ঈদুল ফিতরের ফজিলত-ঈদের দিনে করণীয় কী?

ঈদুল ফিতরের ফজিলত-ঈদের দিনে করণীয় কী?

সম্মানিত পাঠক আসসালামুয়ালাইকুম। আজকে আপনাদের সাথে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ঈদুল ফিতরের ফজিলত এবং ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় কাজ সম্পর্কে। ঈদুল ফিতরের নির্দিষ্ট ফজিলত রয়েছে এবং ঈদুল ফিতরের দিনে নির্দিষ্ট কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা উত্তম। সেই সমস্ত কাজগুলো নিয়ে এই আর্টিকেল আলোচনা করব। তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

পোস্ট সূচিপত্র: ঈদুল ফিতরের ফজিলত-ঈদের দিনে করণীয় কী?

  • সূচনা
  • ঈদুল ফিতরের ফজিলত
  • ঈদের দিনের সুন্নাত আমলসমূহ
  •  ঈদের সুন্নাতসমূহ‌ কি কি
  • ঈদের দিনে যে কাজগুলো করা যাবে না
  • মন্তব্য

সূচনা: ঈদুল ফিতরের ফজিলত-ঈদের দিনে করণীয় কী?

সম্মানিত পাঠক পবিত্র রমজান মাসে মুসলমান ধর্মালম্বীরা একমাস রোজা রাখার পর তাদের খুশির পবিত্র ঈদুল ফিতর আসে। দীর্ঘ এক মাস সংযম থাকার পর খুশির ঈদ আছে। সেই ঈদের দিনে হাদিসের উল্লেখিত কিছু সুন্নাত কাজ রয়েছে। যে কাজগুলো আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম করতেন। এই পর্বে জানব ঈদের দিনের সুন্নত কাজ সমূহ কি কি এবং বিস্তারিত আলোচনা করব। তো চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

আরো পড়ুনঃ রোজার ফিদিয়া কি-কখন ও কীভাবে দিতে হয়

ঈদুল ফিতরের ফজিলত

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ফজিলত অনেক মাহাত্ম্যপূর্ণ। ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয় ইসলামী হিজরি বছরের শেষ মাস রমজান মাসের শেষে অর্থাৎ শাওয়াল মাসের প্রথম দিন। ঈদের দিন মুসলিম সমাজ একত্রে হয়ে তাদের ভালোবাসা এবং কৌশল বিনিময় করে থাকে এবং তাদের সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত করে। ঈদুল ফিতরের আরেকটি অন্যতম তাৎপর্য হলো ফিতরা প্রদান। 

ছবি

ওটা মুসলিম বিশ্ব সমস্ত মুসলিম ধর্মালম্বী মানুষ সারা মাস রোজা রাখার পর ফিতরা আদায় করে থাকে। এটি মহান আল্লাহ তায়ালার একটি আদেশ। পবিত্র রমজান মাস পালনের মধ্য দিয়ে রহমত বরকত এবং মাগফেরাত দিয়ে থাকেন মহান আল্লাহতালা। এছাড়াও ঈদুল ফিতরের দিন মুসলিমরা তাদের গুনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করেন।

ঈদের দিনের সুন্নাত আমলসমূহ

১. ঈদের দিন সকালে পবিত্রতা সহিদ গোসল করা এবং উত্তম পোশাক পরিধান করে সুগন্ধি ব্যবহার করা

ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা মুস্তাহাব। কারণ ঈদের দিন সকল মানুষ নামাজ আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুআত্তা ইমাম মালেক ১/১৭৭)

সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. বলেন, ঈদুল ফিতরের সুন্নত তিনটি :

১।পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

২। ঈদগাহের দিকে রওনা দেওয়ার পূর্বে কিছু আহার করা

৩। গোসল করা। (ইরওয়াউল গালীল ৩/১০৭)

তার সাথে সাথে সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং উত্তম পোশাক পরিধান করা ও মুস্তাহাব।

ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত,তিনি দু’ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। (ফাতহুলবারী ২/৫১০)

ইমাম মালেক রহ. বলেন, আমি উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে শুনেছি, তারা প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজসজ্জাকে মুস্তাহাব বলেছেন। 

২. ঈদের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খাবার গ্রহণ 

ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা। ঈদুল আযহা তে সুন্নাত হল ঈদের নামাজের পরে কোরবানির গোস্ত দ্বারা আর গ্রহণ করা।

একটি হাদিসে পাওয়া যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সকালে কিছু খেয়ে তারপর বের হতেন। আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাযের পূর্বে কিছু খেতেন না। নামায থেকে ফিরে এসে কোরবানির গোশত দ্বারা আহার গ্রহণ করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪২২)

৩. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

ঈদের দিনে সকাল সকাল ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া উত্তম। যাতে প্রথম কাতার অর্থাৎ ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে জায়গা পাওয়া যায় এবং ভালো কাজ দ্রুত করার সব অর্জন করা যায় এছাড়াও নামাজের অপেক্ষায় থাকার স্বভাব লাভ করা যায়।

আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (সুনানুত তিরমিযী হাদীস নং ৪৩৭, বাদাইউস সানায়ে’ ১/৬২৫)

৪। ঈদগাহের যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করা

ঈদগাহে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করা সুন্নত। ঈদগাহে যে পথ দিয়ে যেতে হবে আবার আসতে হবে অন্য পথ দিয়ে।

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৮৬)

৫. ঈদের তাকবীর আদায়

ঈদগাহে যাওয়ার পথে তাকবীর পাঠ করা মুস্তাহাব।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে,

হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। এমনকি ঈদের নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। নামায আদায় শেষ হয়ে যেত তখন আর তাকবীর পাঠ করতেন না। (সুনানে দারা কুতনী ২/৩৪)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ইবনে উমর রা. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদগাহে এসে ইমামের আশা পর্যন্ত এভাবে তাকবীর পাঠ করতেন। (সুনানে দারাকুতনী ২/৩৩; আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী ৩/২৭৯)

 ঈদের সুন্নাতসমূহ‌ কি কি

১। ঈদের দিনের প্রথম সুন্নত হচ্ছে অন্যান্য দিনে তুলনায় আগে আগে ঘুম থেকে ওঠা। (সুনানে বাইহাকী কুবরা, হাদীস ৬১২৬)

২। সকালে পবিত্রতার সহিত গোসল করা।(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩১৫)

৩। শরীয়ত সম্মত সাজগোজ করা। (বুখারী শরীফ ৯৪৮)

৪। সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৪৮)

৫। পোশাকে সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৬০)

৬। ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার বা ঈদগাহে নামাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যেমন খেজুর। তবে ঈদুল আজহাতে  না খেয়ে নিজের কোরবানীর গোশ্ত দ্বারা আহার গ্রহণ করা উত্তম। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫৩)

৭। খুব সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ১১৫৭)

৮। ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করা। (সুনানে দারা কুতনী, হাদীস ১৬৯৪)

৯। ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অজুহাতে মসজিদে আদায় না করা। (সহীহ বুখারী, হাদসি ৯৫৬)

১০। এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৮৬)

১১। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। (সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ১১৪৩)

১২। ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিম্নোক্ত তাকবীর পাঠ করা :

اَللهُ َكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَاإِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الحَمْدُ

(আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।)

আরো পড়ুনঃ সিয়াম কি-কি কি কাজ করলে সিয়াম পালন হয় না।

ঈদের দিনে যে কাজগুলো করা যাবে না

ঈদ মুসলিম জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। মুসলিম জাতির রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। তাই ঈদের মতো একটি পবিত্র উৎসবে মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবেই। কিন্তু ঈদ উৎসব এলে আমরা এর ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করি। অপসংস্কৃতির প্রবাহে পবিত্র উৎসবের মান চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়। নিম্নে আমরা জানব ঈদের দিনে কি কি করা যাবে না বা পরিত্যাগ করা বা এড়িয়ে চলার বিষয়বলি সম্পর্কে।

*ইসলাম সংস্কৃতি বিবর্জিত আচার আচরণ ও সভ্যতা সংস্কৃতির প্রদর্শন করা যাবে না।

*মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না।

*গান বাজনা ও অশ্লীল সিনেমা নাটক প্রদর্শন করা যাবে না।

*অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অনর্থক সময় নষ্ট করা।

*ঈদের সময় নারীদের যত্রতত্র খোলা মেলা উন্মুক্ত বিচরণ করা যাবে না।

*জামাতের সহিত ফরজ নামায আদায়ে অলসতা করা যাবে না।

*অমিতব্যয়ী হওয়া যাবে না।

*মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না

*নারী পুরুষের পারস্পারিক বেশ ভুসা প্রদর্শন করা যাবে না।

*ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না।

*ঈদের নামাজ আদায় না করে আনন্দ ফুর্তি করা যাবে না। 

*বিনোদন স্পটগুলোতে নারী পুরুষের অবাধ যাতায়াত করা যাবে না।

*জুয়া খেলা ও আতশবাজি ফুটানো যাবে না।

মন্তব্য: ঈদুল ফিতরের ফজিলত-ঈদের দিনে করণীয় কী?

সম্মানিত পাঠক আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করলাম। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ফজিলত এবং করণীয় বর্জনীয় কিছু কাজ সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। সম্মানিত পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ইসলামিক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। নিয়মিত ইসলামিক বিষয়ে আর্টিকেল পড়তে আমাদের মোটিভেশন আইটির সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url