শিশুর কৃমি হলে করণীয়-ছোট বাচ্চার কৃমির প্রতিরোধের উপায়
শিশুর কৃমি হলে করণীয়-ছোট বাচ্চার কৃমির প্রতিরোধের উপায়
সম্মানিত পাঠ ও বন্ধু আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আজকে এই আর্টিকেলে শিশুদের কৃমি কেন হয় শিশুদের কৃমি হলে কিভাবে বুঝবেন এবং শিশুদের কৃমির চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
পোস্ট সূচীপত্র: শিশুর কৃমি হলে করণীয়-ছোট বাচ্চার কৃমির প্রতিরোধের উপায়
- ভূমিকা
- কৃমি কী ও কেন হয়
- কৃমির বিভিন্ন ধরণ
- কৃমি হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে-
- শিশুর কৃমির লক্ষণ
- কৃমির চিকিৎসা
- শিশুদের কৃমি রোগ প্রতিরোধের উপায়
- মন্তব্য
ভূমিকা: শিশুর কৃমি হলে করণীয়-ছোট বাচ্চার কৃমির প্রতিরোধের উপায়
শিশুরা বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগে থাকেন। তার মধ্যে একটি অন্যতম ভয়ানক রোগ হলো কৃমি। শিশুদের মধ্যে কৃমির রোগটি অনেক দেখা যায়। শিশুর শারীরিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে কৃমি। শিশুর কৃমি কেন হয়, কীভাবে বুঝবেন ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
আরো পড়ুনঃ তীব্র গরমে নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিবেন-গরমে শিশুর যত্ন
কৃমি কী ও কেন হয়
সম্মানিত পাঠক প্রথমে আমরা জানবো কৃমি কি এবং কৃমি কেন হয় এই সম্পর্কে। কৃমি হল এক ধরনের পরজীবী। মানুষের শরীরে প্রয়োজন নেই এ ধরনের একটি পরজীবী হচ্ছে কৃমি। যা শরীরের ভেতরে বংশবিস্তার করে। সাধারণত খাদ্যনালীর নিচের অংশে, আবার কখনো কখনো লিভারে কৃমির সংক্রমণ বাড়তে পারে। কৃমির সংক্রমণ হলে শিশুরা খেতে চায় না। শিশুদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এছাড়াও রক্তস্বল্পতার কারণে শিশুদের গায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিছু কিছু কৃমি অন্ত্রে এমনভাবে থাকে যা খুব অল্প পরিমাণে হলেও রক্ত শুষে নিতে থাকে। লিভারে কৃমি হওয়ার কারণে জন্ডিস হয় অনেক শিশুদের। আমাদের দেশে ১০ বছরের নিচের শিশুরা কৃমিতে খুব বেশি আক্রান্ত হয়।
কৃমির বিভিন্ন ধরণ
কৃমির বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কৃমি রয়েছে। যেমন- গোল কৃমি, সুতা কৃমি, বক্র কৃমি ও ফিতা কৃমি। অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের সাধারণত "কৃমি" বলা হয়। কৃমি দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো। এরা হালকা হলুদ ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। পরিণত অবস্থায় একটি কৃমি ৬ থেকে ১৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কৃমি বিভিন্ন রকম হতে পারে।
কৃমি হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে-
সম্মানিত পাঠক আমরা এই পর্বে জানব কৃমি হওয়ার কারণ গুলো কি কি। চলুন ক্রিমি হওয়ার কারণগুলো জেনে নেই।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে শিশুদের কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়। পরিবারে একজনের কৃমি হলে অন্যদেরও হতে পারে। দূষিত পানি দূষিত খাবার অপরিষ্কার হাত মুখের কারণে কৃমি হয়ে থাকে। চলুন কি কি কারনে কৃমি হয় জেনে নেই।
- শিশুরা যখন খালি পায়ে চলাফেরা করে তখন শিশুদের কৃমি আক্রান্ত করে। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা খালি পায়ে থাকে, তাই সেখানে শিশুদের কৃমি বেশি হয়।
- ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন না থাকলে কৃমি হয়ে থাকে।
- অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা ময়লা-ধুলাবালিতে খেলাধুলা করছে, সেই অপরিষ্কার জীবাণুযুক্ত হাত বা আঙুল আবার মুখে দিচ্ছে। এতে কৃমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- প্রস্রাব-পায়খানা করার পর ঠিকমতো হাত না ধোয়ার কারণে শিশুদের কৃমি হয়ে থাকে।
- খাবার খাওয়ার আগে হাত না ধোয়ার কারণে শিশুদের কৃমি হয়ে থাকে।
- শিশুদের কৃমি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বাইরের অপরিষ্কার খাবার ও পানি খাওয়া।
- খাবার সঠিক নিয়মে রান্না না হলে সেই খাবার খেলে শিশুদের কৃমি হয়ে থাকে।
শিশুর কৃমির লক্ষণ
সম্মানিত পাঠক আমরা ইতিমধ্যে জানতে পারলাম কৃমি কি এবং কৃমি কি কি কারণে হয়ে থাকে এই বিষয়ে। এই পর্বে আলোচনা করব শিশুর কৃমি লক্ষণ গুলো কি কি সে সম্পর্কে। চলুন শিশুদের কৃমি হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো জেনে নেই।
১. শিশুদের কৃমির একটি লক্ষণ হচ্ছে শিশুর খাবারে রুচি কমে যায়, একদমই খেতে চায় না।
২. শিশুদের কৃমি হলে পেট ফুলে যায়, বদ হজম হয়।
৩. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয় শিশুদের কৃমি হলে।
৪. শিশুর কৃমি হলে শিশু ফ্যাকাশে হয়ে যায়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
৫. শিশু যদি কৃমিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৬. শিশুদের কৃমি হলে মলদ্বারে প্রচুর চুলকানি হয়, ইনফেকশনও হতে পারে।
৭. শিশুদের কৃমি হলে মলত্যাগের সময় কৃমি দেখতে পাওয়া যেতে পারে।
৮. শিশুর কৃমি হলে তকে এলার্জি দেখা দিতে পারে।কিছু কিছু কৃমি আছে, যেগুলোর কারণে ত্বকে অ্যালার্জিক সমস্যা হয়।
কৃমির চিকিৎসা
কৃমির চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই নজর রাখতে হবে শিশুর যাতে কৃমি না হয় সেদিকে। আর যদি কৃমি হয়েই যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। কৃমি শুধু শিশুর হবে তা নয়, সব বয়সের মানুষেরই কৃমি হতে পারে। এজন্য যে বাচ্চার কৃমি হয়েছে সে ছাড়াও পরিবারের সব সদস্য, এমনকি যদি গৃহপরিচারিকা থাকে তার পরিবারসহ সবাইকে একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খেতে হবে।
কেননা যদি একজনের পেটে কৃমি থেকে যায় তাহলে, তার কাছ থেকে যেকোনোভাবেই কৃমির ডিমগুলো আরেকজনের পেটে চলে যেতে পারে। সেখান থেকে আবার কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।
কৃমির ওষুধ একদিনে খাওয়া যাবে না। কোনো কোনো কৃমির ওষুধ একটা খেলেই চলে, কোনোটা দিনে ২ বার খেতে হয়। আবার কোনোটা কোনোটা খাওয়ার ৭ বা ১৫ দিন পর খেতে হয়। এজন্য অবশ্যই বয়স অনুযায়ী এবং কৃমির ধরন দেখে চিকিৎসক ওষুধ নির্ধারণ করে দেবেন। সেটা নিয়ম মেনে খেতে হবে। এবং পরিবারের সবাইকে খেতে হবে একসাথে। একজন খেলে এটা নির্মূল করা সম্ভব হবে না।
সাধারণত ১ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। কৃমি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমগুলো চালু রয়েছে সেখানে ১ বছরের উপরে শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া হয়। সরকারের এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অভিভাবকরা যাতে শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ান সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে হবে।
আরো পড়ুনঃ শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার-কিভাবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়
শিশুদের কৃমি রোগ প্রতিরোধের উপায়
১. শিশুদের কৃমি রোগ প্রতিরোধের উপায় হিসেবে প্রথমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হচ্ছে, শিশুরা যাতে প্রত্যেকবার মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২. শিশুরা যাতে খেলাধুলার সময় ধুলাবালি, ময়লা, আবর্জনা ধরার পরে হাত যাতে মুখে না দেয় এবং হাত যাতে ভালো করে ধুয়ে ফেলে তা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. শিশুদের কাঁচা খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। অনেক সময় কাঁচা সবজিতে কৃমি থেকে যায়। ফলমূল, সবজি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। সঠিক নিয়মে রান্না করা খাবার খেতে হবে।
৪. কিছু কিছু কৃমি আছে যেগুলো নখের মাধ্যমে ছড়ায়। এজন্য খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। নখ অবশ্যই ছোট রাখতে হবে।
৫. কৃমি প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই শিশুদের বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এবং অন্যান্য কাজেও পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।
৬. কৃমি প্রতিরোধের জন্য উপরোক্ত নিয়ম মেনে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে।
মন্তব্য: শিশুর কৃমি হলে করণীয়-ছোট বাচ্চার কৃমির প্রতিরোধের উপায়
কৃমি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। লম্বা কৃমি গুলো ক্ষুদ্রান্তে অনেক বেশি পরিমাণে বংশবিস্তার করে। এবং ওই জায়গায় আটকে যায়। যখন পেট ফুলে যায় তখন খাবার নিচের দিকে যেতে এ ধরনের কৃমি এগুলো বাধা প্রদান করে। পেটে অনেক বেশি পরিমাণে কৃমি হয়ে গেলে পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। পেটে খুব বেশি কৃমি হয়ে গেলে তখন অপারেশন করে বের করার প্রয়োজন পড়ে। এটা শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির ব্যাপার। শিশুর অপুষ্টির একটি বড় কারণ কৃমি। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ বছরের নিচে প্রায় ৩৯ শতাংশ শিশু কৃমিতে আক্রান্ত। তাই কৃমি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আমাদের শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক আশা করি শিশুদের কৃমির রোগের কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। তাই নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url