ঈদুল আযহার আমল সমূহ-ঈদুল আযহায় কি আমল করতে হয়
ঈদুল আযহার আমল সমূহ-ঈদুল আযহায় কি আমল করতে হয়
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। সম্মানিত পাঠক আজকে এই পর্বে আলোচনা করব ঈদুল আযহার আমল সমূহ কি কি সেই নিয়ে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। সুতরাং আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্র:ঈদুল আযহার আমল সমূহ-ঈদুল আযহায় কি আমল করতে হয়
- ঈদুল আযহার দিনের আমলসমূহ
- রবানীর শব্দের উৎপত্তি
- ঈদুল আযহার দিনের সুন্নত আমলগুলো কি কি?
- ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায়
- আরো জানা প্রয়োজন
- উপসংহার
ঈদুল আযহার দিনের আমলসমূহ
ইসলামের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এবং আত্মত্যাগের জন্য ইবাদত হচ্ছে ঈদুল আযহা ও কুরবানী করা। প্রতিবছর আত্মত্যাগ ও মানবতার বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মার সামনে হাজির হয় পবিত্র ঈদুল আযহার উৎসব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ মহাসমারোহে পালিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা ও কুরবানি।
আরো পড়ুনঃ কুরবানীর ঈদ কোন মাসের কত তারিখে হবে-কুরবানীর ঈদ ২০২৪
কুরবানীর শব্দের উৎপত্তি
- আরবি করব বা কুরবান (قرب বা قربان) শব্দ থেকে উর্দূ ও ফার্সিতে কুরবানি শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ দাঁড়ায়-নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কুরবান হল সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ঈদের দিন প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করণীয় কাজ রয়েছে। নিজেকে সুন্দর পরিপাটি করে সাজিয়ে নেয়ার পর এ সমস্ত আমল গুলো করতে হয়।
ঈদুল আযহার দিনের সুন্নত আমলগুলো কি কি?
সম্মানিত পাঠকের পর্বে আমরা জানবো ঈদ উল আযহার দিনের সুন্নত সমূহ কি কি। চলুন এক নজরে জেনে নেই।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে মেশওয়াক করা,গোসল করা
- যথাসাধ্য উত্তম পোষাক পরিধান করা
- ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া
- ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলা
- পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া
- ঈদগাহে যাওয়া আসার রাস্তা পরিবর্তন করা
- ঈদগাহে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া
- একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা
- ঈদের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
- ঈদের নামাজের পর কোরবানি করা
- ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা
সম্মানিত পাঠক আমরা ইতিমধ্যে জানলাম ঈদের দিনে সুন্নত আমলসমূহ কি কি সেগুলো। চলুন সেই আমলগুলো এবার বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করা,মেসওয়াক করা
ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করা এবং মেসওয়াক করা উত্তম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ের সখ করা এবং গোসল করা সুন্নত।
ঈদের দিন উত্তম পোশক পরিধান করা
ঈদুল ফিতরের মতোই ঈদুল আযহা তেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর এবং সাধ্যের ভিতরে সবচেয়ে উত্তম যে পোশাকটি রয়েছে সেই পোশাক পরিধান করতে হবে। কেননা ঈদের দিনে উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। নবীজি (স) দুইই দেই ও জমাতে উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। হাদিস শরিফে আছে, ‘নবী করিম (স.) প্রতিটি ঈদে ডোরা-কাটা পোষাক পরিধান করতেন।’ (সুনানে বায়হাকি: ৬৩৬৩)
ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু না খেয়ে যাওয়া
ঈদুল আযহার দিন পানাহার ব্যাতিত ঈদগাহে গমন করা এবং নামাজের পর নিজের কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ঈদুল ফিতরের দিন কোনো কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না; আর ঈদুল আযহার দিন নামাজ না পড়ে কিছু খেতেন না। (জামে তিরমিজি: ৫৪২)
ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলা
ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলা সুন্নত।
এদিন উচ্চৈঃস্বরে তাকবির (الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، والله أكبر، الله أكبر، ولله الحمد ‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ) পড়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহকে স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষ এই তাকবীর উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে এবং মেয়েরা নীরবে পাঠ করবে। জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এ তাকবির পাঠ করবে।
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে যেতেন পায়ে হেঁটে। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। কোন অসুবিধা না থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতে হবে।
ঈদগাহে যাওয়া আসার রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নত
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি (স.) ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়া-আসার রাস্তা পরিবর্তন করতেন।’ (বুখারি: ৯৮৬)
ঈদগাহে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া
ঈদের দিন ঈদগাহে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সুন্নত।
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) হতে বর্ণিত, ‘রাসুল (স.) দুই ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় ফজল ইবনু আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্বাস, আলি, জাফর, হাসান, হোসাইন, উসামা ইবনু জায়দ, জায়দ ইবনু হারিসা, আয়মান ইবনু উম্মু আয়মান (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ও তাহলিল পাঠ করতে করতে বের হতেন। (সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৬৩৪৯)
ঈদের একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা
মহান আল্লাহ তা'আলা ঈদকে খুশি এবং দুঃখ কষ্ট রাগ ভুলে গিয়ে একত্রিত হওয়ার কথা বলেছেন। একটি হাদিসে এসেছে-জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘নবীজি (স.)-এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকুম’ ‘আল্লাহ আমার এবং আপনার যাবতীয় ভাল কাজ কবুল করুক’। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা-৫১৭)
ঈদের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা সুন্নত
ঈদের নামাজ শেষে খুতবা শোনা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবীজি (স.)-এর সঙ্গে আমি ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন: “আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শুনার জন্যে বসবে, আর যার চলে যাওয়ার ইচ্ছা, সে চলে যাবে।’ (ইবনু মাজাহ: ১০৭৩)
ঈদের নামাজের পর কোরবানি করা সুন্নত।
ঈদুল আযহার দিনে ঈদের নামাজ পড়ে এসে কুরবানী করা সুন্নত। ইবনে আজিব (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, আমাদের এই দিবসে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কাজ আমাদের তরিকা মতো হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে, তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোশত, কোরবানি নয়। (সহিহ বুখারি: ৯৬৮; সহিহ মুসলিম: ১৯৬১; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৯০৭)
ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায়
ঈদের নামাজের আগে এবং পরে বা ঈদের নামাজের যে কোন স্থানে যেকোনো ধরনের নফল আদায় করা মাকরুহ। তবে ঈদের নামাজের পরে ঈদগাহ থেকে বাড়ি এসে দুই রাকাত নফল আদায় করা সুন্নত।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবী করিম (স.) ঈদের নামাজের আগে কোনো নামাজ পড়তেন না। তবে নামাজের পর ঘরে ফিরে করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১২৯৩)
আরো জানা প্রয়োজন
ঈদের নামাজের কোন একামত নেই কোন আজান নেই। ঈদের নামাজের কোন কাজা নেই। ঈদের নামাজ সহিহ হতে হলে অবশ্যই জামাতের সহিত নামাজ পড়তে হবে। ঈদুল আযহার নামাজ ঈদুল ফিতরের নামাজের অপেক্ষায় খুব দ্রুত পড়তে হয়। যারা নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করবে, তার জন্য ঈদের নামাজ ও কোরবানির জন্তু জবেহ করার পর নখ ও লোম কাটা মোস্তাহাব। ফলে হাজিদের সাথে তার সামঞ্জস্য ঘটে।
আরো পড়ুনঃ কুরবানী করার শর্তাবলী-কিভাবে কুরবানী করতে হয় জেনে নিন
উপসংহার: ঈদুল আযহার আমল সমূহ-ঈদুল আযহায় কি আমল করতে হয়
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ঈদ উদযাপন কে ইবাদতের সহিত বানিয়ে দিন। সকল প্রকার হারাম ও অশ্লীল কাজ থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।। মহান আল্লাহতায়ালা যেন মুসলিম উম্মাহকে ঈদুল আযহার দিনের সমস্ত আমল সমূহ করার তৌফিক দান করুন আমীন।
আমাদের শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক বন্ধু,আশা করি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ঈদুল আযহার দিনের আমল গুলো সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন এবং আমাদের সাথেই থাকবেন।ধন্যবদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url