শরীরের রক্তশূন্যতার কারণ-কিভাবে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করা যায়
শরীরের রক্তশূন্যতার কারণ-কিভাবে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করা যায়
আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে রক্ত। রক্তের ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপাদান যে উপাদান গুলো রক্তের মধ্যে হ্রাস পেলে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আমাদের অনেকে রয়েছে যারা রক্তশূন্যতায় ভোগেন। এর মধ্যে অনেকেই জানেনা রক্তশূন্যতা ভোগার কারণ এবং লক্ষণ সম্পর্কে। এই আর্টিকেলে রক্তশূন্যতার কারন লক্ষণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্ট সূচীপত্র: শরীরের রক্তশূন্যতার কারণ-কিভাবে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করা যায়
- রক্তশূন্যতা-কী?
- শরীরের রক্তশূন্যতার কারণ কী কী?
- রক্তশূন্যতার লক্ষণ কী কী?
- রক্তশূন্যতার চিকিৎসা
- শরীরে রক্তশূন্যতা হলে কী খেতে হবে
- মন্তব্য
রক্তশূন্যতা-কী?
রক্তশূন্যতা হচ্ছে রক্তের এমন একটি রোগ যেখানে রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে অনেক কম থাকে। এছাড়া ওর রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কম থাকে। রক্তের একটি বিশেষ উপাদান হচ্ছে লোহিত রক্তকণিকা। যেখানে হিমোগ্লোবিন নামের একটি বিশেষ ধরনের রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। এই হিমোগ্লোবিন বয়স লিঙ্গ ভেদে যখন স্বাভাবিক মাত্রা খেয়ে কমে যায় তখন তাকে রক্তশূন্য বলে।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে রক্ত পরিষ্কার রাখার সহজ উপায়
শরীরের রক্তশূন্যতার কারণ কী কী?
শরীরের রক্তশূন্যতার বিভিন্ন কারণ হতে পারে। বিভিন্ন কারণে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এই কারণগুলোকে মোটামুটি ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১.লোহিতকণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়া: লোহিত রক্তকণিকা দ্রুত ভেঙে যাওয়ার কারণে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
২.রক্তের লোহিতকণিকার উৎপাদনজনিত সমস্যা: শরীরের রক্তশূন্যতার দ্বিতীয় কারণটি হলো আয়রনের ঘাটতি। ভিটামিন বি এবং ফলিক এসিডের ঘাটতি জনিত কারণে, এ প্লাস্টিক অ্যামেনিয়া নষ্ট হলে বিভিন্ন দিরহামে আদিবাসীদের প্রভাব হলে রক্তের ক্যান্সার জনিত কারণে রক্তশূন্য দেখা দেয়।আমাদের দেশে আয়রনের ঘাটতিজনিত এনিমিয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে।
৩.রক্তক্ষরণজনিত: কৃমি, পেপটিক আলসার, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ওষুধ, পাইলস, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, দুর্ঘটনাজনিত হঠাৎ রক্তক্ষরণ ইত্যাদির কারণে শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ কী কী?
শরীরে রক্ত শূন্যতা হয়ে গেলে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।
- চোখ হাত পা ফেক আছে হয়ে যায়
- দুর্বল লাগে
- অবসাদগ্রস্ততা ও ক্লান্তি অনুভব করে
- মাথা ধরে হাতে পায়ে ঝিঝি ধরা বা অভাস লাগা
- মুখে ঘা হয়ে থাকে
- খাওয়ার গিলতে অসুবিধা হয়ে থাকে
রক্তশূন্যতার চিকিৎসা
রোগীর বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কোন রোগের সন্দেহ হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়। রক্তশূন্যতারও চিকিৎসা রয়েছে। রক্তশূন্যতা আসলে কোন রোগ নয়, এটি রোগের উপসর্গ। সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করাই হলো মূল চিকিৎসা।কখনো কখনো পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময় শিরাপথে আয়রন ইনজেকশনও দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
শরীরে রক্তশূন্যতা হলে কী খেতে হবে
শরীরের রক্তশূন্য তাহলে রক্তশূন্যতা পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার রয়েছে। রক্ত উৎপাদনের জন্য আয়রন অতিক্রয়োজনীয় উপাদান। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো হল-লাল শাক, ডাটা শাক, পালং শাক, বাদাম, পুঁইশাক, কচু, ধনেপাতা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, সিম, ড্রাগন ফল, তরমুজ, কালো আঙ্গুর ডালিম।
এদের বিচি, বিট, কিডনি বিনস, ছোলা, ডিম, গুড়, কলিজা, মুরগির মাংস ও পরিমিত পরিমাণে গরুর মাংস।
দেহে রক্ত বাড়ানোর ১০টি খাবার
রক্ত হচ্ছে মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা দেহের সকল অংশের অক্সিজেন এবং সব ধরনের পুষ্টি বয়ে নিয়ে আসে। দেহের রক্তের কোন উপাদান যদি কম থাকে তাহলে সুস্থ ভাবে বাঁচার সম্ভাবনা কম।
রক্তে আছে লাল রক্তকণিকা, সাদা রক্তকণিকা, এবং প্লেটলেট। রক্ত রয়েছে হিমোগ্লোবিন। যা আমাদের হৃদপিণ্ডকে অক্সিজেন সরবরাহের সাহায্য করে থাকে। আমাদের ওপরে আর্য অংশ রক্ত এই রক্ত শরীরে বাড়ানোর জন্য দশটি খাবার অতিব প্রয়োজনীয়। এই খাবারগুলো খেলে রক্তে হিমোগ্লো মিলে পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।
আরো পড়ুনঃ কি কি খাবার খেলে রক্তে প্লাটিলেট বাড়ে জেনে নিন
১. মাংস
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাণীর প্রোটিন প্রয়োজন। মাংস তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাণীর প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস; যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। এই মাংসগুলো রক্তে আয়রন এবং হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরী। রক্তে হিমোগ্লোবিন এবং আয়রনের পরিমাণ বাড়ানোর আরেকটি মাংস হচ্ছে মুরগির মাংস। এটি লাল মাংস না হলেও দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।
২. ফল
বিভিন্ন ধরনের ফল রয়েছে যেই ফলগুলো খেলে রক্তে আইরন এবং হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ হয়। রসালো সাইট্রাস ফল যেমন-আম, লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ, পেয়ারা এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।
৩. সামুদ্রিক খাদ্য
আয়রন এবং হিমোগ্লোবিনের উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। তাই অ্যানেমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ রাখতে হবে।
৪. কলাই বা শুটিজাতীয় খাদ্য
কলাইবা সুতি জাতীয় খাদ্য যেমন সয়াবিন ছোলা এবং বিন জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে সয়াবিন বর্তমানে একটি জনপ্রিয় সবজি ভজি খাবার এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়ায়।
৫. পুর্ণশস্যজাতীয় খাদ্য
পূর্ণ শস্য জাতীয় খাবার হচ্ছে-চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। এ সমস্ত খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে থাকে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্য আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস।
৬. সবজি
আয়রনের একটি অন্যতম উৎস হচ্ছে সবজি জাতীয় খাবার। প্রতিদিন সবজি জাতীয় খাবার খেলে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ পুষ্টি এবং নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়। আলু, ব্রকলি, টমেটো, কুমড়া এবং বিটরুট আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম। এছাড়া স্পিনাক সহ অন্যান্য সবজিও বেশ আয়রন সমৃদ্ধ।
৭. ডিম
ডিম হলো আরেকটি পুষ্টিকর খাবার যেখানে উচ্চ মাত্রার আয়রন এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি থাকে। ডিমের হলুদ অংশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি ও ভিটামিন। এ জন্য দুর্বল লোকদেরকে প্রতিদিন খেতে বলা হয়।
৮. শুকনো ফল
আমরা হয়তো অনেকে জানিনা শুকনো জাতীয় ফলে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। কিসমিস এবং খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিনের ফাঁপা। এসব খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব দ্রুত গতিতে বাড়ে।
৯. বাদাম
যেকোনো বাদাম মানবদেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী বিবেচনা করা হয়। যে কারণে তরুণদেরকে কাজু বাদাম চিনা বাদাম এবং আখরো ট খেতে বলা হয়। কেননা এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে।
১০. ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকলেট হলো শিশুদের খুব জনপ্রিয় খাবার। ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এ কারণে ডাক্তার চকলেট খেতে বলেন।
মন্তব্য: শরীরের রক্তশূন্যতার কারণ-কিভাবে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করা যায়
উপরে খাদ্যগুলো দেহে আয়রন মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব দ্রুত গতিতে বাড়াবে। তাই নিয়মিতভাবে এই খাবারগুলো খেয়ে দেয়ে রক্তের পরিমাণ এবং জীবনী শক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকুন।
আমাদের শেষের কথা
সম্মানিত পাঠক আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি অবশ্যই বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করে দিবেন। তারাও যেন এ সম্পর্কে তারাও সচেতন হয় এবং রক্তের বিভিন্ন ধরনের উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url