প্রাকৃতিক ভাবে কিডনির পাথর দূর করুন এই উপায়ে
প্রাকৃতিক ভাবে কিডনির পাথর দূর করুন এই উপায়ে
সম্মানিত পাঠক আসসালামুয়ালাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। সম্মানিত পাঠক আজকে এই আর্টিকেল আলোচনা করব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিডনিতে পাথর সম্পর্কে। কিডনিতে পাথর কেন হয়, কিডনিতে কোন ধরনের পাথর হয় এবং কিডনিতে পাথর প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে দূর করা যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল হতে চলেছে। সুতরাং আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: প্রাকৃতিক ভাবে কিডনির পাথর দূর করুন এই উপায়ে
- সূচনা
- কেন কিডনিতে পাথর হয়?
- কিডনিতে কোন ধরনের পাথর জমে থাকে?
- প্রাকৃতিকভাবে কিডনির পাথর দূর করতে করণীয়
- তিনটি পানির সাহায্যে পাথর বেরিয়ে আসে
- কিডনির পাথর থেকে রক্ষা পেতে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকবেন
- মন্তব্য
সূচনা: প্রাকৃতিক ভাবে কিডনির পাথর দূর করুন এই উপায়ে
মানব দেহের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। কিডনি যেমন একদিকে দেহের সমস্ত বর্জ্য পদার্থকে পরিশুদ্ধ করে তেমনি বিভিন্ন খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও সহযোগিতা করে কিডনি। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি যদি না পান করেন তাহলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে। কিডনিতে পাথর জমার ক্ষেত্রে বয়সের কোন ভেদাভেদ নেই। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন অনিয়মিত খাওয়া দাওয়ার অভ্যাস বিভিন্ন কারণে কিডনিতে পাথর জমে থাকে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি কিভাবে ভালো রাখবেন? কিডনি ভালো রাখার উপায় জেনে নিন
কেন কিডনিতে পাথর হয়?
সম্মানিত পাঠক বন্ধু আমরা প্রথমেই জানব কিডনিতে পাথর কেন হয় বা কিডনিতে পাথর হওয়ার মূল কারণ গুলোই বা কি? চলুন প্রথমেই জেনে নি ই কেন কিডনিতে পাথর হয়? কিডনিতে পাথর মূলত চারটি কারণে হয়ে থাকে সেই কারণগুলো হল:-
- তরল কম গ্রহণ করা বা কঠোর ব্যায়ামের কারণে ডিহাইড্রেশন হয়।
- প্রস্রাবের বহিঃপ্রবাহে যেকোনো ধরনের বাধা প্রদানের ক্ষেত্রে।
- মূত্রনালীতে সংক্রমণ হয়ে থাকলে।
- বিপাকের অস্বাভাবিকতার কারণে প্রস্রাবের সংমিশ্রণে পরিবর্তন হয়ে থাকলে।
কিডনিতে কোন ধরনের পাথর জমে থাকে?
কিডনিতে যে পাথরগুলো জমে সেগুলোকে বলা হয় রেনাল পাথর বা নেফ্রোলিথিয়াসিস বলা হয়। এই পাথরগুলি কঠিন বর্জ্য পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়। এই পাথরগুলো তৈরি হয় সাধারণত ক্যালসিয়াম অক্সালেট, স্ট্রুভাইট, ইউরিক অ্যাসিড এবং সিস্টাইন মিলে। কিডনিতে ছোট ছোট পাথর জমা যদিও খুব জটিল সমস্যা নয় তারপরেও এই সমস্ত ছোট ছোট পাথরগুলো মুত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
যদি কিডনিতে অত্যাধিক পাথর জমে থাকে তাহলে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। যেমন- পেটে ব্যথা, রক্তবর্ণের প্রসাব, কিডনির অবস্থানে (কোমরের পিছন দিকে) ব্যথা, বমিসহ রক্তপাতও হতে পারে। কিডনির অসুখ ধরা পড়ে সাধারণত অনেক দেরিতে। একটি কিডনি যদি বিকল হয়ে যায় তবুও অন্যটি দিয়ে কাজ চালানো সম্ভব। ফলে কিডনির রোগ আজ পাওয়া যায় না আগে থেকে। সেজন্যই কিডনি ভালো রাখতে হলে অবশ্যই সচেতনতার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে জরুরি ভূমিকা প্রদান করা দরকার।
প্রাকৃতিকভাবে কিডনির পাথর দূর করতে করণীয়
প্রাথমিক পর্যায়ে যদি কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের মাধ্যমে কন্ট্রোলে রাখা যায়। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক কয়েকটি পদ্ধতির অনুসরণ করলে কিডনিতে পাথর তৈরির আশঙ্কাটা কমে যায়। যদিও পাথর হয়ে যায় তারপরেও এই সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করলে প্রসাবের সাথে পাথরগুলো বের হয়ে আসে।
পানি
কিডনি ভালো রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার বিকল্প নেই। চিকিৎসা করা পরামর্শ দিয়ে থাকেন কিডনির পাথর নির্মূল করার জন্য অবশ্যই প্রচুর পানি পান করুন। কেননা পানি পান করা ছাড়া কিডনির ভালো রাখার বিকল্প কিছুই নেই। পানির চাপে মুত্রের মাধ্যমে পাথরগুলো বেরিয়ে আসে তবে কফি বিয়ার চা কমলার রস কমল পানীয় ইত্যাদি পান করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
বিভিন্ন চিকিৎসকের মতে কিডনির পাথর যদি খুব বড় না হয় বা খুব সমস্যার সৃষ্টি না করে তাহলে তিনটি প্রাণী পান করা যেতে পারে। চলো নিচের জেনে নেই কোন তিনটি পানির সাহায্যে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে কিডনির জমা পাথর।
তিনটি পানির সাহায্যে পাথর বেরিয়ে আসে
লেবুর পানি
কিডনির পাথর বের করতে হলে অবশ্যই লেবুর পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন সকালে উঠেই উষ্ণ জলে লেবু এবং মধু মিশিয়ে দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কেননা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর এই পানীয় কিডনিতে থাকা পাথরগুলোকে ছোট টুকরো করে ভেঙে দিতে পারে।
দুধ
কিডনিতে জমে থাকা পাথর গলিয়ে বের করে নিয়ে আসতে দুধ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম। তাই দাঁত, হাড়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি দুধ খেলে কিডনিতে থাকা পাথরও নির্মূল হয়।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
লেবু যদি খেতে না পারেন তাহলে তার পরিবর্তে অবশ্যই অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খান। হালকা গরম জলে দু’টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত খেতে থাকুন। দেখবেন কিডনিতে থাকা পাথর মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে চলে আসছে অনায়াসেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা যেন বেড়ে না যায়।
সে ক্ষেত্রে শরীরে পিএইচের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। অনেক ফল এবং সবজি রয়েছে যেগুলোতে সাইট্রিক অ্যাসিড একটি জৈব অ্যাসিড পাওয়া যায়। বিশেষ করে সাইট্রাস ফলে বেশি পাওয়া যায়। লেবুতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সাইট্রিক অ্যাসিড। সাইট্রিক অ্যাসিড দুটি উপায়ের মাধ্যমে কিডনি পাথর প্রতিরোধ করতে পারে-
১. সাইট্রিক এসিড খাওয়ার ফলে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে যায় ফলে, নতুন পাথর গঠনের ঝুঁকি কমাতে পারে।
২. পাথর বড় হওয়া রোধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্ফটিকগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। ফলে আপনার ডায়েটে বেশি সাইট্রিক অ্যাসিড পাওয়া যায় এমন ফল যেমন- আঙ্গুর, কমলা, আমলকি, লেবু ইত্যাদি যোগ করুন।
অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কম খান
অক্সালেট (অক্সালিক অ্যাসিড) একটি অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট, যেটা উদ্ভিদজাতীয় অনেক খাবারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে শাক, ফল, সবজি এবং কোকো। মুলা শাক পালং শাক, চার্ড, ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে পাথর গঠন করতে পারে এবং প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হলে আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের শোষণকেও বাধা দিতে পারে।
প্রসাবে অক্সালের নির্গমন বৃদ্ধি পায় যখন শরীরে অক্সালেটের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন। যা ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্ফটিক গঠনের প্রবণতা বাড়ায়। অক্সালেট ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজগুলো একসঙ্গে হয়ে তখন কিডনিতে পাথর জমাতে সাহায্য করে। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় কিডনিতে পাথর ধরা পড়লে, চিকিৎসকরা অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার কমাতে বলেন।
আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ সমূহ জেনে নিন
কিডনির পাথর থেকে রক্ষা পেতে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকবেন
সম্মানিত পাঠাও আমরা ইতিপূর্বে জানতে পারলাম কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ এবং কিডনিতে কোন পাথরগুলো জমে সে সম্পর্কে। সম্মানিত পাঠক এই পর্বে আলোচনা করব কিডনির পাথর থেকে রক্ষা পেতে যেসব খাবার থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে সেই সব খাবার সম্পর্কে।
অতিরিক্ত চিনি দেওয়া পানি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন তার সাথে সাথে ঠাণ্ডা জাতীয় পানি এবং প্যাকেট বন্দি ফলের রস। কারণ এগুলো কিডনিতে পাথর তৈরি করতে সাহায্য করে। পরিবারের কারো যদি কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে লবণ খাওয়া কমাতে হবে এছাড়াও বিশেষ করে কাঁচা লবণ একেবারেই এড়িয়ে চলুন।
তাছাড়াও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কফি খাওয়া ভালো নয়। প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া যাবেনা। দিনে দু এক কাপ চা খাওয়া ঠিক আছে কিন্তু পরিমাণ বেশি হলে পাথর যেমন আশঙ্কা বাড়ে।অত্যাধিক পরিমাণে ভাজা জিনিস খাওয়ার অভ্যাস কিডনিতে পাথর জামার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) সম্পূরকগুলো কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে প্রস্রাবে অক্সালেটের নিঃসরণ বাড়তে পারে। বয়স্ক পুরুষ এবং মধ্যবয়সী পুরুষদের নিয়ে করা সুইডিশ গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে থাকে যারা ভিটামিন সি বেশি খায়। তবে সব ধরনের ভিটামিন সি জাতীয় খাবার ঝুঁকির কারণ নয়। যেমন- লেবু খাওয়া যেতে পারে।
অনেকে বলে ক্যালসিয়াম দাঁড়ায় কিডনির পাথর তৈরি হয় সুতরাং ক্যালসিয়াম কম খেতে হবে এটা ভুল ধারণা। বরং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। যেমন- দুধ, পনির এবং টকদই ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস ।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা হলো ১০০০ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে ৫০-৭০ বয়সীদের জন্য ১২০০ মিলিগ্রাম। তাই প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে সবাইকে। প্রাণীজ প্রোটিন উৎস যেমন- মাছ-মাংস ও দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মত, ক্যালসিয়াম নিঃসরণ বাড়তে পারে যখন প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ উচ্চ হয় এবং সাইট্রেড এর মাত্রা কমে যায় তখন।
মন্তব্য: প্রাকৃতিক ভাবে কিডনির পাথর দূর করুন এই উপায়ে
সম্মানিত পাঠক কিডনির সমস্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা। কিডনির সমস্যার কারণে মানুষ মরে যেতে পারে। সুতরাং অবশ্যই কিডনির ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরী। সম্মানিত পাঠক এই পর্বে যে বিষয়গুলো আলোচনা করলাম আশা করি বিষয়গুলোর সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন।
সম্মানিত পাঠক আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস এন্ড ট্রিকস দিয়ে থাকি। সুতরাং অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url