দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ-কিভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ-কিভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন

সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। মোটিভেশন আইঊডির পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছে যাদের দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ে। কিন্তু তারা জানেই না এই রক্ত কেন পড়ে, বা রক্ত পড়লেও এই রক্ত বন্ধের সমাধানই বা কি? চিকিৎসায় বা কি আছে? এই বিষয়ে আমরা অনেকেই অবগত নই। আজকে এই আর্টিকেলে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আমরা এই পর্বে প্রথমেই জানব দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ কি কি? চলুন দেরি না করে শুরু করি।

ছবি

দাঁতের মাড়ি থেকে প্রধানত দুইটি কারণে রক্ত পড়ে থাকে।

  • ১.স্থানীয় কারণ
  • ২.পদ্ধতিগত কারণ

১. স্থানীয় কারণ: স্থানীয় কারণে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে থাকে। দাঁতের মাড়িতে ডেন্টাল প্লাক জমা থাকার কারণে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে মাড়ি ফুলে যায়। দাঁতের সঙ্গে মাড়ির সংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এই সময়ে দাঁত ব্রাশ করলে বা শক্ত কোনো খাবার খেলে অথবা সামান্য আঘাতেই মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। এই অবস্থাকে ডাক্তারের ভাষায় বলা হয় পেরিওডেন্টাল ডিজিজ(periodental disease) যার দুটি স্তর রয়েছে, 

  • প্রথম স্তরটি হচ্ছে জিনজিভাইটিস
  • দ্বিতীয় স্তরটি হচ্ছে পেরিওডনটাইটিজ।

২. পদ্ধতিগত কারণ: দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার দুই নম্বর কারণ হচ্ছে পদ্ধতিগত কারণ। কারো যদি ব্লাড ক্যান্সার হয়ে থাকে, লিভার সমস্যা থাকে, যদি রক্তের প্লেইটলেট বা হিমোগ্লোবিন কম থাকে, যেমন- ব্লাড ডিজঅর্ডার বা রক্তের ব্যাধি তাদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। যারা হৃদরোগের কারণে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খান, রক্ত পাতলা রাখার জন্য ওষুধ খান, অ্যাসপিরিন অথবা ডিসপিরিন বা ক্লোপিড জাতীয় ওষুধ খান তাদের ও এই সমস্যাটি হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভকালীন মায়েদের এক ধরনের হরমোনের কারণে মাড়ি থেকে রক্তবের হয়।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে দ্রুত লম্বা হওয়া যায়-দ্রুত লম্বা হওয়ার জন্য করণীয়

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার লক্ষণ

১. মাড়ি থেকে দাঁতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়।

২. দাঁত ব্রাশ করলে বা শক্ত কোনো খাবার চিবিয়ে খেলে রক্ত বের হওয়া।

৩.মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়া।

৪.অনেক ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠলে মুখে রক্ত দেখা যাওয়া।

দাঁতের মাড়ি থেকে নিয়মিত রক্ত পড়ার পরেও যদি চিকিৎসা না হয় তবে, মাড়ির প্রদাহের কারণে দাঁতের সাথে মাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধীরে ধীরে দাঁত নড়ে যায় এবং যে কোনো সময় পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া মাড়ির এই প্রদাহের কারণে বিভিন্ন জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া রক্তে মিশে দেহের অন্যতম প্রধান অঙ্গসমূহ যেমন হার্ট বা হৃদযন্ত্রকেও আক্রান্ত করে দেয়। ফলে হৃদরোগ ও হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের মাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়া ভবিষ্যৎ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন শিশু কম ওজনের হতে পারে। 

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধের চিকিৎসা

কিভাবে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আমরা এই পর্বে জানব দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধের চিকিৎসা সম্পর্কে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধের চিকিৎসা দুই ধরনের। যদি স্থানীয় কারণে হয়ে থাকে তবে ডেন্টাল প্লাক পরিষ্কার করা। এর জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায় হচ্ছে ডেন্টাল স্কেলিং। অধুনিক আলট্রাসনিক স্কেলার যন্ত্রের মাধ্যমে খুব সহজেই দাঁতের সঙ্গে লেগে থাকা ডেন্টাল প্লাক বা শক্ত আবরণ পরিষ্কারভাবে সরিয়ে দেওয়া যায়।

১.যদি মাড়ি প্রদাহের কারণে ফুলে যায় তবে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরে মাড়ির  চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। যাকে ডেন্টালের ভাষায় বলা হয় জিনজিভেকটমি বা রুট প্ল্যানিং। এর ফলে মাড়ি পরবর্তীতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে আর রক্তক্ষরণ হওয়ার সুযোগ থাকে না। চলুন জেনে নেই দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে।

২. ওপরের পাটি থেকে নিচের পাটি এবং নিচের পাটি থেকে ওপরের পাটি এইভাবে ওপর নিচ বা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। যাতে প্রত্যেকটি দাঁতের বাইরের এবং ভেতরের পাটির প্লাক থেকে খাদ্য কণা পরিষ্কার হয়।

 ৩.দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে প্রতিদিন দুইবেলা সকালে নাস্তার পরে ও রাতে খাওয়ার পর অর্থাৎ  ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করবেন।

৪.দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার প্রতিরোধে প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল যেমন- কমলালেবু, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, আমলকি, আমড়া, কলা এবং মাল্টা খান।। তাছাড়াও প্রতিদিন সালাদ হিসেবে গাজর, টমেটো, শশা, লেবুর রস ইত্যাদি খেতে পারেন।

 ৫. নিয়মিত দাঁত ব্রাশের আগে ডেন্টাল ফ্লশ দিয়ে দুই দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা পরিষ্কার করতে হবে এবং একজাতীয় মাউথ ওয়াশ আয়োডিন দিয়ে কুলিকুচি করতে হবে।

৫. ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে (নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ওষুধ সেবন করে)।

৪. ধূমপান বা তামাকজাতীয় খাদ্য বর্জন করতে হবে।


 প্রত্যেকেরই দাঁতের ও মাড়ির প্রকৃতি অনুযায়ী টুথব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন। যেমন নরম, মধ্যম ও শক্ত টুথব্রাশ। আর তা নির্ধারণ করে দেবেন ডেন্টিস্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নরম বা মধ্যম ধরনের টুথ ব্রাশ ব্যবহার করতে দেখা যায়। টুথব্রাশের সময়সীমা বা কতদিন ব্যবহার করা যায় সেটিও খেয়াল রাখার কথা বলেন  চিকিৎসকরা। টুথব্রাশের ফাইবার বা ব্রিসলগুলো যখন সোজা না থাকে , বাঁকা হয়ে যায় তখনই টুথব্রাশ ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে যায়।

সতর্কতা 

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে অবশ্যই আমাদের সতর্ক হতে হবে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণকে খুব সহজভাবে দেখা উচিত নয়। এর জন্য রোগীর ইতিহাস, বিভিন্ন রোগের উপস্থিতি ও ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে চিকিৎসককে দেখাতে হবে। প্রয়োজনে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া যারা ধূমপান করেন, এবং যাদের ডায়াবেটিস আছে তারাও ঝুঁকিপূর্ণ। ধুমপানের কারণে মাড়িতে প্রদাহ এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে মাড়িতে তীব্র প্রদাহ হয়। ফলে মাড়ি থেকে রক্ত বের  হয়।

আরো পড়ুনঃ মানব দেহের ৩৫ টি জটিল রোগ সম্পর্কে জেনে নিন

আমাদের শেষের কথা: দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ-কিভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আর্টিকেলটি পড়ে ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল লিখে থাকি। তাই নিয়মিত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url