মাসিকের সময় কেন তলপেট ব্যথা করে-মাসিকের ব্যথা কমানোর ৭টি উপায়

মাসিকের সময় কেন তলপেট ব্যথা করে-মাসিকের ব্যথা কমানোর ৭টি উপায়

সম্মানিত কাটো আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছেন। আজকে আপনাদের সামনে একটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। সেই বিষয়টি হচ্ছে মেয়েদের মাসিকের ব্যথা। মেয়েদের মাসিকের সময় অনেক ব্যথা হয়ে থাকে। আবার কারো কারো তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যথাগুলো কেন হয় বা এই ব্যথাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় গুলোই বা কি? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে এই আর্টিকেল আলোচনা করব। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খবর গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

পোস্ট সূচীপত্র: মাসিকের সময় কেন তলপেট ব্যথা করে-মাসিকের ব্যথা কমানোর ৭টি উপায়

  • সূচনা 
  • পিরিয়ডের/মাসিকের সময় ব্যথা হয় কেন?
  • মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয়?
  • যেসব অসুস্থতার কারণে তীব্র মাসিকের ব্যথা হয়
  • মন্তব্য
  • সূচনা: মাসিকের সময় কেন তলপেট ব্যথা করে-মাসিকের ব্যথা কমানোর ৭টি উপায়

    মেয়েদের পিরিয়ডের বা মাসিকের দিনগুলোতে হরমোনের ওঠা নামা করে। এই সময় মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে থাকে। মাসিকের সময় বেশিরভাগ নারীরাই পেট ব্যথা কোমরে অসহ্য ব্যথা বমি বমি ভাব ক্লান্তি এসব সমস্যা হয়ে থাকে এই সময়টাতে। তবে মাসিকের সময় যে ব্যথা হয়ে থাকে সেই ব্যথা বিভিন্ন নারীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

    পিরিয়ডের/মাসিকের সময় ব্যথা হয় কেন?

    ছবি

    ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক একজন গবেষক মাসিকের ব্যথা নিয়ে গবেষণা করে বলেন, ৩৫ থেকে ৫৫ শতাংশ নারীর ঋতুস্রাব যন্ত্রণাদায়ক হয়, এবং এদের মধ্যে অনেকে যন্ত্রণা এত বেশি হয় যে দৈনন্দিন জীবন যাপন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জরায়ু গঠনকারী যে টিস্যু রয়েছে সেই টিস্যু থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যার কারণে মাসিকের সময় ব্যথা হয়ে থাকে। পিরিয়ডের সময় প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস নামে এক ধরনের পদার্থ জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে।

    আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের ১৭টি কারণ-অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা

    মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয়?

    মাসিকের সময় মেয়েদের তলপেটের ব্যথাটা মেয়েদেরকে সব থেকে বেশি ভুগাই। তলপেটে ব্যথা হয় না এরকম নারীর সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এই ব্যথা কেন হয় তা কি আমরা জানি? আমরা অনেকেই আছি যে মাসিকের সময় ব্যথা কেন হয় এ সম্পর্কে জানি না। মাসিকের সময় আসলে কতটুকু ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক চলুন নিচে জেনে নেই।

    আমরা আগে জেনেছি পিরিয়ডের ব্যথা হয় মূলত জরায়ুতে সংকোচনার কারণে। এই ব্যথা শুরু হয় পিরিয়ডের ঠিক আগ মুহূর্ত থেকে। তলপেটে ব্যথা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথা খুবই তীব্র হয়ে থাকে যেটা অস্বাভাবিক ব্যথা। এই অস্বাভাবিক ব্যথার কারণ গুলো কি? এই পর্বে জানবো অস্বাভাবিক ব্যথার কারণ গুলো আসলে কি।

    মাসিকের সময় জরায়ুর সংকোচন হয়ে, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোনের মাধ্যমে। যাদের শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা বেশি তাদের তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। আবার কারো কারো কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। তবে অনেকেরই এই গুরুতর পিরিয়ডের ব্যথা কোন অন্তর্নিহিত অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।

    যেসব অসুস্থতার কারণে তীব্র মাসিকের ব্যথা হয়

    ১. সার্ভাইকাল স্টেনোসিস

    সারভাইকাল স্টেনোসিস, যার অর্থ বন্ধ যোনিপথ। এতে করে যোনিপথ সরু বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। যে কেউ সারভাইকাল স্টেনোসিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। বয়সের সাথেও সাথে ও এই অবস্থা তৈরি হতে পারে। এই রোগের কারণে মেয়েদের শরীর থেকে ঋতুস্রাব বা মাসিকের রক্ত বের হতে বাধা প্রদান করে। যার কারণে মাসিক খুব হালকা ও অনিয়মিত হয়ে থাকে।সারভাইকাল স্টেনোসিসের কারণে প্রজননের ক্ষেত্রে সমস্যাও হতে পারে।

    ২. এন্ডোমেট্রিওসিস

    এন্ডোমেট্রিওসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা, যেখানে জরায়ুর কোষগুলো জরায়ুর বাইরে বড় হতে থাকে। কোমর ও তলপেটে ব্যথা (পেলভিক পেইন) হল এর সবচেয়ে বড় উপসর্গ। এর সাথে হতে পারে মাসিকে ভারী রক্তক্ষয়, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড, দুটো মাসিকের মাঝে রক্তপাত, পেটে ব্যথা, সহবাসের সময় ব্যথা, এবং গর্ভধারণে সমস্যা।

    ছবি

    ৩.ফাইব্রয়েড

    জরায়ুর ভিতরে বায়োমেট্রিয়াম নামক একটি জায়গা জায়গাই ছোট্ট বীজের মত শুরু করে বৃহদাকার ফাইব্রয়েড  তৈরি হয়ে থাকে। কোন ধরনের লক্ষণ ছাড়াই এক বা একাধিক ফাইব্রয়েড থাকতে পারে। কিন্তু উপসর্গ দেখা দিলে সেগুলোর ধরণ এবং তীব্রতা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের সংখ্যা, ও তাদের আকার,অবস্থানের ওপর। ফাইব্রয়েড এর কারণে তলপেটে তীব্র ব্যথা ছাড়াও কোমরে ব্যথা, পিঠ ব্যথা, পা ব্যথা, মাসিকে ভারী রক্তক্ষয়, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড ইত্যাদি হয়ে থাকে।

    ৪.পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা  (PCOS)

    সন্তান জন্মদানের সক্ষম নারীদের প্রায় ১০% PCOS নামক হরমোনজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোগীদের শরীরে এন্ড্রোজেনের উচ্চ মাত্রা এবং অনিয়মিত পিরিয়ড হতে দেখা দেয়।

     PCOS এর লক্ষণগুলো হল:

     মাসিকে ভারী রক্তক্ষয়,  বৃদ্ধি এবং ওজন কমানোর সমস্যা, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড, মুখ এবং শরীরের অতিরিক্ত চুল, ওজনব্রণ,  ত্বকের কালো দাগ বিশেষ করে ঘাড় এবং কুঁচকির অংশে কালো দাগ, চুল পাতলা হওয়া বা চুল পড়া।

    ৫.জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি বা (IUD)

    জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা IUD হলো একটি ছোটো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যা আপনার জরায়ুতে ব্যবহার করা  হয়। অনেক ধরনের IUD পাওয়া যায়। এদের কোনো কোনোটিতে হরমোন থাকে, আবার কিছু কিছু থাকে হরমোন-মুক্ত। IUD সম্পূর্ণ নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। কিন্তু মাঝে মাঝে এই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে: তীব্র মাসিকের ব্যথা, অনিয়মিত মাসিক এবং মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত।

    ৬. পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (PID)

    PID হলো নারীর প্রজনন অঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এটি সাধারণত যৌনমিলনের কারনে সংক্রমিত রোগ, যেমন ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই রোগের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো কোমর ব্যথা। যৌন মিলনের ব্যথা, যৌন মিলনের সময় বা পরের রক্তপাত হওয়া, যৌনি দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া, জ্বর হওয়া, মাসিকের আগে ও পরে ছোপ ছোপ রক্ত পড়া, প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া করা এগুলো হলো পিআইডির রোগের আরো কিছু লক্ষণ।

    ৭.অ্যাডেনোমায়োসিস

    অ্যাডেনোমায়োসিসের কারণে জরায়ু ফুলে ওঠে। এই রোগের ক্ষেত্রে সবসময় উপসর্গ দেখা যায় না। তবে এর কারণে আপনি তীব্র তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়, যা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং সেইসাথে মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত বা দীর্ঘায়িত ত মাসিক হতে পারে।

    মাসিকের ব্যথা কমানোর সাতটি উপায়

    সম্মানিত পাঠক আশা করি উপরের আলোচনা থেকে মাসিকের সময় তলপেট ব্যথা করার বা তীব্র ব্যথা করার কারণ গুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আমরা এ পর্বে এখন আলোচনা করব মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে। নিম্নে ৭টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন উপায় গুলো পড়ে আসি।

    ছবি

    ১.হালকা ব্যায়াম করা

    পিরিয়ডের সময় পেটের ব্যথা কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে হালকা ব্যায়াম করা। হালকা ব্যায়াম করার মাধ্যমে পেট ব্যথার উপশম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সহজ-সরল যোগব্যায়াম অথবা হাঁটাচলা করতে পারেন। তবে এ সময় ভারি কোনো কাজ করা উচিত নয়। ব্যায়াম করার ফলে পেশির মোচড় কমতে প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে।

    ২. গরম পানির সেঁক দেওয়া

    মাসিকের ব্যথা কমানোর আরেকটি উপায় হচ্ছে গরম পানির সেঁক দেওয়া। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ব্যাগের মধ্যে গরম পানি নিয়ে পেট সেঁক দিতে পারেন। এছাড়াও গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও ব্যথা থেকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়।

    আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা জানুন-কমলায় কোন ভিটামিন থাকে

    ৩. কাঁচা অথবা পাকা পেঁপে খাওয়া

    পিরিয়ডের ব্যথার বাঁধার জন্য পেঁপে খুবই কার্যকর। তাই পিরিয়ডের সময় কাঁচা অথবা পাকা পেঁপে খেতে পারেন।

    ৪. ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করা

    পিরিয়ডের ব্যথার সময় পেটে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মালিশ করলে ব্যথা উপশম হয়ে যায়। এটি ব্যবহারের ফলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ব্যথা কমতে সাহায্য করে।

    ৫. আদার রস খাওয়া

    মাসিকের সময় তলপেটের ব্যথা কমাতে আদার রস খুবই উপকারী। এ সময় আদা চা পান করলেও খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি টুকরো টুকরো আদা মধু বাঁচিনের সঙ্গে বা গরম পানির সাথে খেতে পারেন তাহলে ব্যথা কমে যাবে।

    ৬.অ্যালোভেরা খাওয়া 

    অ্যালোভেরার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে পিরিয়ডের বা মাসিকের ব্যথা কমে যায়।

    ৭. প্রচুর পানি পান করা

    পিরিয়ড শুরু হলে প্রচুর পানি খেতে হবে। পানি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। মাসিকের সময় শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। সুতরাং অবশ্যই পানি শূন্যতা পূরণের জন্য বেশি বেশি পানি পান করা দরকার। সেক্ষেত্রে মাসিকের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

    মন্তব্য: মাসিকের সময় কেন তলপেট ব্যথা করে-মাসিকের ব্যথা কমানোর ৭টি উপায়

    নারীদের মাসিকের সময় ব্যথা হবে বা তীব্র ব্যথা হলে সহ্য করে নিতে হবে এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসাটা খুবই জরুরী। নারীদের সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে তার স্বাস্থ্য সন্তানের স্বাস্থ্য তথা সর্বোপরি তার পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাসিকের সময় ব্যথা হলে বা যদি বেশি ব্যথা হয় তাহলে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

    শেষের কথা 

    সম্মানিত পাঠক আশা করি মাসিকের ব্যথা কেন হয় এবং মাসিকের ব্যথা হওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আশা করি আর্টিকেলটি বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি। সম্মানিত পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url