চুলকানি রোগ কেন হয়-চুলকানি রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
চুলকানি রোগ কেন হয়-চুলকানি রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আজ আপনাদের সাথে এই আর্টিকেল আলোচনা করব চুলকানি রোগ কেন হয় এবং চুলকানি রোগ দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুব উপকারী হবে। চলুন শুরু করা যাক।
চুলকানি কি?
চুলকানিকে চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রুরিটাস বলা হয়। এর মানে হল একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি যার ফলে জায়গাটিতে আঁচড়াতে ইচ্ছে করে। চুলকানি বেশ কয়েক ধরনের হতে পারে। সাধারণ চুলকানি হচ্ছে শুষ্ক ত্বক। চুলকানির সময়ের ঘর্ষণের কারণে শুষ্ক এবং খসখসে ত্বকে চুলকানি হয় এবং জ্বালা করে। চুলকানির কারণের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গও দেখা দিতে পারে। যেমন, জায়গাটি লাল হয়ে যাওয়া, ফোসকা পড়া, ফুসকুড়ি হওয়া এবং কখনও কখনও রক্তও দেখা যেতে পারে।
কারোর ক্ষেত্রে স্থায়ী চুলকানির পিছনে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকম কারণও থাকতে পারে। যেমন- চর্ম রোগ, সোরাইসিস, গর্ভাবস্থা, এবং খুবই সামান্য ক্ষেত্রে ক্যান্সার। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যাদের অনেক রকমের রোগ আছে, যেমন মধুমেহ, এলার্জি এবং হাঁপানি, তাদের চুলকানি বেশি হয়। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমতে থাকে। তাই বয়স্ক মানুষদের মধ্যে চুলকানি বেশি দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ বুক ব্যথার কারণ-বুক ব্যথা সমাধানের উপায়
চুলকানির উপসর্গ
চুলকানির অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা যায়।চুলকানির অনুভূতি খুবই সাধারণ এবং সহজেই চেনা যায়। এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে অথবা চুলকানোর পরেই চলে যেতে পারে। অবশ্য চুলকানির কারণ যদি অন্য কোনও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সাথে জড়িত থাকে তাহলে জায়গাটিতে শুধু চুলকানিই হবে না। চুলকানির সাথে সাথে এই গুলিও হতে পারে-
- জায়গাটি লালচে হয়ে যাওয়া
- ফুলে যাওয়া
- শুষ্ক ত্বক
- প্রদাহ
- জ্বালা করা
- খসখসে হয়ে যাওয়া
- ফোস্কা পড়া
- ত্বক আঁশের মতন হওয়া
শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হতে পারে। যেমন- হাতে, মাথায় এবং পিঠে অথবা যৌনাঙ্গের এলাকাতে চুলকানি হচ্ছে বিব্রতকর একটি সমস্যা। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ত্বকের সাধারণ সমস্যা অথবা সরল চর্মরোগ থেকে চুলকানির সূত্রপাত হয়েছে। আপনার চুলকানি অনুভূত হলে প্রথমে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসার চেষ্টা করে দেখতে হবে।
আবার এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, ত্বকের চুলকানি কোনো মারাত্মক রোগেরও উপসর্গ হতে পারে। যেমন- কিডনির রোগ, লিভারের রোগ, সেলিয়াক রোগ ও লিম্ফোমা। তাই চুলকানি সাধারণ ঘরোয়া চিকিৎসা যদি ভালো না হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সব রকম চিকিৎসা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
চুলকানি উপশমের জন্য ৮ ঘরোয়া চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো।
* পর্যাপ্ত পানি পান
চুলকানি চিকিৎসার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শুধুমাত্র চুলকানি চিকিৎসার জন্য শরীরের বাইরে বা ত্বক নিয়ে চিন্তিত থাকলে হবেনা শরীরের ভেতরের দিকটারোর নজর রাখতে হবে। ড. গন বলেন, ‘প্রচুর পানি পান করে হাইড্রেটেড থেকে আপনার ত্বককেও হাইড্রেটেড বা আর্দ্র রাখতে পারেন।’ ত্বক আর্দ্র থাকলে চুলকানির প্রবণতা কমে যাবে।
* ওটমিলের গুঁড়া
চুলকানির ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য ওটমিলের গুঁড়া কার্যকরী একটি চিকিৎসা হতে পারে। ওটমিলও ত্বকের চুলকানি উপশম করতে পারে। গোসলের পানিতে অল্প পরিমাণ কলোইডাল ওটস মেশান। ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে অবস্থিত আর্ট অব স্কিনের কসমেটিক সার্জন ও ডার্মাটোলজিস্ট মেলানি পাম বলেন, ‘কলোইডাল ওটমিল মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের ওপর প্রদাহবিরোধী ও আরামদায়ক আস্তরণ পড়বে, ফলে চুলকানির মাত্রা কমে যাবে। এছাড়াও চুলকানির চিকিৎসায় ভালো ফল পেতে কুসুম গরম পানিতে ওটমিল পাউডার যোগ করে গোসল করতে পারেন।’
* ভেজিটেবল ফ্যাট
ভেজিটেবল ফ্যাট হচ্ছে চুলকানি রোগের ঘরোয়া ঔষধ। ভেজিটেবল ফ্যাট কেবলমাত্র কাপকেকের জন্য নয়, এটি চুলকানির চিকিৎসায়ও কাজে আসতে পারে। ডা.গণ বলেন, ‘চুলকানি উপশমে ভেজিটেবল ফ্যাটের ব্যবহার শুনতে অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো ভেজিটেবল ফ্যাট একটি চমৎকার ময়েশ্চারাইজার। অনেক চিকিৎসক রয়েছে যারা ত্বকের জন্য এ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।’
* নারকেল তেল অথবা জলপাই তেল
চুলকানি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে একটি রয়েছে নারকেল তেল অথবা জলপাই তেলের ব্যবহার করা। নারকেল তেল ও জলপাই তেল ত্বকের হাইড্রেশন বা আর্দ্রতার জন্য ভালো এবং ত্বকের ক্ষতি করে না, বলেন নর্থ ক্যারোলিনার চ্যাপেল হিলে অবস্থিত ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেজার সেন্টারের ত্বক বিশেষজ্ঞ ক্রিস জি. অ্যাডিগান। যেকোনো শুষ্ক ও চুলকানির স্থানে এসব তেল মাখলে চুলকানি থেকে অনেকাংশের রেহাই পাওয়া সম্ভব।
* বেকিং সোডা
বেকিং সোডা হচ্ছে চুলকানি রোগের ঘরোয়া একটি সমাধান। শরীরে বেকিং সোডা মিশিয়ে গোসল করলে ত্বকের জন্য আরামদায়ক হতে পারে। মিনেসোটার অবস্থিত তারিন ডার্মাটোলজির ত্বক বিশেষজ্ঞ মোহিবা তারিন বলেন, ‘ত্বকের চুলকানি কমাতে একটি কার্যকর উপায় হলো পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে গোসল করা। বেকিং সোডা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটের ধ্বংস করতে পারে এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করতে পারে।
* ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি হচ্ছে শরীরে ত্বকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন দিনগুলোতে চুলকানির প্রবণতা বেড়ে যায়। শরীরে ভিটামিন ডি কতটুকু রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ত্বকের চুলকানি বাড়তে পারে অথবা কমতে পারে। ডা.গণ বলেন, ‘আপনার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভিটামিন ডি কমে গেলে ত্বকের সমস্যা ও চুলকানি অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে পারে।’
* ওমেগা ৩
ওমেগা থ্রি হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। চুলকানি দূর করতে বা দমন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চুলকানির সমস্যায় ভোগা লোকদের বেশি করে ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে উৎসাহিত করছেন, যেমন- অ্যাভোকাডো, বাদাম ও স্যালমন মাছ। পর্যাপ্ত ওমেগা ৩ খেলে আপনার ত্বকেও এ ফ্যাটের অনুপ্রবেশ ঘটবে, ফলে চুলকানি প্রশমিত হবে।
* অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা চেনেন না হয়তো এমন কেউ নেই। আপনি সম্ভবত জানেন যে, পোড়া ত্বকের নিরাময়ে অ্যালোভেরা বেশ কার্যকর। কিন্তু আপনি হয়তো এটা জানেন না যে, ত্বকের চুলকানি উপশমেও এ উদ্ভিদটি জাদুর মত কাজ করে থাকে। ‘অ্যালোভেরা হলো একটি প্রদাহরোধী ওষুধ, একারণে ত্বকের অস্বস্তিকর চুলকানির জন্য এটি কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে।’ অ্যালোভেরা থেকে তাজা জেল বের করে চুলকানির স্থানে প্রয়োগ করুন।
আরো পড়ুনঃ চোখের যত্ন কিভাবে নিবেন-চোখের সমস্যার সমাধানে করণীয়
মন্তব্য: চুলকানি রোগ কেন হয়-চুলকানি রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
সম্মানিত পাঠক বন্ধু চুলকানি রোগ একটি কমন রোগ এবং প্রায় সবার হয়ে থাকে। তাই এই রোগকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। অনেক বড় বড় লোকের উপসর্গ হিসেবে চুলকানি রোগ কাজ করে থাকে। তাই চুলকানি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সমস্ত টেস্ট করিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।
আমাদের শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক বন্ধু, আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি আপনার উপকারী হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে এই উপকারের বিষয়গুলো শেয়ার করবেন। এবং আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকবেন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url