প্রস্রাবের ইনফেকশন হওয়ার কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

প্রস্রাবের ইনফেকশন হওয়ার কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

সাম্প্রতিক সময়ে প্রস্রাবের ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশন খুবই পরিচিত একটি রোগ। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মকানুন মেনে চললে প্রস্রাবের ইনফেকশন রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব। সুপ্রিয় পাঠক আজকে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে। আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর্টিকেলটি অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

পোস্ট সূচীপত্র: প্রস্রাবের ইনফেকশন হওয়ার কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

  • ইউরিন ইনফেকশন কি 
  • ইউরিন (প্রস্রাবের)ইনফেকশনের লক্ষণ
  • প্রস্রাবের ইনফেকশনের কারণ
  • প্রস্রাবের ইনফেকশন প্রতিরোধে করণীয় কী
  • প্রস্রাবের ইনফেকশনের চিকিৎসা

প্রস্রাবের (ইউরিন) ইনফেকশন কী

সম্মানিত পাঠক আমরা প্রথমে জানব প্রসাবের ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশন আসলে কি এই বিষয়ে। আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি এবং বর্জ্য পদার্থ প্রসাব হিসেবে বেরিয়ে যায়। প্রসাব বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রসাবের অঙ্গগুলো আমাদের মূল মুত্র তন্ত্র। মূত্র তন্ত্রের মধ্যে দুইটি কিডনি দুইটি ইউরেটার এবং একটি মূত্রথলি বা ব্লাডার রয়েছে। মূত্র তন্ত্রের এই অংশগুলোর কোন একটি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে সেটিকে আমরা প্রসবের ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশন বলে থাকি। ডাক্তারি ভাষায় একে 'ইউরিনারি ট্র‍্যাক ইনফেকশন ' বা ' ইউটিআই ' বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ ডায়রিয়া হওয়ার কারণ-ডায়রিয়া হলে করণীয়

প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণ

ছবি

উপরের আর্টিকেলে আমরা জানতে পারলাম ইউরিন ইনফেকশন বা প্রসাবের ইনফেকশন কি সেই বিষয়ে। প্রসাবের ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশনের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ রয়েছে। যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার প্রসাবের ইনফেকশন হয়েছে। চলুন লক্ষণগুলো জেনে আসি।

ইউরিন ইনফেকশনের অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত কিছু লক্ষণ আছে। সেগুলো হলো -

  • প্রসাবের সময় প্রসাবের দ্বার ব্যথা করে এবং জ্বালাপোড়া হয় 
  • অস্বাভাবিকভাবে ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া 
  • রাতে বারবার প্রসাবের বেগ তৈরি হওয়া 
  • ঘোলাটে প্রসাব এবং অধিক গন্ধযুক্ত প্রসাব হওয়া 
  • প্রস্রাবের বেক ধরে রাখতে কষ্ট হওয়া 
  • প্রস্রাবের  বেগ আসলে তলপেট ব্যথা করা 
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • কোমরের পিছনের পাঁজরের ঠিক অংশে ব্যথা হওয়া 
  • শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা 
  • শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া
  • বমি বমি লাগা এবং ক্লান্তি অনুভব করা

প্রিয় পাঠক উপরে যে লক্ষণগুলো আলোচনা করলাম সেগুলো বয়স ভেদে প্রস্রাবের ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। বয়স্ক ও প্রসাবের নল দেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এর লক্ষণ গুলো পরিবর্তন হতে পারে যেমন 

  • অস্বাভাবিক আচরণ 
  • শরীরে কাঁপনীয় ঝাঁকুনি হওয়া 
  • মানসিকভাবে বিভ্রান্তি অথবা ক্ষোভ অনুভব করা
  • প্রস্রাবের সময় জামাকাপড় নষ্ট করে ফেলা

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এর লক্ষণ গুলো ভিন্ন ধরনের হয় যেমন-

  • ঘন ঘন প্রসাব করা কিংবা বিছানায় প্রসব শুরু করা 
  • জ্বর আসা বা শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া 
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া 
  • খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া 
  • মাঝে মাঝে বমি হওয়া 

প্রস্রাবের ইনফেকশনের ( ইউরিন ইনফেকশন) কারণ

ইউরিন ইনফেকশন বা প্রসাবের ইনফেকশন এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যে কারণগুলো সরাসরি প্রস্রাবের ইনফেকশনের জন্য দায়ী। সাধারণত পায়খানায় থাকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু মূত্র তন্ত্রের প্রবেশ করে এবং ইউরিন ইনফেকশন ঘটায়। প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে এই জীবাণুগুলো প্রবেশ করে থাকে। নারী-পুরুষ ভেদে সবার প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে। তবে নারীদের মধ্যে এই সংক্রমণ বেশি দেখা দেয়। এর কারণ হলো নারীদের মতো নারী-পুরুষদের মতো নারী তুলনায় দৈর্ঘ্য অনেক ছোট হয়। এছাড়াও নারীদের মতো নালী বায়ু পথের খুব কাছাকাছি থাকায় ব্যাকটেরিয়া বায়ু পথ থেকেও মূত্র নাড়িতে প্রবেশ করে প্রস্রাবে ইনফেকশনের সংক্রমণ ঘটায়।

যেসব কারণে ইউরিন ইনফেকশনের আশঙ্কা বেড়ে যায়—

  • যৌনাঙ্গ পরিষ্কার এবং শুকনা রাখলে 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে ইনফেকশন হয় 
  • কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয় 
  • মূত্র তন্ত্রের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করলে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়। 
  • এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত হলে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে। 
  • টাইপ টু ডায়াবেটিস অথবা কেমোথেরাপি দীর্ঘদিন ধরে স্টরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে। 
  • গর্ভকালীন সময় ও প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে 
  • মূত্রনালী থেকে পুরোপুর ি মূত্র বের হতে বাধা সৃষ্টি হলে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে। যেমন শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা স্নায়ুতন্ত্রের কোন অসুখ থাকলে পুরুষদের পোস্টেড গ্রন্থি বড় হলে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • প্রস্রাবের সময় ক্যাটার প্রস্রাবনালিতে পড়ানো থাকলে 
  • আগে থেকেই প্রস্রাবের ইনফেকশন থাকলে

প্রস্রাবের ইনফেকশন প্রতিরোধে করণীয় কী

ছবি

প্রিয় পাঠক এপর্যন্ত আমরা আলোচনা করলাম প্রস্রাবের ইনফেকশন কি প্রস্রাবের ইনফেকশন এর লক্ষণ এবং প্রস্রাবের কারন গুলো সম্পর্কে। এই পর্বে জানব প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে বা এর ইনফেকশন প্রতিরোধে করণীয় কি রয়েছে সেই বিষয়ে। প্রস্রাবের ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে প্রস্রাবের ইনফেকশনের প্রবণতা অনেক কম হয়। যেমন-

  • যৌনাঙ্গ শুকনো এবং সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে 
  • টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করার সময় প্রয়োজনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে। 
  • প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে। 
  • প্রস্রাব করার সময় খেয়াল রাখতে হবে মূত্রনালীতে যেন কোন মূত্র না থাকে। 
  • সহবাসের আগেও পরে যৌনাঙ্গ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। 
  • অন্তর বাসের সুতি কাপড় ব্যবহার করতে হবে। 
  • প্রস্রাবের চাপ আসলে অবশ্যই ধরে না রেখে প্রস্রাব করতে হবে। 
  • প্রস্রাব করার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না ।
  • ছোট বাচ্চাদের ডাইপার কাপড়ের ন্যাপি ব্যবহার করতে হবে এবং নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে।
  • যৌনাঙ্গতে কোন ধরনের সাবান বা পাউডার বাসুবন্দী ব্যবহার করা যাবে না। 
  • টাইট পায়জামা পড়া যাবে না 
  • নাইলন ধরনের কাপড় পড়বেন না 
  • চিনি যুক্ত খাবার বা পানির খাওয়া যাবে না।
  • যেসব কনডম অথবা ডায়াফ্রামে শুক্রাণু ধ্বংস করার পিচ্ছিলকারক থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। এর পরিবর্তে ভিন্ন ধরনের কনডম ও লুব্রিকেন্ট কিংবা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

প্রস্রাবের ইনফেকশনের চিকিৎসা

প্রস্রাবের ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি ডাক্তার প্রস্রাব পরীক্ষা করার পর প্রয়োজন বোধে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক এর সম্পূর্ণ কোর্স কমপ্লিট করা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো কমেন্ট আসতে শুরু করলেও ডোজ পূরণ করতে হবে। সাধারণত ওষুধ খাওয়া শুরু করা দুই থেকে তিন দিনের মধ্য লক্ষণ গুলো কমে আসা শুরু করে কিন্তু যদি কমে যায় বলে ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করেন তাহলে পরে আবারো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

আমাদের শেষের কথা 

প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি আশা করি খুবই উপকারী হয়েছে। এবং আপনি অনেক কিছুই অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং স্বাস্থ্য টিপস নিয়মিত গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url