বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ উদ্ভিদের উপকারিতা

বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ উদ্ভিদের উপকারিতা

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন আইডির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করব বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ উদ্ভিদের যে উপকারিতা রয়েছে সেই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হতে চলেছে। সুতরাং অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

পোস্ট সূচিপত্র: বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ উদ্ভিদের উপকারিতা

  • সূচনা 
  • অশ্বগন্ধা
  • যষ্টিমধু
  • কালোজিরা 
  • তালমিছরি
  • মধু
  • মন্তব্য

সূচনা: বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ উদ্ভিদের উপকারিতা

আমাদের চারপাশে নানা রকমের উদ্ভিদ রয়েছে। এর একটা বড় অংশ মহান আল্লাহতালা মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর এসব উদ্ভিদের রয়েছে নানা রকম ভেষজ গুন। বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে  খাঁটি মধু, অশ্বগন্ধার গুড়া, যষ্টিমধু, কালোজিরা ও তালমিছরি। প্রতিটি পণ্যেরই রয়েছে আলাদা আলাদা অবাক ভেষজ বৈশিষ্ট্য এবং গুনাগুন। 

ছবি

উপরে উল্লেখিত প্রতিটি পণ্যই আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য দারুণভাবে দরকারী। এমনকি এদের মধ্যে রয়েছে মরণব্যাধি নিরাময়ের ক্ষমতা। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় কালোজিরার কথা। কালোজিরাকে মহৌষধ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারন এটি অনেক ধরনের জটিল রোগ নিরাময় করতে পারে। চলো নিচে জেনে নেই এসব উদ্ভিদের কার্যকারিতা সম্পর্কে।

আরো পড়ুনঃ ঔষুধি গাছের উপকারিতা-২২টি ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিত

অশ্বগন্ধা

বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে একটি হচ্ছে অশ্বগন্ধা। ভেষজ গুন সমৃদ্ধ উদ্ভিদ অন্যতম একটি উপাদান হলো এই অশ্বগন্ধা। গবেষণায় দেখা গেছে যে  অশ্বগন্ধা রক্তে সুগার কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা ইনসুলিন লেভেল এবং পেশীর কোষে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে এটি সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে অশ্বগন্ধা টিউমার সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে।, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী।

যষ্টিমধু

ভেষজ গুনাগুন সমৃদ্ধ একটি অন্যতম ভেষজ উদ্ভিদ হচ্ছে যষ্টিমধু। যষ্টিমধু কন্ঠনালীতে অতিরিক্ত ধুলাবালী জমার কারনে যে খুশখুশি কাশি হয় তা নিবারণ করতে সাহায্য করে। যষ্টিমধু খেলে আপনার কন্ঠনালিকে পরিস্কার ও সুন্দররাখে। ব্রষ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে দুর্বলতা, প্রভৃতি রোগ নিরসনে যষ্টি মধু গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দেহের ভিতর জমে থাকা পুরোনো সর্দি,কফ,কাশ পরিস্কার করে থাকে। এছাড়াও কণ্ঠকে শ্রুতি মধুর করে তোলে। যষ্টি মধু মুখের দুর্গন্ধ, রুচি বৃদ্ধি কারক, হিসাবে কাজ করে।

ছাড়া ও যষ্টিমধু ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। ত্বকের বলিরেখা, ব্রণ ও দাগ দূর করে যষ্টিমধু। যষ্টিমধুর গ্লাইসিরাইজিক অ্যাসিড মাস্টকোষ হতে হিস্টামিন নিঃসরণ কমিয়ে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।  যষ্টিমধু রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক প্রতিরোধ করতে পারে। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য যষ্টিমধুর সঙ্গে গুড়া দুধ মিশিয়ে পান করলে যথেষ্ট উপকারী।

কালোজিরা 

ভেষজ গুনাগুন সমৃদ্ধ একটি অন্যতম উদ্ভিদ হচ্ছে কালোজিরা। প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতি গ্রাম কালোজিরায় রয়েছে - প্রোটিন, ভিটামিন-বি, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফসফরাস, কপার, জিংক এবং ফোলাসিন। এছাড়াও কালোজিরার মধ্যে রয়েছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন, লিনোলিক অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম ,ফসফেট, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি ২, নায়াসিন, ভিটামিন-সি, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট। 

কালোজিরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কালোজিরা বাতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা বিকল্প নেই। তাছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে তাদের জন্য কালোজিরা খুবই উপকারী। কালোজিরা খেলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং হৃদরোগে ঝুঁকি কমে।

তালমিছরি

 ভেষজ গুনাগুন সমৃদ্ধ আরেকটি অন্যতম ভেষজ উদ্ভিদ হচ্ছে তালমিছরি। গুড় কিংবা চিনিতে কৃমির প্রকোপ বাড়ে। তাই তালমিছরিই ভরসা। তাই বড় ছোট সবাই তালমিছরি নির্ভয়ে খেতে পারেন। তালমিছরিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকায় এটা আনিমিয়াতে ভীষণ ভাবে কাজে দেয়। বিশেষত মেয়েদের জন্য তালমিছরি খুব উপকারী। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম আর পটাসিয়াম থাকার কারণে তালমিছরি হাড় ও দাঁত শক্ত করে। তাছাড়া হাড়ের সব সমস্যা দূর করে।

হাড় ভাঙ্গার সমস্যাটা একটি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাড়ভাঙ্গা সমস্যায় সমাধান তালমিছরি। নিয়মিত তাল মিশ্রি সেবন করলে উপকার পাওয়া যায় হাড় ক্ষয় থেকে। এই দুটির কারণে বাচ্চাদের জন্য তাল মিছরি খুব উপকারী। তাছাড়াও তালমিছরির রস কাশি দূর করতে বেশ উপকারী।গলায় শ্লেষ্মা নরম করে দেয়, ফলে গলায় খুসখুসানি কমে যায়।এক টুকরো তালমিছরি মুখে নিয়ে চুষলে সর্দিতে এবং কাশিতে আরাম পাওয়া যায়।

কাশতে কাশতে গলায় ব্যথা হলে এক টুকরো তালমিছরি গোলমরিচ আর ঘি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে এক চামচ খেলে গলা ব্যাথায় উপকার মেলে। এক চামচ তালমিছরি, গোলমরিচ এবং আমন্ড-এর পেস্ট রোজ রাতে গরম দুধের সঙ্গে খেলে নাকের শ্লেষ্মা বের করে দেয় এবং ঠাণ্ডা লাগা প্রতিহত করে।

কিডনি স্টোন বা কিডনিতে পাথর দূর করার জন্য তালমিছেরি খুব উপকারী। পিয়াজের রসের সঙ্গে তাল মিছরি খেলে কিছুদিনের মধ্যে প্রসাবের সাথে কিডনি স্টোন বেরিয়ে আসবে।

মধু

মধু এমনই একটি উপাদান যে উপাদান শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ভিতর থেকে বাইরের যেকোন রকম ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে মধু রক্ষা করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রতিরোধকারী শক্তি গড়ে তোলে, যে কোনো রকম সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

মধুর আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে পাকস্থলীতে গ্লুকোজ তৈরি করতে পারে। নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়। এছাড়াও এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। মেদ এবং হরমোন নিঃসরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে মধু, ফলে মেদ কমায়।

ঘুমের জন্য মধু খুবই উপকারী। যাদের অনিদ্রা সমস্যা আছে তারা নিয়মিত মধু খেলে খুব সুন্দর ঘুম হবে। মধু ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাদের আমাশা ডায়রিয়া পেট খারাপের প্রভাবিত রয়েছে তারা নিয়মিত মধু খেতে পারেন।

খাঁটি মধু যদি সকালবেলা নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে অম্বলের সমস্যা মুখ টক টক ভাব দূর হয়। মধুর মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে সেই উপাদানগুলো হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।  ফলে খাবার খাওয়ার পর বদ হজম, গলা বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়।

পাকস্থলীর কাজ জোরালো করতে মধু খুবই উপকারী। কারণ মধু হজমের সাহায্য করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। তার ফলে পাকস্থলীর কাজ ভালো হয়। এছাড়াও মধুর রয়েছে নানাবিধ গুন।

আরো পড়ুনঃ তীব্র গরমে নবজাতকের যত্ন কিভাবে নিবেন-গরমে শিশুর যত্ন

মন্তব্য: বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ উদ্ভিদের উপকারিতা 

সম্মানিত পাঠক বন্ধু এবার অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন উপরে উল্লিখিত পণ্যগুলোর ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এসব ভেষজ উদ্ভিদের গুনাগুন অগণিত। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়া। আমাদের সুস্থতার জন্য উক্ত খাবার গুলো খুবই জরুরী। আরেকটি বিষয় মাথা রাখা উচিত যে বিখ্যাত দার্শনিক হিপোক্রিটাস বলেছেন-"খাদ্যই আমাদের ঔষধ আর ঔষধি আমাদের খাদ্য"। তাই অবশ্যই আমাদের উচিত যা খায় তা ওষুধ হিসেবে যেন আমরা খাই। 

শেষের কথা 

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আমরা এই আর্টিকেলে যা আলোচনা করলাম আশা করি সুন্দর ভাবে তা বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পরে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url