নাকের ভিতর লাগিয়ে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব।
তবে হোমিও চিকিৎসার ফলে নাকের পানিপাস পুরোপুরি দূর হলেও যদি এলার্জি সমস্যা থাকে তাহলে এরপরেও আবার নাকে পলিপাস হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। নাকের পলিপাসের জন্য চিকিৎসকরা যেসব ঔষধের অনুমোদন দিয়ে থাকে সেগুলো হল: এন্টি-হিস্টামিন, এন্টি-হিস্টামিন গ্রুপের ওষুধের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ফেক্সোফেনাডিন ১২০ মিগ্রা। এই ওষুধটি দিনে একটি করে খেতে হয়।
নাকের পলিপাসের ড্রপ এর নাম
নাকের পলিপাসের জন্য ঔষধের পাশাপাশি ড্রপও পাওয়া যায়। ড্রপের মাধ্যমে সাধারণত এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভব। হে ড্রপগুলো নিয়মিত ব্যবহার করার মাধ্যমে এ সমস্যা কমে আসতে পারে। চলুন আমরা নিচে জেনে নেই নাকের পলিপাসের ড্রপগুলো কি?
- ফ্লুটিকাসোন(Fluticasone)
- বুডেসোনাইড(Budesonide)
- মোমেটাসোন(Mometasone)
এসব ড্রপ নাক বন্ধ থাকা অবস্থায় ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও রেস্পিজেন নাজাল স্প্রে করলে নাকের পলিপাস জনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এজন্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়-হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ
নাকের পলিপাস দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি
নাকের পলিপাস দূর করার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরোয়া পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে নাকের পলিপাস সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব। নাকের পলিপাস দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে:
আপনি যদি নিয়মিত আদা চা খেতে পারেন তাহলে নাকের পলিপাশের মত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে হলুদ খাওয়ার মাধ্যমে নাকের পলিপাসের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কেননা হলুদের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি পেমেন্টারি উপাদান। যা মানব দেহকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।
নাকের পলিপাস সমস্যা দূর করতে রসুনও খেতে পারেন। রসুন আমাদের মানবদেহের জন্য খুব উপকারী একটি জিনিস। রসুন বিভিন্ন রোগের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে রসুন শরীরের পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হজম শক্তির বৃদ্ধি করে। এছাড়াও রসুন মানবদেহের প্রদাহ দূর করে।
সাধারণত রীতি পরিবর্তনের সময় নাকের পলিপাসের সমস্যা দেখা দেয়। ঠান্ডাতে ভিজলে অনেকের এলার্জি এবং পলিপাসের সমস্যা উদ্ভব হয়। তবে এ সমস্যা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধান করা সম্ভব। চলুন নিচে জেনে নেই কি সেই পদ্ধতি গুলো:
- প্রথমেই হালকা পানির সাথে লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম করে নাকের ভিতর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়া।
- খাবারের রসুন ব্যবহার করার পাশাপাশি রসুনের ভর্তা ও খাওয়া যেতে পারে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
- নাকে গরম পানির ভাব দিতে হবে। সাথে আদাম মিশিয়ে চা খেতে হবে।
- যেসব খাবারে অ্যালার্জি আছে সেই সব খাবারগুলো অবশ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
- নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করাও যেতে পারে।
এই ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করলে আপনার নাকের পলিপাসের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
শেষের কথা: নাকের পলিপাস দূর করার উপায়-নাকের পলিপাসের ওষুধ
সম্মানিত পাঠক বন্ধু আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করলাম নাকের পলিপা সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনি যদি পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই নাকের পলিপাস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। অনেক বন্ধু আছে যারা এ সমস্যায় ভোগে। তাদের জানানোর স্বার্থে এবং উপকারের স্বার্থে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন। আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল লিখে থাকে। তাই নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url