ডায়রিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায়
ডায়রিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায়
সুপ্রিয় পাঠাও বন্ধু আসসালামু আলাইকুম। আমাদের ওয়েব সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সম্মানিত পাঠক আজকে এই আর্টিকেল আলোচনা করব ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ নিয়ে। ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি ডায়রিয়া রোগ হলে প্রতিরোধের উপায় বা কি এবং ডায়রিয়া রোগের কারণ সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করব। আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হতে চলেছে। সুতরাং আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
পোস্ট সূচীপত্র: ডায়রিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায়
- ভূমিকা
- ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণগুলো কি কি
- ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো কি কি
- ডায়রিয়া হলে কি খাবেন
- ডায়রিয়া হলে কি খাবেন না
- ডায়রিয়ার হলে ঘরোয়া প্রতিকার
- কোন খাবারগুলো খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যেতে পারে?
- ডায়রিয়াই কি কি ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়
- কখন আপনি ডাক্তারের কাছে যাবেন
- শিশুদের ডায়রিয়ার চিকিৎসা
- মন্তব্য
ভূমিকা: ডায়রিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায়
ডায়রিয়া হচ্ছে মূলত একটি পেটের রোগ। ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে আসে। এছাড়াও পাতলা পায়খানা কখনো কখনো শ্লেষ্মাযুক্ত,সঙ্গে পেট ব্যাথা,গা গুলিয়ে ওঠা এই উপসর্গ গুলি দেখা যায়। ডায়রিয়া যেমন হতে পারে তেমনি কখনো কখনো অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে এই রোগ যুক্ত হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব পেট ব্যথা ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।
ডায়রিয়া সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হয় কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। কিন্তু ডায়রিয়া যখন কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তখন বুঝতে হবে যে অন্য কোনো সমস্যা আছে। সেগুলো হতে পারে আইবিএস বা ক্রমাগত সংক্রমণ আইবিডি বা সিলিয়াক ডিজিজ অথবা অন্ত্রের প্রদাহ সহ অন্যান্য কঠিন ব্যাধি।
আরো পড়ুনঃ জন্ডিস হওয়ার কারণ সমূহ-জন্ডিস রোগ দূর করার উপায়
ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণগুলো কি কি
সুপ্রিয় পাঠক আমরা এই পর্বে জানব ডায়রিয়া হওয়ার জন্য প্রধান কারণ গুলো কি কি। কি কি কারনে আমাদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে এই বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।ডায়রিয়া অনেক কারণেই হতে পারে যার মধ্যে রয়েছে-
- শরীরের পর যদি আক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের ওষুধের প্রতিক্রিয়ার কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ এর কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।
- ভাইরাসের সংক্রমণ হলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
- খাবারে এলার্জি জনিত কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
- খাবার হজম না হলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
- এছাড়াও অনেক সময় মানসিক চাপের কারণেও ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো কি কি
সম্মানিত পাঠক আমরা ডায়রিয়া এবং ডায়রিয়া হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে এতক্ষণ জানতে পারলাম। আমরা এখন জানবো ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ গুলো কি কি। ডায়রিয়া হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় অর্থাৎ কি কি উপসর্গ দেখা দিলে আমরা বুঝব যে রোগীর ডায়রিয়া হয়েছে সেই বিষয়ে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক। নিচের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি দেখা দিলে ধরে নেওয়া যায় একজন ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
- পেট ফেঁপে থাকা।
- মল আঁশটে দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
- পেটে খিঁচুনি বা ব্যথা অনুভূত হওয়া
- বমি বমি ভাব।
- মলে অনেকসময় রক্ত দেখা যায়।
- জ্বর হওয়া।
- বমি হওয়া।
- তরল জলের মত মল।কখনো কখনো ফ্যানা সৃষ্টি হয়।
- ঘন ঘন মলত্যাগ।
- মলে শ্লেষ্মা বের হয়ে আসা।
উপরোক্ত এই উপসর্গ বা লক্ষণগুলো যদি রোগীর মাঝে দেখা দেয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে রোগের ডায়রিয়া হয়েছে।
ডায়রিয়া হলে কি খাবেন
ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ডায়রিয়া হলে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। যার ফলে রোগের শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে। তাই ডায়রিয়া হলে অবশ্যই রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং স্যালাইন পান করতে হবে। এছাড়া উত্তর এবং জাতীয় খাবার যেমন জুস ঝোল ইত্যাদি পান করতে হবে। রোগের মাল স্বাভাবিক অবস্থায় আসা শুরু করলে ধীরে ধীরে ভাইবা যুক্ত খাবার খেতে হবে।
ডায়রিয়া হলে কি খাবেন না
ডায়রিয়া হলে কিছু খাবারের নিষেধ রয়েছে। কারণ ডায়রিয়া হলে সব ধরনের খাবার খাওয়া শরীরের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ডায়রিয়া হলে যেসব খাবার খাবেন না সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-কফি জাতীয় খাবার অ্যালকোহল মসলাদার রিচ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও গম এবং দুধের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সোডা ক্রেকার পেস্ট ডিম না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ডায়রিয়ার হলে ঘরোয়া প্রতিকার
ডায়রিয়ার জন্য ঘরোয়া সবথেকে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হচ্ছে স্যালাইনের পানি পান করানো। তাছাড়া দুপুরে ভাতের সঙ্গে পাতলা ডালের ঝোল পাতলা লিকার চা ও খেতে পারেন। ডায়রিয়া হলে রোগীর দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায় তাই পানির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ঘন ঘন স্যালাইনের পানি এবং পরিষ্কার নিরাপদ বাণী পান করতে হবে। রোগীকে রাতের বেলায় হালকা খাবার খাওয়ানো উচিত।
কোন খাবারগুলো খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যেতে পারে?
ডায়রিয়া রোগ একটি ভয়াবহ রোগ। ডায়রিয়া রোগের কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সম্মানিত পাঠক আমরা এই পর্বে জানব কোন কোন খাবার গুলো খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেই খাবারগুলো সম্পর্কে। চলুন শুরু করি।
- বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধ জাত খাবার পান করলে।
- অস্বাভাবিক মাত্রায় কফি জাতীয় খাবার পান করলে।
- ময়দার তৈরি খাবার অতিরিক্ত খেলে।
- তেলেভাজা এবং চর্বিযুক্ত খাবার খেলে।
- প্রচুর ঝাল যুক্ত খাবার খেলে ডায়রিয়া হওয়ার। সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ডায়রিয়াই কি কি ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়
ডায়রিয়া হলে শরীরে ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়ে থাকে।এই রোগের সময় মত চিকিৎসা না করলে জীবন নাশের হুমকি থাকে। দুর্বল ব্যক্তি, বয়স্ক, ও শিশুর জন্য ডিহাইড্রেশন বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। ডিহাইড্রেশনের গুরুতর লক্ষণ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
প্রাপ্তবয়স্কদের ডিহাইড্রেশন হলে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়-
- অত্যধিক তৃষ্ণা পাওয়া।
- শুষ্ক মুখ বা ত্বক,মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া।
- অল্প বা কোন প্রস্রাব না হওয়া।
- ক্লান্তি হওয়া।
- শরীরের দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া
- মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা।
- গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব হাওয়া।
ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ডিহাইড্রেশনের যে ইঙ্গিতগুলো লক্ষ্য করা যায়-
- ৩ বা তার বেশি ৪ ঘন্টার মধ্যে একটিও ডায়াপার না ভেজা।
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া, শিশুরা জিহবা দিয়ে বার বার ঠোঁট চাটা।
- ছোট বাচ্চাদের দেহের তাপমাত্রা 102 ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার উপরে ।
- অশ্রুবিহীন কান্না করা।
- তন্দ্রা, প্রতিক্রিয়াহীনতা বা বিরক্তির প্রকাশ পায়।
- পেট, চোখ বা গাল ঢুকে যাওয়া।
কখন আপনি ডাক্তারের কাছে যাবেন
আপনি যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিম্নের সমস্যাগুলো অনুভূত করেন তবে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। যেমন-
- যদি প্রচন্ড পেট বা মলদ্বারে ব্যথা অনুভব করেন।
- আপনার দেহের তাপমাত্রা 102 ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে উঠে যায়।
- আপনার শরীর যদি পানি শূন্য হয়ে পড়ে।
- আপনার যদি রক্তাক্ত মল ত্যাগ হয়।
একটানা ৩-৪ দিন ধরে চলতে থাকা ডায়রিয়া কিছু লোক অনিচ্ছাকৃতভাবেই প্রতিদিন একবার দুই পাউন্ড ওজন হারাতে পারে। এছাড়াও রোগের হজম সমস্যা পৌষ্টিক পদার্থের শোষণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় যার কারণে শরীরের ওজন হ্রাস পায়।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক ভাবে কিডনির পাথর দূর করুন এই উপায়
শিশুদের ডায়রিয়ার চিকিৎসা
ডায়রিয়ার ফলে শিশুদের বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে আসে। তাই ডায়রিয়া হলে শিশুদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডায়রিয়ার উন্নতি না করতে পারলে চট জলদি আপনার সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। নিজের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দ্রুত নেওয়া উচিত।
- দেহ জলশূন্য হয়ে গেলে
- দেহের তাপমাত্রা 102 ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি বেড়ে গেলে।
- রক্তাক্ত মলত্যাগ হলে।
- শিশু দুর্বল হয়ে পড়লে
শিশুদের টিকাদান
শিশুদের ডায়রিয়ার সাধারণ একটি টিকা হল রোটোভাইরাস। দুটি অনুমোদিত ভ্যাকসিনের মধ্যে একটি দিয়ে আপনি আপনার সন্তানকে এর হাত থেকে সুরক্ষা দিতে পারেন। তবে আপনার শিশুর টিকা দেওয়ার বিষয়ে সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।
মন্তব্য: ডায়রিয়া রোগের লক্ষণসমূহ-ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায়
আমাদের মত গরম আবহাওয়ার দেশে ডায়রিয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এই অসুখ প্রায় সময় ঘটে থাকে। তাই এই অসুখ নিয়ে টেনশন না করে যদি মনে হয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শিশুদের ডায়রিয়া হলে চট জলদি ডাক্তারকে জানাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে খুব সহজে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক বন্ধু, আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে আপনার কোন অসুবিধা হয়নি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। যাতে করে আপনার আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীরাও ডায়রিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয় আর্টিকেল লিখে থাকি। নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url