হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়-হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ

হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়/ হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ

সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত পাঠক, আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব হিট স্ট্রোক সম্পর্কে। হিট স্ট্রোক আমাদের সবারই প্রায় চেনা। এই আর্টিকেলে আলোচনা করব হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়, হিট স্ট্রোক কেন হয়, হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে। সুতরাং পোস্টটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে করবেন।

পোস্ট সূচীপত্র: হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়/ হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ

  • ভূমিকা
  • হিট স্ট্রোক কী?
  • হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়ে থাকে?
  • হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী কী?
  • হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কী?
  • হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কী করণীয়?

ভূমিকা:হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়/ হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

গরমের উৎপাতের দিশেহারা অবস্থা হয়ে পড়ে মানুষ। নানা রকম অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ এই গরমে। তাই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে ছোট বড় অনেকে। এই আর্টিকেলে হেট ইস্ট্রো প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব বিস্তারিত।

আরো পড়ুনঃ কেন বুক ধড়ফড় করে? বুক ধড়ফড় করার ১৫ টি কারণ।

হিট স্ট্রোক কী?

হিট স্ট্রোক গরমের সময়ের একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা যখন বেড়ে যায়, তখন হিট স্ট্রোক হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। 

সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে রক্তেনালী প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না যখন কেউ প্রচুর গরমে আদ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান করে এবং পরিশ্রম করে। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদ সীমা ছাড়িয়ে যায় তার ফলে হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে।

হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়ে থাকে?

প্রচন্ড গরমে ও তাপমাত্রার কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে মাঝে মাঝে কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যেমন:-

১. যারা দিনের বেলায় প্রচন্ড রোদে পরিশ্রম করে, তাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

২. শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম হয়, তখন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায় বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন। তাই তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৩. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের কারণ হতে পারে হিট স্ট্রোক। যেমন প্রসাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষন্নতার ওষুধ মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।

৪. শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

ছবি

হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণগুলো কী কী?

শরীরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোক এর আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট স্ক্রাম্প হতে পারে। হিট স্কাম্পের কারণে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। শরীর দুর্বলতা অনুভব করে এবং প্রচন্ড পিপাসা লাগে। এরপরের ধাপ হল স্বাস্থ্যশ্বাস, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব আচরণগত সমস্যা শরীর ঝিমঝিম করা ইত্যাদি। এগুলোর ক্ষেত্রে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে ঠিক কিন্তু শরীর ঘামতে থাকে। এ অবস্থা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এই অবস্থাগুলো কারণে হিট স্ট্রোক হতে পারে। হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ গুলো হল:-

#শরীরের রক্তচাপ কমে গেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

#হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হলো নিঃশ্বাস দ্রুত হয়।

#হিট স্ট্রোক হওয়ার পূর্ব লক্ষণ হল ত্বক লালচে হয় ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

#ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হিট স্ট্রোক হয়।

#হিট স্ট্রোক হওয়ার আগে প্রস্রাব কমে যেতে পারে।

#রোগীর ছোঁকেও চলে যায় এমন কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়।

#মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালোসিনেশন খিচুনি ইত্যাদি হয়ে থাকে হিট স্ট্রোকের আগে।

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কী?

আসছে গরমই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে হিট স্ট্রোক বিপদ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। কি সেই সর্তকতাগুলো চলুন জেনে নেই।

১. যতদূর সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে বা ঘরের ভিতরে অবস্থান করতে হবে।

২. ঢিলেঢালা পোশাক পড়তে হবে সাদা রঙের পোশাক পরা ভালো।

৩. যারা ছায়ার বাইরে কাজ করেন তারা কে অবশ্যই খাতা ব্যবহার করতে হবে।

৪. বাইরে গেলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

৫. প্রচুর তরল জাতীয় জিনিস পান করতে হবে। প্রচন্ড গরমে শরীর ভেঙে শরীরে লবণ বের হয়ে যায়। তাই লবণের ঘাটতি পূরণ করতে স্যালাইন খেতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে। খাবার স্যালাইন, ফলের রস লাচ্ছি ইত্যাদি খেতে পারেন। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

৬. যে খাবারগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন চা কফি ইত্যাদি।

৭. প্রচন্ড রোদে কাজ না করে সকাল সকাল কাজ করতে হবে। ঠান্ডা সকালে কাজ করতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে। সাথে সাথে প্রচুর পানিও সেলাইন পান করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ প্রেসার লো হলে কি করবেন? প্রেসার লো হলে ১৫টি কাজ বাধ্যতামূলক।

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কী করণীয়?

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক অবস্থায় যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।সেক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো:-

#ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছতে হবে সম্ভব হলে গোসল করতে হবে।

#ঠান্ডার স্থানের দ্রুত চলে যেতে হবে যদি সম্ভব হয় তাহলে ফ্যান অথবা এসি ব্যবহার করতে হবে।

#সেই অবস্থাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে সাথে খাবার স্যালাইন থাকলে খেতে হবে তবে চা কফি পান করা যাবে না।

ছবি

কিন্তু যদি হিট স্ট্রোক হয়ে যায় তাহলে রবিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে ঘরে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সাথে যারা থাকবেন তাদের করণীয়

#রোগীকে দ্রুত ঠান্ডা স্থানে নিয়ে যান।

#হিট স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর কাপড় খুলে দেন।

#হেট স্টোরি আক্রান্ত রোগীকে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে নিন।

#রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাবার স্যালাইন দিন।

#সম্ভব হলে বগলে বা পুঁচকিতে বরফ দিতে হবে।

#সময় বিলম্ব না করে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।

#খেয়াল করবেন হেট স্ট্রোকে অজ্ঞান হয়ে রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস বা নাড়ী চলছে কিনা।

#প্রয়োজন হলে কৃত্রিম উপায়ে নারী চলাচল ব্যবস্থা করতে হবে।

মন্তব্য:হিট স্ট্রোক রোধে করণীয়/ হিট স্ট্রোকের কারণ ও লক্ষণ

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আশা করি পোস্টটি পড়ে হিট স্ট্রোকের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অবশ্যই হিট স্ট্রোক রোধে এই কাজগুলো বা সতর্কতামূলক অবলম্বন করবেন। সম্মানিত পাঠক, পোস্টটি জনস্বার্থে শেয়ার করবেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url