ডায়রিয়া হওয়ার কারণ-ডায়রিয়া হলে করণীয়

ডায়রিয়া হওয়ার কারণ-ডায়রিয়া হলে করণীয়

প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ডায়রিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে। ডায়রিয়া হওয়ার কারণ এবং ডায়রিয়া হলে কি কি করবেন এছাড়াও ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায় বাকি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি খুবই উপকৃত হবেন। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক। 

পোস্ট সূচিপত্র: ডায়রিয়া হওয়ার কারণ-ডায়রিয়া হলে করণীয়

  • ডায়রিয়া কি
  • ডায়রিয়ার কারণ
  • ডায়রিয়ার লক্ষণ
  • ডায়রিয়া প্রতিকার এবং প্রতিরোধ 
  • ডায়রিয়া পাতলা পায়খানা হলে কী খাবার খেতে হবে
  • ডায়রিয়া হলে যা খাবেন না
  • ডায়রিয়ার ঔষধ
  • ডায়রিয়া হলে যেসব ওষুধ খাওয়া যাবে না

ডায়রিয়া কি? 

ছবি

ডায়রিয়ায় সাধারণত পাতলা পায়খানা এই শব্দ দুটি একত্রে ব্যবহার করে থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নরম পায়খানা বা পাতলা পায়খানা হওয়ার মানে যে ডায়রিয়া এমন কথা নয়। সারাদিনে যদি তিনবার বা তার বেশি নরম পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তাকে সাধারণত ডায়রিয়া বলা হয়। এছাড়াও কারো যদি স্বাভাবিকের তুলনায় ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে, সেটা কেউ ডায়রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আরো পড়ুনঃ শিশুর জ্বর কমানোর ঘরোয়া ৮টি উপায়

ডায়রিয়ার কারণ

ডায়রিয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সাধারণত জীবানু পেটে ঢোকার কারণে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়। আর সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যদি কয়েক দিনের মাঝে সেরে যায়। কিন্তু যদি মারাত্মকভাবে হয়ে থাকে তাহলে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হয় এর কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডায়রিয়ার অনেক ধরনের কারণ রয়েছে চলুন নিজে কারণ গুলো জেনে নেই।

১. খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা

ডায়রিয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করা ডায়রিয়া সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।

২. ব্যাকটেরিয়াজনিত কারনে ডায়রিয়া

ডায়রিয়া রোগের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণ। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া যেমন ফ্রি গেলা সালমোনেলা স্টেরিয়া কলাই,ভিব্রিও, ইত্যাদি।

৩. ভাইরাসজনিত কারনে ডায়রিয়া

ভাইরাসজনিত কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। রোটাভাইরাস, হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস ডায়রিয়া ঘটাতে পারে। এছাড়াও

৪. ছত্রাকজনিত কারণে ডায়রিয়া

৫. কৃমিজনিত কারণে ডায়রিয়া

৬. প্রোটোজোয়াজনিত কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।

জিয়ার্ডিয়া ও এন্টামিবা জাতীয় প্রোটোজোয়া ডায়রিয়া হওয়ার জন্য দায়ী।

৮. অজানা কারণের ডায়রিয়া

অজানা কারণে অনেক সময় ডায়রিয়া হয়ে থাকে। কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই অনেক মানুষকে ডায়রিয়ার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমন একটি ঘটনার উদাহরণ ব্রেইণার্ড ডায়রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মেনিসোটার ব্রেইণার্ড নামক অঞ্চলে এই ডায়রিয়ার প্রোকোপ দেখা যায়। এতে কোনো ধরনের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ডায়রিয়ার লক্ষণ

ডায়রিয়ার অনেক ধরনের লক্ষণ রয়েছে। ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো হল মলত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ ও ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এছাড়াও পেট ব্যথা করে, বমি বমি ভাব হয়, পেটে চাপ অনুভূত হয়, পেট ফুলে যায়, ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ডায়রিয়ার ফলে গুরুতর জটিল যে সমস্যাটি হয় সেটি হচ্ছে ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা। রোগীর ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা হয়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 

কেননা ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরলের একটি অংশ বের হয়ে যায় আর এর ফলেই পানি শূন্যতা ঝুঁকি বেড়ে যায় পানি শূন্যতার লক্ষণ গুলো হল শুকন শ্লেষ্মা ,হৃদ স্পন্দন বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, প্রসাব হ্রাস, শুকনো মুখ, তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া, প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করা। বাচ্চাদের ডায়রিয়া এবং পানি শূন্যতার ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল এ সময় বাচ্চাদের প্রসব কমে যায় মাথা ব্যথা হয় ক্লান্ত দেখায় কান্নার সময় চোখে পানি থাকে না এছাড়াও মুখ শুকিয়ে থাকে।

ডায়রিয়া প্রতিকার এবং প্রতিরোধ 

সাধারণ ডায়রিয়া হয়ে থাকলে এটি আস্তে আস্তে নিজে থেকে ছেড়ে যায় কিন্তু জীবাণু দ্বারা যদি ডায়রিয়া হয়ে থাকে তাহলে প্রতিদিন 20 থেকে 30 লিটার পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। যা শরীরের জন্য খুব মারাত্মক। তাই ডায়রিয়া চলাকালীন রোগীকে অবশ্যই খাবার স্যালাইন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে। ইউনিসেফ এর মতে মলত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ৪০% হ্রাস পায়।

ছবি

ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টিকা হচ্ছে কলেরা টীকা।রোটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ও  টিকা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য হলো কলেরা টিকা। রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধেও টিকা রয়েছে।

ডায়রিয়া পাতলা পায়খানা হলে কী খাবার খেতে হবে?

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এর জন্য ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন, তরল পানি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর আধা লিটার খাবার স্যালাইন খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। তরল পানির মধ্যে চিড়া পানি, ভাতের মাড়, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে ভাতের পরিমাণের সামান্য লবন দিয়ে খাবেন। শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।

ডায়রিয়া হলে যা খাবেন না

ডায়রিয়া কঠিন অবস্থায় চলে গেলে এটি একটি সেনসিটিভ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই নির্দিষ্ট খাবার স্যালাইন খেলে যে ডায়রিয়া ছেড়ে যাবে এমন কথার ভিত্তি নেই। যেমন সমাজে একটি ধারণা রয়েছে যে ডায়রিয়া রোগীর সাদা ভাত আর কাঁচা কলা ছাড়া কিছুই খেতে পারবেন না কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয় পাতলা পায়খানা হলেও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যাবে। তবে ডায়রিয়া হলে বাজার থেকে হলে জুস কমল পানি কফি চিনি দেয়া চা এগুলো পরিহার করতে হবে। এসব খেলে ডায়রিয়া আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই এসব খাবার থেকে বিরত থাকুন।

ডায়রিয়ার ঔষধ

ডায়রিয়া যদি ৫/৭ দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ভালো হয়ে যায় তাহলে ডায়রিয়ার কারণে পানি শূন্যতা পূরণে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ডায়রিয়ার ঔষধ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

খাবার স্যালাইন

ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার সাথে সাথে আধা লিটার করে খাবার স্যালাইনযুক্ত পানি পান করতে হবে। ঘরে খাবার স্যালাইন না থাকলে আধা লিটার পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে স্যালাইন তৈরি করে নিতে পারেন। এছাড়াও ভাতের মার ডাবের পানি কিংবা চিড়া পানিও পান করতে পারেন।

প্যারাসিটামল 

ডায়রিয়ার কারণে যদি পেটে অস্বস্তি বোধ হয় তাহলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। শিশুদেরকে ওষুধ দেয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

লোপেরামাইড-জাতীয় ওষুধ

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী লেবুরামাইড ওষুধ সেবন করবেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া 12 বছরের কম বয়সে শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না। এতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

জিংক ট্যাবলেট

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার জন্য জিং ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। জিন ট্যাবলেট ওষুধটি ডায়রিয়া হওয়ার সমকাল এক চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে পারে যেটা গবেষণায় দেখা গেছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ মিলিগ্রাম করে 10 থেকে 15 দিনের জন্য জিং ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়াতে পারেন।

ডায়রিয়া হলে ডায়রিয়ার ওষুধের সাথে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে পুষ্টিহীনতা থেকে ডায়রিয়া হয়ে থাকে আবার ডায়রিয়ার কারণে খুব শরীর থেকে পুষ্টি উপাদান কমে যায় তাই ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে মারাত্মক পানি শূন্য তাহলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন 

ডায়রিয়া হলে যেসব ওষুধ খাওয়া যাবে না

ডায়রিয়া হলে সব ধরনের ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য ওষুধ খাওয়া যাবে না 16 বছরের কম বয়সী শিশুদের এসপিরিন আছে এমন ওষুধ দিবেন না। কেননা এক্সপিরিন হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক যা দ্রুত পাতলা পায়খানা বন্ধ পড়ে থাকে। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে এমন ওষুধ খাওয়া যাবেনা। অ্যান্টিবায়োটিকের খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

আমাদের শেষের কথা: ডায়রিয়া হওয়ার কারণ-ডায়রিয়া হলে করণীয়

সম্মানিত পাঠক বন্ধু আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে এবং ডায়রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আসুন আমরা সচেতন হয় এবং ডায়রিয়া মুক্ত জীবন গড়ি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর নিয়মিত আমাদের সাথেই থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url