মাসিক দেরিতে হওয়ার কারন-অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
মাসিক দেরিতে হওয়ার কারন-অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনারা স্বাগতম। এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ সম্পর্কে। মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ এবং অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা নিয়ে এই আর্টিকেল এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্র: মাসিক দেরিতে হওয়ার কারন-অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
- সূচনা
- মাসিক কত সযময় পর হলে তাকে অনিয়মিত বলব?
- মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ কি?
- মাসিক দেরিতে হলে করণীয় কি?
- মন্তব্য
সূচনা: মাসিক দেরিতে হওয়ার কারন-অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
একজন নারীর সাধারণত মাসিক হয় ২৫ দিন পর পর। কোন কোন মাসে ৩০ থেকে ৩১ দিন পর ও মাসিক হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক একটি চক্র।সাধারণত প্রতিমাসে আঠাশ থেকে 35 দিন অন্তর একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর মাসিক হয়ে থাকে। ১২ বছর থেকে 55 বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এটাই ঘটে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর নিয়মিত মাসিক হওয়াটা সুস্থতার লক্ষণ।
তবে তা যদি অনিয়মিত হয়ে থাকে তাহলে শারীরিক কোন সমস্যা আছে বলে ধরা হয়। পানি হবে তো মাসিকের ক্ষেত্রে অসুস্থতার সৃষ্টি বা জীবন যাপনে ক্ষতিকর অভ্যাস আছে কিনা তার দিকে নজর দেওয়া উচিত। পিরিয়ড বা মাসিক দেরিতে হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। চলুন জেনে নেই পিরিয়ড বা মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণগুলো কি কি?
আরো পড়ুনঃ মাসিকের সময় কেন তলপেট ব্যথা করে-মাসিকের ব্যথা কমানোর ৭টি উপায়
মাসিক কত সময় পর হলে তাকে অনিয়মিত বলব?
বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে মাসিকের চক্র স্বাভাবিক থাকে। তবে এক্ষেত্রে আপনার যদি সপ্তাহ এদিক ওদিক হয়ে যায় তাহলে অস্বাভাবিক কিছুই না। যেমন একজন নারীর মাসিক হয় ২৫ দিন পর পর। কোন কোন মাসে ৩০ থেকে ৩১ দিনে হয়ে যেতে পারে। এটা হচ্ছে স্বাভাবিক চক্র। কিন্তু এর থেকে আট দিন বেশি দেরি হয়ে গেলে তাকে অনিয়মিত বললে গণ্য করতে পারেন।
মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ কি?
মাসিক দেরি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। নিজেকে কারণগুলো চলুন আলোচনা করি।
১। গর্ভাবস্থা:মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ হচ্ছে যে আপনি হয়তো অন্ত:সত্তা হয়ে পড়েছেন। অন্তঃসত্তা হয়ে বলে স্বাভাবিকভাবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়।
২। বয়স: (১৩-১৯ বছর) ও মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এদের মাসিক দেরিতে হওয়ার প্রধান কারণ হলো শারীরিক হরমোন।
৩। স্ট্রেস: মানসিক দুশ্চিন্তা থাকলে অনেকেরই মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে।
৪। অকাল গর্ভপাত: আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কিন্তু আপনি জানতেন না। এরপর নিজে থেকেই মিস করি এবং গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। এ ঘটনায় সাধারণত তুলনামূলক কিছুদিন পর ভারে রক্তপাত হতে পারে। যাকে অনেক দেরিতে মাসিক হয়েছে বলে ধরা হয়।
৫। কম ওজন: নারীদের শরীরের ওজন সময় মত পিরিয়ড না হওয়ার কারণ হতে পারে। ওজন কমে গেলে কিছুদিন মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।
৬। ফাইব্রয়েডস: নারীদের মাসিক অনিয়মিত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে টিউমারের সমস্যা। জরায় তো টিউমারের মত এক ধরনের মাংস বৃদ্ধি পেলে মাসিক অনিয়ত হয়ে যায়। এগুলো পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্রকে বাধাগ্রস্ত করে।
৭। হরমন জনিত জন্মনিয়ন্ত্রণ: অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত এবং অস্বাভাবিক হতে পারে।
৮। স্বাস্থ্য সমস্যা: অনিয়মিত মাসিকের আরো একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্য সমস্যা। সার্থকতা যদি কোন সমস্যা হয়ে থাকে ঠান্ডা সর্দি গলার ইনফেকশন এ ধরনের সমস্যায় পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন থাইরয়েড সমস্যা বা পোলস্টিক ওভারি সিনড্রোমের কারণেও পিরিয়ড দেরিতে দেখা দেয়।
মাসিক দেরিতে হলে করণীয় কি? অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণের পিছনে অনেকগুলো করণীয় রয়েছে। মাসিক দেরিতে হলে জীবন যাপনের দৈনন্দিন খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেতে পারে। আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে যাতে শরীরে পরিমিত পরিমাণে রক্ত থাকে। তাছাড়া শরীরের ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সব সময় মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
খাবার অবশ্যই চিকিৎসা করে পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। কেননা বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে যেগুলো অনেক সময় গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই বিবাহিতদের ক্ষেত্রে যদি পিরিয়ডের সময় পার হয়ে যায় তাহলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিশ্চিত হন আপনি সন্তান ধারণে করেছেন কিনা। নতুবা এই খাবারের কারণে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
পার্সলে
পার্সলেতে রয়েছে অ্যাপিওল এবং মাইরিসটিসিন যা মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।বিভিন্ন হাসপাতালের পুষ্টিবিদরা বলেন, “পার্সলেতে থাকা উপাদানগুলো দ্রুত ইউট্রাস গঠনে সাহায্য করে। ফলে মাসিক চক্র প্রভাবিত হয়।”
জিরা:
অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে বা অনিয়মিত মাসিক হলে করণীয় হিসেবে জিরা খাওয়া যেতে পারে। জিরায় রয়েছে প্রায় একই ধরনের উপকারিতা। তাই একই প্রক্রিয়ায় মাসিকের সময় এগিয়ে আনতে সহায়তা করে।
আজওয়াইন
অনিয়মিত মাসিক এর ফলে পেট ব্যথা নানা রকম অস্বস্তি হয়ে থাকে। তাই এ ধরনের সমস্যা দূর করতে আজওয়াইন বেশ উপকারী। এক চা-চামচ আজওয়াইন দানা এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে এক চা-চামচ গুঁড় মিশিয়ে সকালে খালি পেটে সেবন করলে উপকার পাওয়া যাবে।
আদা
আদাতে রয়েছে এমেইনাগোগ নামক একটি উপাদান। যা রজঃস্রাব হওয়ার ক্ষেত্রে জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে। ফলে মাসিকের প্রক্রিয়া নিয়মিত করতে সাহায্য করে। তবে আদা ব্যবহার করার ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পার্সলের সঙ্গে আদা দিয়ে চা খাওয়ার সুপারিশ করা হয়।
ধনেগুঁড়া
পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার সমস্যায় যারা ভাবেন তাদের জন্য বেশ উপকারী একটি উপাদান হচ্ছে ধনে গুড়া। ধনে গুঁড়ায় রয়েছে এমেইনাগোগ নামক একটি ঔষধি উপাদান যা পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।
দুই কাপ পরিমাণ পানিতে এক চা-চামচ ধনেগুঁড়া ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে এক কাপ পরিমাণে নেমে এলে ছেঁকে আলাদা করে রাখুন। পিরিয়ডের সময় এগিয়ে আসার কিছুদিন আগে থেকে দিনে তিনবার ওই পানি পান করুন।
মৌরি
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মৌরি দিয়ে চা পান করলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এছাড়া রাতে এক গ্লাস পানিতে দুই চা-চামচ মৌরি ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ছেঁকে নিয়ে ওই পানি পান করলেও উপকৃত হবেন।
অ্যালোভেরার শরবত
পেটের সমস্যা উপশমের জন্য অ্যালোভেরা খুব উপকারী একটি উপাদান। অ্যালোভেরার পাতার রসে রয়েছে এমেইনাগোগ নামক উপাদানটি। যা মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে। এক টেবিল-চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে সকালে নাস্তার আগে খেতে হবে। এক মাস নিয়মিত খেলে মাসিকের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
গরম পানি
অনেকে রয়েছেন যাদের পিরিয়ডের শুরুতে তলপেটে বা কোমরে প্রচুর ব্যথা হয়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে ব্যথার জায়গায় চেক দিলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া গরম সেকের ফলে মাসিক দ্রুত শেষ হতে পারে। দিনে দুতিন বার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের সেক দিলে আরাম পাওয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার
মন্তব্য: মাসিক দেরিতে হওয়ার কারন-অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা
সম্মানিত পাঠক বন্ধু নারীদের নিয়মিত মাসিকের পাশাপাশি অনিয়মিত মাসিক হওয়াটা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু অনিয়মিত মাসিকের ফলে শরীরে বিভিন্ন রকমের প্রভাব পড়ে। তাই অনিয়মিত মাসিক হলে অবশ্যই শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত। এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ করা জরুরী।
আমাদের শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক বন্ধু আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি মাসিক দেরিতে হওয়ার কারণ মাসিক দেরিতে হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সম্মানিত পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। নিয়মিত আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস দিয়ে থাকি। তাই নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url