শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার-কিভাবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়

শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার-কিভাবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন আইটির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। সম্মানিত পাঠক বন্ধু আজকে এই আর্টিকেল আলোচনা করা হয়েছে শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে। শিশুর জন্য কি কি পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা দরকার এবং শিশুর খাদ্যাভ্যাস কিভাবে তৈরি করা যায় এই বিষয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। 

পোস্ট সূচীপত্র: শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার-কিভাবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়

  • ভূমিকা 
  • শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে মৌসুমি ফল খাওয়াতে হবে 
  • শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা
  • ৭-৯ মাস বয়সের শিশুর পুষ্টিকর খাবার 
  • ৯-১২ মাস বয়সের শিশুর পুষ্টিকর খাবার 
  • শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করার টিপস
  • মন্তব্য

ভূমিকা: শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার-কিভাবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়

কিছু হচ্ছে সুন্দর। শিশু হচ্ছে পবিত্র। নবজাতক হচ্ছে আদরের যত্নের আরেক নাম। জন্মের পরে বাচ্চার জন্য মায়ের দুধের বিকল্প কিছু নেই। শিশুর জন্মের পর শিশুর উত্তম খাদ্য হচ্ছে মায়ের দুধ। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর জন্য কোন সময়ের প্রয়োজন হয় না। শিশুর ক্ষুধা লাগলে কিছু চোখে দুধ খাওয়াতে হয়। কিন্তু শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন শিশুর মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারের প্রয়োজন হয়। 

ছবি

শিশুর ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাবে এবং ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পর মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পরিপূরক খাদ্য দিতে হবে শিশুকে। তাই ছয় মাস পর শিশুকে তার পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। চলুন নিচে জেনে নেই কি কি খাবার নিশ্চিত করতে হবে একজন শিশুর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বেড়ে ওঠার জন্য। চলুন দেরি না করে শুরু করি।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে দশটি জরুরি খাবার

শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে মৌসুমি ফল খাওয়াতে হবে 

গরমের দিনে শিশুর তরল খাবারের প্রয়োজন পড়ে এছাড়াও ভিটামিন ও মিনারেলের দৈনিক চাহিদার প্রয়োজন পড়ে। এই মিনারেল এবং তরলের চাহিদা পূরণ করতে ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌসুমী বিভিন্ন রকম ফল শিশুরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই শিশুকে বিভিন্ন মৌসুমে মৌসুমী ফল খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাই তরমুজ বাঙ্গি আম লিচু কলা পেঁপে এসব ফল শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন অবশ্যই এ শিশুকে ফল খালি পেটে খাওয়ানো যাবে না।

শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা

 শিশুকে প্রতিদিন কমপক্ষে চার ধরনের খাবার দিতে হবে।

 ১. ভাত

 ২. ডাল

 ৩. শাকসবজি

 ৪. মাছ/মাংস/ডিম। 

এছাড়া চাল, ডাল, সবজি (যেমন- মিষ্টিকুমড়া, গাজর, পেঁপে, আলু ইত্যাদি) পরিমাণ মতো তেল ও মসলাসহ খিচুড়ি তৈরি করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। খিচুড়ি তৈরির সময় যে পরিমাণ চাল দেয়া হবে তার অর্ধেক পরিমাণ ডাল দিতে হবে। শিশুকে নিয়মিত খাসি, গরু ও মুরগির কলিজা খেতে দিতে হবে।

৭-৯ মাস বয়সের শিশুর পুষ্টিকর খাবার 

সাত থেকে নয় মাস বয়সের শিশুর খাদ্য তালিকা পরিপূর্ণ করতে হবে। কারণ এ বয়সে শিশু কিছুটা হলেও পরিপক্ক হয় এবং ফল ও শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণের সক্ষম হয়। তাই এই সময় শিশুর ক্যালরি চাহিদা বেশি দেখা দেয়। তাই ক্যালোরি চাহিদা এ সময় বাড়ানো দরকার। এই সময় শিশুকে খাবারে পানির পরিমাণ কম দিয়ে খাবার কে থকথকে করে খাওয়াতে হবে। 

সাত থেকে নয় মাস বয়সে শিশুরা নিজে হাতে ধরে খেতে চেষ্টা করে। এ সময় সহজ খাবারের মধ্যে আলু সেদ্ধ, মৌসুমি সবজি সেদ্ধ, করে খাওয়ানো যায়।  ফুলকপি, বরবটি, পেঁপে, এই ধরনের সবজিগুলো সেদ্ধ করলে নরম হয় যা শিশুর দ্রুত হজম হয়। শিশুর খাদ্যে সামান্য তেল যোগ করতে হবে। ফলে চর্বিতে দ্রব্য ভিটামিনগুলো সহজে শোষিত হয়।

৯-১২ মাস বয়সের শিশুর পুষ্টিকর খাবার 

৯ থেকে ১২ মাস বয়সের শিশুদের বড় মানুষের মত খাবার দিতে হয়। আগের তুলনায় আরো ঘন খাবার শিশুরা এ সময় খেতে পারে। নরম খিচুড়ি, সিদ্ধ ডিম, ডাল, ভাত, দুধ-রুটি, দই, ক্ষীর, পুডিং ইত্যাদি খাবারগুলো শিশুকে খাওয়াতে হবে। এগুলো পুষ্টি পরিপূরক। স্যুপ শিশুর জন্য তৈরি করে ৪-৫ বার দেওয়া যায়।

শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করার টিপস

বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময় থেকেই শিশুকে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের পরিণত করতে হবে। শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করানো এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

ছবি

ছোটবেলা থেকেই শিশুকে সুষম খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করতে পারলে তার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। চলুন জেনে নিই স্কুলগামী শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরির কিছু প্রয়োজনীয় টিপস-

● শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করতে অবশ্যই মায়েদের দায়িত্ব নিতে হবে বেশি। ব্যস্ততার কারণে অনেক মা সন্তানকে প্রক্রিয়াজাত খাবার দিয়ে থাকেন। শিশুকে প্রক্রিয়াজাত খাবার না দিয়ে শিশুকে বাড়িতে তৈরি করে খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে।

● আপনার শিশুর টিফিনে অবশ্যই বালান্সেড ফুড রাখার চেষ্টা করতে হবে। শিশুর দুপুরের খাবারে সবজি, খাদ্যশস্য এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন।

● শিশুর পানীয় জাত খাদ্য হিসেবে থাকে অবশ্যই পানি খেতে উৎসাহিত করতে হবে। সারাদিনে যেন আপনার শিশুর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিশ্চিত থাকে সেই বিষয়টি আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে। শিশুকে অবশ্যই ঘরে তৈরিকৃত শরবত খাওয়াতে হবে। অবশ্যই শিশুকে বাজারের প্রক্রিয়াজাত জুস বা কমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।

● শিশুকে প্রতিদিন সুষম খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন একটি প্লেটকে যদি আমরা ৪ ভাগে ভাগ করি, তার অর্ধেক ফল ও সবজি, এক-চতুর্থাংশ শস্য এবং প্রোটিন দিয়ে বাকি এক চতুর্থাংশ পূরণ করুন।

●  শিশুকে অবশ্যই প্রতিদিন অন্তত এক ঘন্টা হলেও শারীরিক পরিশ্রম করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুকে অবশ্যই মাঠে বা ফাঁকা স্থানে খেলাধুলা করতে দিতে হবে এবং দৌড়াদৌড়ি করতে দিতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে তার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে এবং খাওয়ার প্রতি সে আগ্রহী হবে।

● রান্না করার সময় অবশ্যই আপনার শিশুকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে উৎসাহিত করতে পারেন। সন্তানের বয়সের উপযুক্ত যেকোনো কাজে সাহায্য করতে তাকে উৎসাহিত করুন।

● শিশুদের ওজন বৃদ্ধি নিয়ে অনেক মায়েরায় চিন্তিত থাকেন এবং ওজন কমানোর ডায়েটে অভ্যস্ত করেন। এসব না করে আপনার ছোট্ট সোনামনিকে অবশ্যই ওজন কমানোর ডায়েটের অভ্যস্ত করতে হবে এবং তাকে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে উৎসাহিত করতে হবে।

● শিশুর খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ নিশ্চিত করুন।

●শিশুকে অবশ্যই খাবার খেতে জড়াজড়ি করা ঠিক নয়। শিশু যখন খেতে চায় তখন খেতে দিতে হবে। যতটুকু খেতে চাই ততটুকুই খেতে দিতে হবে। শিশুর চাহিদা অনুযায়ী তাকে খাদ্য দিতে থাকুন। শিশুর খাবার সময় টা যেন শিশুর কাছে আনন্দদায়ক হয় সেই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকুন।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চার শরীরের রং নয়, সুস্থ সবল বাচ্চায় কাম্য

 মন্তব্য: শিশুর যত্নে পুষ্টিকর খাবার-কিভাবে শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আপনার বাড়িতে যদি শিশু থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই এই নিয়মগুলো পালন করবেন এবং খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার রাখবেন। আশা করি উপরের টিপস গুলো অনুযায়ী কাজ করলে আপনার শিশুকে খাদ্যাভাসে উৎসাহিত করতে পারবেন। 

আমাদের শেষের কথা 

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আশা করি শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং শিশুদের খাদ্যাভ্যাস তৈরি করার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। সম্মানিত পাঠক বন্ধু, আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। নিয়মিত আমাদের আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url