পেট ব্যথার কারণ-পেট ব্যথা প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়
পেট ব্যথার কারণ-পেট ব্যথা প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়
সম্মানিত পাঠক বন্ধু আসসালামুয়ালাইকুম। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব আমাদের কমন একটি সমস্যা পেটব্যথা নিয়ে। আমাদের অনেকের রয়েছে যাদের মাঝে মাঝে পেট ব্যথা করে থাকে। তাই আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব পেট ব্যথার কারণ পেট ব্যথার সমস্যা সমাধান এসব নিয়ে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হতে চলেছে। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচীপত্র: পেট ব্যথার কারণ-পেট ব্যথা প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়
- ভুমিকা
- পেট ব্যথা কাকে বলে?
- পেট ব্যাথার সাধারন কারণ
- অম্বলের কারনে পেট ব্যাথা
- বদহজমের ফলে পেট ব্যথার সমস্যা
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারনে পেটে ব্যাথা হয়
- আলসারের উপসর্গগুলি হল
- উপসংহার
ভুমিকা: পেট ব্যথার কারণ-পেট ব্যথা প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়
পেট ভরে খেতে সবার ভালো লাগে। বাড়ি হোক বা বিয়ে বাড়ি হোক বা কোন রেস্টুরেন্টেই হোক না কেন আমরা সবাই পেট ভরে খেতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু খাওয়ার পর যদি পেট ব্যথা হয় তাহলে তো সব আনন্দ মাটি হয়ে যায়। পেটের সমস্যা জীবনের নানান ভালোলাগার মুহূর্ত নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আমাদের পেট কে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি তাই সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে সঙ্গে হজমের ক্ষমতাও বাড়াতে হবে আমাদের।
আরো পড়ুনঃ নার্ভের বিভিন্ন সমস্যা-নার্ভের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়
পেট ব্যথা কাকে বলে?
পেট ব্যথা চোখের কোন রোগ না হলেও এর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। পেট ব্যথার কারণ জানতে হলে আমাদের প্রথমে পেট সম্বন্ধে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। পেট হল পাঁজর এবং শ্রোণির (পেলভিস) মধ্যবর্তী জায়গা। শরীরের এই অংশে পরিপাক ক্রিয়ার সাথে যুক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবস্থান করে, যেমন -
- পাকস্থলী
- গলব্লাডার
- লিভার বা যকৃত
- বৃহদন্ত
- অগ্নাশয়
- ক্ষুদ্রান্ত্র
উপরের এই সকল অঙ্গ আমাদের খাবার গ্রহণ হজম পরিপক্ক খাবার অবশেষে শরীর থেকে নিষ্কাশনে সাহায্য করে থাকে। পেটে ব্যথা পরিপাকতন্ত্রের কোন একটি অঙ্গের সমস্যা জানান দিতে পারে। আমাদের প্রথমে জানতে হবে পেটের কোন দিকে ব্যথা হচ্ছে তলপেটে না পেটে না নাভির উপরে। পেট ব্যথার জায়গা নির্বাচন করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।
পেট ব্যাথার সাধারন কারণ
পেট ব্যথার অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে তবে ডাক্তারের মতামত অনুসারে কয়েকটি সাধারণ কারণ নিম্নে আলোচনা করব।
- গ্যাসের কারণে পেট ব্যথা হয়
- আলসার
- অম্বলের কারণে পেট ব্যথা হয়
- বদহজমের কারনে ব্যাথা
- গ্যাসের কারণে ব্যাথা
- ভাইরাসজনিত সংক্রমনের কারনে পেট ব্যাথা হয়
- ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের কারনে ব্যাথা হয়ে থাকে
- গলব্লাডার
- ডাইভার্টিকুলাইটিস এর কারনে পেট ব্যথা হয়
আমাদের পেটে খাদ্য পরিপাক করার সময় স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস তৈরি হয়ে থাকে। এই গ্যাস শরীর থেকে স্বাভাবিকভাবে নির্গত হয়। ডাল শাকসবজি খাবার আঁশযুক্ত খাবার ইত্যাদি হজম করার সময় গ্যাস উৎপন্ন হয়। শরীরে গ্যাস নির্গমনের থেকে বেশি হারে গ্যাস উৎপন্ন হলে পরিপাক তন্ত্রের মধ্যে সেই গ্যাস জমতে থাকে। এতে পরিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়, পেটে যন্ত্রণাও হতে পারে।
প্রথম প্রথম গ্যাসের ব্যাথা বেশিক্ষন স্থায়ী থাকে না। ধীরে ধীরে কমে যায়। দীর্ঘ দিনের অযত্নে হজম যন্ত্রে স্থায়ী ক্ষতি হলে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়ে এই সমস্যা চিরসাথী হয়ে উঠতে পারে। তাই সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করা উচিত। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক, সময়োচিত চিকিৎসার সাথে সাথে খাদ্যাভাসের ওপরে নজর রাখা দরকার।
অম্বলের কারনে পেট ব্যাথা
বর্তমান সময়ে ছোট বড় সকলেই তেল মশলা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকেন। তাই এ সমস্ত খাবার খাওয়ার কারণে সাধারণত অম্বলের সমস্যা দেখা দেয়। অম্বলের সাধারণ উপসর্গ গুলি হল -
- পেট ও বুকের মধ্যে জ্বালার অনুভূতি।
- পেট ভার হয়ে থাকা।
- টক ঢেঁকুর ওঠা।
- মুখ টক হয়ে যাওয়া।
এ সমস্ত উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিবেন তাহলে তাৎক্ষণিক এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু মাঝে মাঝে এ সমস্যা হলে চেপে রাখা মোটেও উচিত নয়। পরিপাক যন্ত্রে অ্যাসিডের (অম্ল) নিয়মিত আধিক্য হলে, তা পাকস্থলী এবং হজমের সাথে যুক্ত অন্যান্য অঙ্গের চিরস্থায়ী ক্ষতি করে। তাই অম্বল এবং অম্বল-জাত ব্যাথার সুরাহার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
বদহজমের ফলে পেট ব্যথার সমস্যা
আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কাজ হল খাদ্য গ্রহণ এবং হজম করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। কিন্তু পরিপাকতন্ত্রের আয়ত্তের বাইরে খাবার হলে তখন পরিপাকতন্ত্র হজম করার ক্ষমতা রাখেনা। ফলে বদহজম তৈরি হয়। এতে করে আমাদের শরীর খাবারের পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে শরীরে অস্বস্তি মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব পেট ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। বদহাজাম থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই খাবার খাওয়ার নিয়ম ঠিক রাখতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারনে পেটে ব্যাথা হয়
পরিপাকতন্ত্রে ইলেকট্রিক এসিড এবং বিফিডো ব্যাকটেরিয়া থাকে এরা আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে কিন্তু বাইরে থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশ করলে পরিপাকতন্ত্র খাবার হজমে সাহায্য করতে পারে না। ফালে পেট ব্যথার সৃষ্টি হয়। সংক্রমন তীব্র মাত্রায় পৌঁছলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন -
- বমিভাব
- পেটে যন্ত্রণা ও খিঁচুনি
- জ্বর
- বমি
- পাতলা পায়খানা
এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধ খাওয়া উচিত। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও অন্যান্য জীবাণু যেমন- ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী পেটে সংক্রমন তৈরি করতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রেও দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা জরুরী।
আলসার
পেট ব্যথার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে আলসার। আলসারের কারণে পেট ব্যথা হয়ে থাকে।পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্তের গায়ে ক্ষত কে আলসার বলে। বিভিন্ন কারনে এইরকম ক্ষতের জন্ম হয়, যেমন-
- পাকস্থলী ব্যাকটেরিয়ার (Helicobacter pylori) সংক্রমন।
- নিয়মিত তৈলাক্ত, মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া
- দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রদাহরোধী ওষুধের ব্যবহার।
- দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা।
- নিয়মিত মানসিক দুশ্চিন্তা
আলসারের উপসর্গগুলি হল -
- পেট কামড়ানো।
- পেটের উপরের দিকে মাঝে মাঝে ব্যাথা।
- নিয়মিত টক ঢেঁকুর ওঠা।
- পেটের উপরে ও পেটের মাঝখানে জ্বালা অনুভব করা।
এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা তাড়াতাড়ি শুরু করলে আলসারের সঠিক নিরাময় সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ জন্ডিস হওয়ার কারণ সমূহ-জন্ডিস রোগ দূর করার উপায়
তলপেটের ব্যাথার কারন
তলপেটে ব্যাথার কিছু বিশেষ কারন রয়েছে যেমন -
- মহিলাদের মাসিকের জন্য ক্র্যাম্প।
- পেরিটোনাইটিস।
- ডিম্বস্ফোটনের ব্যাথা।
- একটোপিক গর্ভাবস্থা
- মুত্রনালীতে সংক্রমণের জন্য তলপেটে ব্যাথা।
- লিভার ক্যান্সারের ব্যাথা।
- অন্ত্রের ক্যান্সার
- ডিসপেপ্সিয়া।
- অন্ত্রে প্রদাহ জনিত সমস্যা।
- কোলন ক্যান্সার।
- হার্নিয়া।
- কিডনিতে পাথর।
- ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রতিবন্ধকতা।
- জরায়ু ক্যান্সার
- এন্ড্রোমেট্রিওসিস
- ওভারিয়ান সিস্ট
- পেলভিক প্রদাহজনিত রোগ
- ওভারিয়ান ক্যান্সার
উপরের পেট ব্যথার কারণ অনেক সময় লিভারের বিভিন্ন সমস্যার কারণে উপরের পেটে ব্যথা হয় যেমন-
- পিত্তথলির প্রদাহ
- পিত্তথলির নানান সমস্যা
- হেপাটাইটিস
- পিত্তথলির ক্যান্সার
উপসংহার
পেটে সাধারন ব্যথা হয়ে থাকে মাঝে মাঝে। কোন জটিল কারণে পেট ব্যথা নাও হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত যদি পেট ব্যথা হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে অবহেলা করা উচিত নয়। দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথায় আপনাকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে শরীরের বড় সড়ক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নিয়মিত পেট ব্যথা করলে অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ এবং সঠিক চিকিৎসা করা জরুরী।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url