গরমে গর্ভবতী মেয়েদের ১০টি সমস্যা-অতিরিক্ত গরমে গর্ভবতী মেয়েদের যত্ন

গরমে গর্ভবতী মেয়েদের ১০টি সমস্যা-অতিরিক্ত গরমে গর্ভবতী মেয়েদের যত্ন

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। আজকে এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে এই তীব্র মাত্রাতিরিক্ত গরমে গর্ভবতী মায়েদের কি কি সমস্যা হয়ে থাকে সেই সম্পর্কে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরমে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন কিভাবে নিবেন সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি আশা করি আপনার জন্য খুব উপকারী হতে চলেছে। সুতরাং আর্টিকেলটি অবস্থায় শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আশা করি অনেক কিছু জানতে পারবেন। 

গরমে গর্ভবতী মেয়েদের ১০টি সমস্যা

তীব্র গরমের সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অবস্থা বেশি নাজেহাল হয়ে পড়ে অতিরিক্ত গরমে। তীব্র গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যাও জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেগুলো পরবর্তীতে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। চলুন তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের দশটি সমস্যা সম্পর্কে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।

ছবি

১. গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে তীব্র গরমে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা থেকে 'হিট এক্সোশন হয়। ফলে অল্পতেই অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ হতে পারে গর্ভবতী মায়েরা। তাই এই গরমে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের পানি শূন্যতা যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার এবং পানি জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে।

২. গরমের তীব্রতা বেশি হলে হিটস্ট্রোকের মতো জটিলতাও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাথা ঘোরাতে পারে, অচেতন হয়ে যেতে পারে। তাই এই গরমে যাতে গর্ভবতী মায়েদের হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা না থাকে সে বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে গর্ভবতী মায়েদের রাখতে হবে। তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের নাড়ির স্বাভাবিক গতি বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় নাড়ির স্পন্দন প্রতি সেকেন্ডে ৮০ বার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত গরমে নাড়ির স্পন্দন ১০০ থেকে ১২০ হয়ে যেতে পারে। 

৩. তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের পানিশূন্যতার কারণে শরীরে হিট ক্র্যাম্প হতে পারে। এতে তীব্র ব্যথা হয়। অতিরিক্ত ঘামের জন্যও ক্র্যাম্পিং হতে পারে। হিট ক্র্যাম্প প্রথমে হাত-পায়ে হয়। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের জরায়ুতে বাচ্চা থাকা অবস্থায় কিছুক্ষণ পরপর জরায়ু সংকুচিত হয়, আবার ছেড়ে দেয়। যেটাকে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন বলা হয়। 

তীব্র গরমে পেট শক্ত হয়ে আসা বেড়ে যায়। তাই এই গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের যারা ব্যায়াম করেন, অতিরিক্ত কাজ করেন অথবা অনেক রোদে হেঁটে অফিসে বা কাজে যান তাদের এসব পরিহার করতে হবে। তা না হলে হিট ক্র্যাম্প হবে অনেক বেশি।

৪. তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের পানিশূন্যতার কারণে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যাবে। সারাদিনে যেখানে ৮-১০ বার প্রস্রাব হওয়ার কথা, সেখানে ২-৩ বার প্রস্রাব হয়ে থাকে। অনেক সময় প্রস্রাবে তীব্র গন্ধ হতে পারে।

৫. তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের পানিশূন্যতার কারণে হার্টবিট বেড়ে যায়। নিজের হার্টবিট নিজেই বুঝতে পারে, যেটাকে পালপিটিশন বলা হয়। হাত-মুখ-ঠোঁট শুকিয়ে যায়, ফেটে যায়। তীব্র গরমে অতিরিক্ত পানি শূন্যতার কারণে গর্ভবতী মায়েদের চোখ গর্তে ঢুকে যেতে পারে।

৬. তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের শরীর ফুলে যায়। যাকে ডাক্তারি ভাষায়  ইডিমা বলা হয়। যদি পানিশূন্যতা বেশিক্ষণ থাকে, তাহলে হাতে, পায়ে, মুখে, পেটের চামড়ার মধ্যে ইডিমাগুলো বেশি হবে। কারণ যখন শরীরে পানি কমে যাবে, তখন শরীর পানি ধরে রাখতে চেষ্টা করবে। আর ধরে রাখার কারণে এই জায়গাগুলোতে পানি চলে আসবে।

৭. তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের হিট র‍্যাশ, ঘামাচি, ফুসকুড়ি, চুলকানি,ম্যালাসমা, মুখ একটু হলুদাভ, লালচে আভা আসতে পারে। 

৮. তীব্র গরমের কারণে গর্ভবতী মায়েদের পানি সুন্নাতা হয়ে থাকে। এর ফলে অনেক সময় দেখা যায় জরায়ুতে ইডিমা হয়ে যায়। অর্থাৎ সেখানে পানি জমে যেতে পারে। যে কারণে জরায়ু থেকে হালকা রক্তপাত হতে পারে। বেশি রক্তপাত হলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে, বাচ্চা নড়াচড়া কমিয়ে দেয়। মায়ের পানিশূন্যতা হলে বাচ্চারও পানিশূন্যতা হবে।

৯. অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক হয়ে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। এমনকি বাচ্চার হার্টবিট কমে গিয়ে শিশুর  মৃত্যুও হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কমলা খাওয়ার উপকারিতা জানুন-কমলায় কোন ভিটামিন থাকে

অতিরিক্ত গরমে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন

ছবি

সম্মানিত পাঠক আমরা ইতিমধ্য জানতে পারলাম গর্ভবতী মায়েদের তীব্র গরমে যে নয়টি বিষয়ে সমস্যা হতে পারে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে। এবার আমরা এই পর্বে জানবো গর্ভবতী মায়েদের তীব্র গরমে কিভাবে যত্ন দিবেন এ বিষয়ে। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক। বর্তমানে তীব্র গরমের জন্য বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে। যেমন-

১. এই তীব্র গরমে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। গরমের দিনে দৈনিক ২-৩ লিটার বা ৮ থেকে ১৫ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করতে হবে।

২. গরমে গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত গোসল করতে হবে। এটি ঘাম ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দূর করে শরীরকে সতেজ রাখবে। গোসলের সময় পানির তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিকের নিচে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া কিছুক্ষণ পরপর ঠাণ্ডা পানিতে শরীর মুছে নিতে হবে।

৩. এই তীব্র গরমে গর্ভবতী মায়েদের সুতি, লিনেন কাপড়ের, হালকা রঙের, ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। জিন্স, মোটা কাপড়, সিনথেটিক ও গাঢ় রঙের পোশাক অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

৪. গরমে গর্ভবতী মায়েদের হালকা ধরনের স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। সেদ্ধ খাবার, ফল, সবজি, সালাদ খেতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, বাইরের হোটেলের খাবার অনেক সময় গরমে পচন ধরে যায়। সেগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে। অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৫. পানির পরিমাণ বেশি আছে এমন খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন-ডাব, স্যালাইন, ফলের রস, দুধ, বিভিন্ন শরবত, তরমুজ, মাল্টা, কমলা।

৬. গরমে গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত কাজ করা যাবে না। বিনা প্রয়োজনে বারবার বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। বাইরে অনেকক্ষণ রোদে থাকতে হবে বা হেঁটে যেতে হবে, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সহায়তা নিতে হবে। বিশ্রামের প্রয়োজন হলে অবশ্যই ছাড়াই বিশ্রাম নিতে হবে।

৭. গর্ভবতী মায়েদের তীব্র রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত রোদ তীব্র থাকে। এ সময় অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভালো। এ সময় ঘরের পর্দা টেনে রাখতে হবে।

৮. গর্ভবতী মায়েদের এই গরমের রোদে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ছাতা, ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে অথবা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থান দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। অবশ্যই রোদে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের সুরক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

৯. পানিশূন্যতায় প্রস্রাব কমে গিয়ে অ্যানুরিয়া হয়ে যেতে পারে, কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের কিডনি খুবই সংবেদনশীল থাকে, অল্প পানিশূন্যতা থেকে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই দিনে ৭-৮ বার প্রস্রাব পরিমাণমতো হয় কি না, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

মন্তব্য: গরমে গর্ভবতী মেয়েদের ১০টি সমস্যা-অতিরিক্ত গরমে গর্ভবতী মেয়েদের যত্ন

সম্মানিত পাঠক বন্ধু, আশা করি গর্ভবতী মায়েদের এই তীব্র গরমে কিভাবে যত্ন নিবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তীব্র গরমের এই সময়টায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যত্নে পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সদয় হতে হবে, সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাহলে এই গর্ভবতী মায়েরা গরমের দিনেও হারাম এবং সুস্থভাবে থাকতে পারবে। 

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন? গর্ভবতী মায়ের যত্ন

আমাদের শেষের কথা 

সম্মানিত পাঠক বন্ধু, আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে গরমে গর্ভবতী মায়েদের সমস্যা এবং সমস্যার সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। নিয়মিত আমাদের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url